টোলগে ওজবের ‘ইচ্ছে’-ই শেষ পর্যন্ত হয়তো পূর্ণ হতে চলেছে। তবে মুক্ত ফুটবলার হওয়ার জন্য তাঁর পকেটে টান পড়ছে। দিতে হচ্ছে পনেরো লাখ টাকারও বেশি জরিমানা।
সোমবার আইএফএ প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটির চমকপ্রদ সিদ্ধান্তের পর ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান দু’পক্ষই বুঝে উঠতে পারছে না, কাদের জয় হল বা লাভ হল।
প্রকাশ্যে অবশ্য লাল-হলুদ কর্তাদেরই বেশি খুশি দেখাচ্ছে। কারণ টোলগে তাঁদের সঙ্গে পরের মরসুমের জন্য চুক্তিবদ্ধ এই সত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ায়। শুধু তাই নয়, কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টোলগেকে মোহনবাগানে খেলতে হলে লাল-হলুদ কর্তাদের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতেই হবে। চাইতে হবে চিঠি দিয়ে ক্ষমাও। |
মোহনবাগান সিদ্ধান্ত জেনে ‘মর্মাহত’ হলেও দীর্ঘমেয়াদি লাভের কথা ভেবে স্বস্তিতে। টোলগে শেষ পর্যন্ত জট কাটিয়ে মাঠে নামার সুযোগ পাবেন এই আশায় জরিমানা দিয়ে সমস্যা মেটানোর রাস্তায় হাঁটার কথা ভাবছেন তাঁরা। কারণ ইতিমধ্যেই এক কোটি টাকা অগ্রিম দিয়ে চুক্তি করে রেখেছে মোহনবাগান। আই এফ এ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, “আমি দু’পক্ষকে অনুরোধ করেছি। যদি ওরা আমাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেয় ভাল। না হলে আমরা আর কিছু করব না।”
বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, ঝামেলা না মিটলে পুরো ব্যাপারটি ফেডারেশনে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা ভেবে রেখেছে রাজ্য ফুটবল সংস্থা। ফেডারেশন যদি ফিফায় পাঠায়, তা হলে আলাদা কথা।
দীর্ঘ দু’মাস পর আইএফএ যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে সবথেকে ‘ক্ষতি’ হচ্ছে অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকারেরই। চুক্তি নিয়ে ‘দ্বিচারিতা’ করায় মুক্ত ফুটবলার হতে ১৫ লাখ ২৮ হাজার, ৯৮২ টাকা ৭০ পয়সা খরচ করতে হবে টোলগেকে। এর মধ্যে চুক্তিভঙ্গ করার জন্য জরিমানা হিসাবে ইস্টবেঙ্গলকে দিতে হবে এক মাসের মাইনে-- ১০ লাখ ২৮ হাজার ৯৮২ টাকা ৭০ পয়সা। এছাড়াও টোকেন নিয়ম না মানার জন্য টোলগেকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে আই এফ এ-কে। শাস্তির খবর শুনে টোলগে বিরক্ত হলেও অখুশি নন। দুর্গাপুরে মোহনবাগান আবাসিক শিবিরে ফোনে ধরা হলে টোলগে বললেন, “আমি এখন কিছু বলব না। আমাকে দু’একদিন সময় দিন।” গভীর রাতে কলকাতায় ফিরে টোলগে মোহনবাগান কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করার জন্য। |
আই এফ এ কেন টোলগেকে জরিমানা করল? সভার পর আই এফ এ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, টোলগে চুক্তি করতে গিয়ে দুই ক্লাবের সঙ্গেই অন্যায় করেছেন। অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকারের অন্যায় কী? সচিবের ব্যাখ্যা
১) অগ্রিম নিয়ে ভাউচার সই করে ইস্টবেঙ্গলকে টোকেন দিয়েছেন টোলগে। ফলে ও আই এফ এ-র নিয়মে ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ।
২) মোহনবাগানের সঙ্গেও চুক্তি করেছেন টোলগে। অগ্রিম নিয়েছেন। কিন্তু টোকেন দেননি।
সচিব বললেন, “টোলগে যে ভাবে দু’ই ক্লাবেই চুক্তি করেছে তাতে ওকে সাসপেন্ড করে রাখা যেত। কিন্তু আমরা কারও পা থেকে ফুটবল কেড়ে নিতে চাই না।”
টোলগে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিতর্কের একটা সম্মানজনক সমাধান সূত্র বের হওয়ার পর কোনওপক্ষই তা ‘মানছি না’, ‘মানব না’-ও বলেননি। ইস্টবেঙ্গল কর্মসমিতির সভা ডাকছে সিদ্ধান্ত নিতে। তবে কবে সভা হবে তা ঠিক হয়নি। লাল-হলুদের প্রেসিডেন্ট ও ফুটবল সচিব শহরে নেই। ওঁরা ফিরলে সভা হবে সেটাই তারা জানিয়ে দিচ্ছে আই এফ এ-কে।
|
আই এফ এ-র চিঠি পাওয়ার পর খুশি ইস্টবেঙ্গলের প্রধান কর্তা দেবব্রত সরকার। বললেন, “টোলগে যে আমাদের ফুটবলার সেটা আই এফএ-র সিদ্ধান্তেই প্রমাণিত হয়েছে। যাঁরা আমাদের জোচ্চোর বলেছিল তাঁরা কী সেটা নিজেরাই এখন বলুক।” মোহনবাগান সচিব অঞ্জন মিত্র বললেন, “আই এফ এ-র সিদ্ধান্তে আমরা মর্মাহত, হতবাক। তবে টোলগে তো খেলতে পারবে। এটা নিয়ে আমরা ফিফায় যেতে পারতাম। কিন্তু মরসুম শুরু হয়ে যাচ্ছে। ও সব করতে গেলে ছয় মাস কেটে যাবে। টোলগের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।” আসলে দুই প্রধানের উপরই ‘চাপ’ রয়েছে। দু’পক্ষই চাইছিল সম্মানজনক সমাধান সূত্র। ৩১ অগস্ট পেরিয়ে গেলে প্রথম দফায় বিদেশি সই করাতে পারবে না কোনও ক্লাব। টোলগে নিয়ে সিদ্ধান্ত ঝুলে থাকলে এশীয় কোটায় চতুর্থ বিদেশি নিতে পারবে না ইস্টবেঙ্গল। আবার মোহনবাগান টোলগেকে সই করাতে না পারলে তাদের দেড় কোটি টাকা জলে যাবে। এ বার তারা কী করে, সেটাই দেখার। |