দশ-এগারো বছর আগে তাঁর দস্যিপনায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন মা-বাবা। চেয়েছিলেন ঘরে না থেকে খেলাধুলোয় মেতে থাকুক তাঁদের ছোট মেয়ে। সেই মেয়েই আজ অলিম্পিকে উত্তর ভারতের ছোট শহর মেরঠের প্রতিনিধি। ভারত থেকে লন্ডন অলিম্পিকে একমাত্র জুডোকাগরিমা চৌধুরি।
জার্মানি ও ফ্রান্সে ট্রেনিং শেষ করে দেশে ফিরেছেন শনিবার। বর্তমানে পাতিয়ালার জাতীয় স্পোর্টস ইনস্টিটিউটে অনুশীলন করছেন কোচ জীবন শর্মা এবং দিব্যা শর্মার কাছে। ভারত থেকে এ বার কোনও ছেলে জুডোকা অলিম্পিকে নামার সুযোগ পাচ্ছেন না। বছর বাইশের তরুণী গরিমা আনন্দবাজারকে ই-মেল সাক্ষাৎকারে বললেন, “অলিম্পিকে সুযোগ পাওয়ার অনুভূতি অসাধারণ। এক জন খেলোয়াড়ের চূড়ান্ত স্বপ্ন তো এটাই।” ১১ বছর আগের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলছেন, “বাবা-মা আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। তবে বেশি করে বলব আমার মা-র কথা। তিনিই আমার প্রেরণা।” গরিমার মা সাতেশ চৌধুরি পেশায় বিউটিশিয়ান, বাবা রাজেন্দ্র সিংহের পরিবহনের ব্যবসা। |
লন্ডন অলিম্পিকে ভারতের একমাত্র মহিলা কুস্তিগীর গীতা ফোগাতের সঙ্গে গরিমার মিল এক জায়গায়। মেয়ে হয়েও তাঁদের অনেক সময়েই অনুশীলন করতে হয়েছে ছেলেদের সঙ্গে। উপযুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীর অভাবে। লন্ডনের এক্সেল কমপ্লেক্সে গরিমা নামবেন জুডোর ৬৩ কেজি বিভাগে। প্রথম থেকেই নক-আউট প্রতিযোগিতা বলে একটা ভুলেরও ক্ষমা নেই। গরিমা ভাল করেই জানেন সেটা। বলছিলেন, “প্রথম দশে আসতেই পারি। তবে আমার লক্ষ্য পদক। তার জন্য আমি দিনের বেশিরভাগ সময়টাই কাটাচ্ছি অনুশীলনে।”
অবসর সময়ে গান শুনতে এবং মারপিটের সিনেমা দেখতে ভালবাসেন সদ্য স্নাতক হওয়া গরিমা। ভারতে যেখানে ক্রিকেট ধর্মের মতো, সেখানে গরিমার ভাল লাগার খেলার মধ্যে কিন্তু ক্রিকেট নেই। “জুডো ছাড়া বক্সিং আমার খুব প্রিয়। এ ছাড়া টেনিস। যে সব খেলায় শারীরিক কসরত বেশি করতে হয় সেগুলোই বেশি ভাল লাগে।” পছন্দের ক্রীড়াবিদও দু’জনেই জুডোকা। দু’জনেই জাপানিইয়াসুহিরো ইয়ামাসিতা এবং রিয়োকো তামুরা। বছর দুই আগে ইয়ামাসিতার কাছে ট্রেনিংও নিয়েছেন গরিমা। সিঙ্গাপুরে ২০১০ কমনওয়েলথ জুডোয় রুপো জিতেছিলেন। তার পর দু’বছর এশীয় জুডোয় সপ্তম। এ বার পদক না পাওয়ার সেই যন্ত্রণা ভুলতে চান অলিম্পিকে।
গরিমা বলছেন, “অলিম্পিক থেকে ফিরে আইন নিয়ে পড়তে চাই।” তবে এই মুহূর্তে সে সব নিয়ে খুব বেশি ভাবছেন না। সম্পূর্ণ মনোনিবেশ শুধুই জুডোয়। |