|
|
|
|
কড়া ব্যবস্থারই ইঙ্গিত |
প্রধানদের ‘তৃণমূল-ঘনিষ্ঠতা’ নিয়ে তদন্ত শুরু সিপিএমের |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
দলের পঞ্চায়েত প্রধানদের একাংশের সঙ্গে তৃণমূলের ‘ঘনিষ্ঠতা’ বাড়ছে বলে অভিযোগ উঠল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএমে। গত কয়েক মাস ধরেই বেশ কয়েক জন প্রধান দলীয় নেতাদের চেয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের ‘নির্দেশ মতো’ চলতেই বেশি পছন্দ করছেন বলে অভিযোগ এসেছে সিপিএম জেলা নেতৃত্বের কাছে। কয়েকটি নির্দিষ্ট অভিযোগ নিয়ে তদন্তও শুরু হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রধানদের দল থেকেই বহিষ্কারের চিন্তা-ভাবনাও শুরু হয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। জেলা নেতৃত্ব একমত হয়েছেন, দলের একাংশ প্রধান যে-ভাবে ‘তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ’ হয়ে পড়েছেন, তা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা যাবে না। ‘কড়া’ পদক্ষেপই নিতে হবে।
কয়েকজন প্রধানের কাজকর্ম নিয়ে অভিযোগ যে এসেছে, তা মেনে নিচ্ছেন জেলা সিপিএম নেতারা। জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের বক্তব্য, “কিছু অভিযোগ এসেছে। তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এ ক্ষেত্রে কী দল থেকে বহিষ্কার করার মতো সিদ্ধান্তও হতে পারে? জেলা সম্পাদকের জবাব, “অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রধানকে বহিষ্কার করা হবে। নীতি ও শৃঙ্খলাভঙ্গের প্রবণতাকে আমরা প্রশ্রয় দিই না।” আর কয়েক মাস পরেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে এক সঙ্গে বেশ কয়েকজন প্রধানকে বহিষ্কার করা সম্ভব নয় বলেও অবশ্য দলের একাংশ নেতা-কর্মী মনে করছেন। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এই প্রেক্ষিতে সিপিএমের জেলা-কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, “অভিযোগ এসেছে এমন কয়েকজন প্রধানকে এখন সতর্ক করা হয়েছে। এর পরেও যদি তাঁরা তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রেখে চলেন, তখন তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থাই নিতে হবে।” বিধানসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুর সিপিএমের ‘লালদুর্গ’ হিসাবেই চিহ্নিত ছিল। ২০০৮-এর সর্বশেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনে পাশের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ হাতছাড়া হয় বামেদের। তবে পশ্চিমে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা থাকে সিপিএমের হাতেই। জেলার ২৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ২৯টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের ৬২টি আসনের মধ্যে প্রায় পঁচানব্বই শতাংশই বামেদের, থুড়ি সিপিএমের নিয়ন্ত্রণেই আসে। কিন্তু বহু গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের কাজকর্ম নিয়েই অভিযোগ উঠতে শুরু করে ২০০৮-এর সেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের বছরখানেকের মধ্যেই। আর গত এক বছর ধরে প্রধানদের একাংশ রীতিমতো ‘অন্তর্ঘাত’ করে ‘তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ’ হয়ে উঠেছেন বলে সিপিএমের মধ্যেই অভিযোগ উঠেছে। দলীয় সূত্র জানাচ্ছে, অভিযোগ উঠলে আগেও প্রধানদের সতর্ক করা হয়েছে। তবে এখন অনেকে দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশ সরাসরিই অমান্য করছেন। দলের চেয়েও স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের ‘সুপারিশে’ই বিভিন্ন কাজকর্ম করছেন। এই সব প্রধানরা কোনও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়লে তার দায় কেন পার্টি নেবে, বিশেষত ভোটের মুখেসেই প্রশ্ন গুরুতর হয়ে দেখা দিয়েছে জেলা সিপিএমের অন্দরে। গত শুক্রবার দলের জেলা সম্পাদকের সঙ্গে জেলা পরিষদের সভাধিপতি-সহ অন্য কর্মাধ্যক্ষদের বৈঠকেও দলীয় প্রধানের একাংশের ‘তৃণমূল-ঘনিষ্ঠতা’র প্রসঙ্গ ওঠে।
কোন এলাকার কতজন প্রধান তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন, তার হিসেব কষতে গিয়ে জেলা সিপিএম নেতৃত্বের কিন্তু উদ্বেগ বেড়েছে। তাঁর দেখছেন, প্রায় ৬০ শতাংশ প্রধানের সঙ্গেই তৃণমূলের ‘সম্পর্ক’ গড়ে উঠেছে। এ নিয়ে অভিযুক্ত প্রধানদের কারও কারও আবার ব্যাখ্যা, ‘পরিস্থিতির চাপে’ই অনেককে এমন অবস্থান নিতে হয়েছে। ডেবরার ৩ জন, পিংলার ৪ জন, গোপীবল্লভপুর ১-এর ২ জন, গোপীবল্লভপুর ২-এর ৬ জন, মোহনপুরের ৫ জন, কেশিয়াড়ির ৫ জন, মেদিনীপুর সদরের ৬ জন, নয়াগ্রামের ৭ জন, সবংয়ের ৫ জন, নারায়ণগড়ের ৮ জন-সহ সবমিলিয়ে প্রায় ৭০ জন প্রধানকে ইতিমধ্যেই ‘সতর্ক’ করা হয়েছে। তাঁদের উপর দলীয় ‘নজরদারি’ও বাড়ানো হয়েছে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট প্রধানদের ‘ছুটি’ নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। দলের বেশ কয়েকজন প্রধানের কাজকর্ম নিয়ে অভিযোগ যে উঠেছে, তা মেনে নিয়েছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, “কয়েকটি এলাকা থেকে বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি দলের জেলা নেতৃত্বকেও জানিয়েছি। অভিযোগ নিয়ে তদন্তও শুরু হয়েছে।” এ কি তা হলে তৃণমূল-স্তরে সিপিএমের আর এক শুদ্ধিকরণ-অভিযান? |
|
|
|
|
|