গভীর রাতে ‘লুকিয়ে’ ঘরে ফিরেছিলেন গ্রামছাড়া এক সিপিএম নেতা। টের পেয়ে ঘর থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে বাঁশপেটা করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। মারের চোটে পাঁজরের হাড় ভেঙেছে ওই সিপিএম নেতার। ভেঙে দেওয়া হয়েছে হাত-পা। জখম ওই নেতার নাম মুক্তরাম মাজি। রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে খানাকুলের কিশোরপুর-২ পঞ্চায়েতের ঘাসুয়া গ্রামে।
লিখিত অভিযোগ না হওয়ায় সোমবার রাত পর্যন্ত সে ভাবে তদন্ত শুরু করেনি পুলিশ। এসডিপিও (আরামবাগ) শিবপ্রসাদ পাত্র বলেন, “পুলিশ আহতের সঙ্গে কথা বলেছে। ওই পরিবারটিকে বলা হয়েছে, লিখিত অভিযোগ করতে।”
তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। খানাকুলের তৃণমূল বিধায়ক ইকবাল আহমেদ অবশ্য বলেন, “ঠিক কি ঘটেছে, খোঁজ নিচ্ছি। ঘটনার সঙ্গে যারাই যুক্ত থাক, পুলিশকে নিরপেক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।” |
মুক্তরামবাবু সিপিএমের কৃষক সভার নেতা তথা দলের স্থানীয় অঞ্চল কমিটির সদস্য। মাঝি পরিবারের অভিযোগ, গত বিধানসভা ভোটের পর থেকেই তিনি ‘তৃণমূলের সন্ত্রাসে’ বাড়িছাড়া। তাঁর স্ত্রী শিখাদেবীর অভিযোগ, “মাঝে মধ্যে লুকিয়ে গভীর রাতে বাড়ি ফিরতেন স্বামী। ভোরের আলো ফোটার আগেই বেরিয়ে যেতেন।” শিখাদেবী জানান, রবিবার রাত দেড়টা নাগাদ মুক্তরামবাবু বাড়িতে ঢোকেন। মিনিট কুড়ি যেতে না যেতেই তৃণমূলের শ’খানেক লোক চড়াও হয়। তারা মুক্তরামবাবুকে তুলে নিয়ে যায়। বাধা দিতে গেলে শিখাদেবীকে মারধর করা হয়।
তিনি বলেন, “এক দল আমাদের আটকে রাখে। বাকিরা স্বামীকে তুলে নিয়ে যায়।” অভিযোগ, মুক্তরামবাবুকে বেধড়ক মারধর করে মাঠে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। ভোরে পুলিশ অচেতন অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে খানাকুল গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয় আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মুক্তরামবাবুর আঘাত গুরুতর। পাঁজরের অনেকগুলি হাড় ভেঙেছে। দু’টি পা এবং হাতও ভেঙেছে।
আহত নেতার ছেলে হারাধন বলেন, “বাবার চিকিৎসায় ব্যস্ত থাকায় পুলিশে লিখিত অভিযোগ করার সময় পাইনি।” হারাধনের দাবি, “বাবা ঘরে ফেরার জন্য কয়েক জন তৃণমূল নেতাকে অনুরোধ করেছিলেন। ওরা এ জন্য এক লক্ষ টাকা চেয়েছিল জরিমানা হিসেবে। কাজে না গেলে আমাদের খাবার জোটে না। অত টাকা কোথায় পাব? টাকা দিতে না পারায় ওরা খেপে ছিল।” সিপিএমের খানাকুল জোনাল কমিটির সদস্য তথা ওই পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা ভজহরি ভুঁইঞা (তিনিও ঘরছাড়া) বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূল নতুন করে সন্ত্রাস তৈরি করছে। যারা ঘরে আছেন, তাঁদেরও ঘরছাড়া করতে চাইছে।”
তৃণমূলের কিশোরপুর-২ অঞ্চল সভাপতি অসিত গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, “মুক্তরাম দুষ্কৃতী ছিল। অনেক অপরাধ করেছে। গ্রামের লোক তাঁকে ধরার জন্য তক্কে তক্কে ছিলেন। মারধরের ঘটনায় তৃণমূলের কোনও ভূমিকা নেই।” অন্য এক তৃণমূল নেতা দীপেন মাইতির বক্তব্য, “মুক্তরাম চার জন বহিরাগতকে নিয়ে বোমা ফাটাতে ফাটাতে গ্রামে ঢুকছিল। গ্রামবাসীরা তাকে ধরে ফেলে। বাকিরা পালায়। তার ব্যাগ থেকে দু’টি তাজা বোমা এবং চার রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে। গ্রামবাসীরাই ওকে পিটিয়েছেন। উদ্ধার হওয়া গুলি-বোমা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া গুলি-বোমা কার সে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ। |