শুধু ব্যারাকপুর নয়, পুলিশ কমিশনারেট হওয়ার পরে হাওড়াতেও বেড়েছে অপরাধ। অন্তত হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য সেই কথাই বলছে।
অপরাধ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণের জন্য ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে হাওড়ায় তৈরি হয় পুলিশ কমিশনারেট। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তার পর থেকে গত ৯ মাসে হাওড়ায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণ তো হয়ইনি, বরং বেড়ে গিয়েছে। পুলিশের ওয়েবসাইটের তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত যেখানে বছরে অপরাধের সংখ্যা গড়ে চার হাজারও পেরোয়নি, সেখানে শুধু ২০১১ সালেই অপরাধের ঘটনা ঘটেছে ৫১৬৬টি। চলতি বছরের জুনের মধ্যেই এই সংখ্যা হয়েছে ৩১০৮। এর মধ্যে মহিলাদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধের সংখ্যা ছাপিয়ে গিয়েছে পুরনো রের্কডকে। আবার কমিশনারেটের অর্ন্তগত আটটি থানা এলাকায়, অর্থাৎ বালি, লিলুয়া, হাওড়া, মালিপাঁচঘরা, গোলাবাড়ি, হাওড়া, শিবপুর ও জগাছায় খুন-ডাকাতি, ধর্ষণ ও চুরির ঘটনা বেড়েছে অস্বাভাবিক ভাবে।
ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, সব চেয়ে বেশি বেড়েছে মহিলাদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধের সংখ্যা। ২০১১ সালে এই অপরাধ সংক্রান্ত মামলা দায়ের হয়েছিল ৬১৪টি। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত এই অপরাধ সংক্রান্ত মামলা দায়ের হয়েছে ৫২১টি। অথচ, কমিশনারেট হওয়ার আগে ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত মহিলাদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধের গড় সংখ্যা বছরে ৩০০ ছাড়ায়নি।
কী ধরনের অপরাধ হচ্ছে মহিলাদের বিরুদ্ধে? হাওড়া সিটি পুলিশ জানায়, শহরের আটটি থানা, অর্থাৎ হাওড়া, শিবপুর, ব্যাঁটরা, গোলাবাড়ি, মালিপাঁচঘরা, বালি, লিলুয়া ও জগাছায় পণ-সহ অন্যান্য দাবিতে বধূ-নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা গত চার বছরের তুলনায় বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ওয়েবসাইটের তথ্য বলেছে, বেড়েছে নারী-পাচার, বিক্রি ও ধর্ষণের মতো অপরাধের সংখ্যাও। ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ধর্ষণের অভিযোগ সর্বাধিক ১৮টি। অথচ, গত বছরে শহরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২৪টি, গত ছ’মাসেই ১১টি।
এ ছাড়াও গত দু’বছরে শহরে মাত্রাতিরিক্ত ভাবে খুন, ডাকাতি, লুঠপাট, ছিনতাই ও চুরির ঘটনা বেড়ে গিয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছে পুলিশ। হাওড়া সিটি পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে খুনের ঘটনা ঘটে ৩৮টি। গত ৬ মাসে খুন হয়েছে ১৫টি। এর মধ্যে অধিকাংশেরই এখনও কিনারা সম্ভব হয়নি। গত বছর ডাকাতি ও লুঠপাটের ঘটনা ঘটেছে ৪২টি। কিন্তু গত ৬ মাসে ডাকাতি, লুঠপাট ও ছিনতাই হয়েছে ৩৮টি। এর মধ্যে বড় ডাকাতি হয়েছে ৩টি। যেমন, জুনে চ্যাটার্জিহাট তদন্তকেন্দ্র এলাকায় দিনদুপুরে এক কেটারিং মালিকের বাড়িতে প্রায় ৫ লক্ষ টাকার ডাকাতি হয়। পুলিশ আজও এর কিনারা করতে পারেনি। ২০১১ সালে হওয়া চুরির সংখ্যাও ছাপিয়ে গিয়েছে আগের চার বছরের রের্কডকে। ওই বছর চুরি হয়েছে ১১১৮টি। গত ৬ মাসেই এই সংখ্যা পৌঁছেছে ৫৩০-এ।
কিন্তু হাওড়া শহরে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন? এক পুলিশকর্তা বললেন, “কমিশনারেট হলেও যে পরিমাণ আধুনিক পরিকাঠামোর প্রয়োজন তা এখনও হাওড়ায় নেই। পাশাপাশি পুলিশের সংখ্যা, গাড়ির সংখ্যা না বাড়ালে হাওড়ার মতো অপরাধপ্রবণ এলাকায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণ খুবই কঠিন।” |