মাথায় লাগা আঘাতেই মৃত্যু হয়েছিল গুড়িয়ার, এমনই তথ্য রয়েছে ময়না-তদন্ত রিপোর্টে। কিন্তু মাথায় আঘাত করেছিল কে, সোমবার গুড়াপের ‘দুলাল স্মৃতি সংসদ’ হোমে গিয়ে সে সম্পর্কে নানা পক্ষের নানা দাবি শুনলেন সিআইডি-কর্তারা। হোমের কর্মীদের জেরার পরে গোয়েন্দাদের দাবি, সেখানে আবাসিকদের যৌন নির্যাতনও করা হত। হোমের অফিস থেকে তল্লাশিতে এ দিন কিছু ওষুধ মিলেছে। তার মধ্যে যৌন উত্তেজনাবর্ধক কিছু ওষুধ রয়েছে বলেও অনুমান সিআইডি-র। ওষুধগুলি সম্পর্কে বিশদে জানতে ফরেন্সিক পরীক্ষা করানো হবে।
গত ১১ জুলাই ওই হোমের পাঁচিলের পাশে একটি পুকুরের ধারের মাটি খুঁড়ে মানসিক ভারসাম্যহীন আবাসিক গুড়িয়ার পচাগলা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
সিআইডি-র (এডিজি-১) সি ভি মুরলীধরন, ডিআইজি বিনীত গোয়েল এবং দফতরের কয়েক জন আধিকারিক এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ ওই হোমে যান। যান দোতলার ২৩ নম্বর ঘরে, যেখানে থাকতেন গুড়িয়া। হোমে আনা হয় সেখানকার সম্পাদক, ধৃত উদয়চাঁদ কুমার এবং তাঁর ‘ডান হাত’ শ্যামল ঘোষকে। ছিলেন হোমের সুপার বুলবুল চৌধুরী, চিকিৎসক কাঞ্চন মণ্ডল, দারোয়ান মথুর পাত্র এবং বেশির ভাগ কর্মী। হোমের বারান্দায় উদয়চাঁদ, শ্যামল এবং কর্মীদের গুড়িয়ার মৃত্যু নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। সিআইডি সূত্রের দাবি, সেখানেই গোয়েন্দা-কর্তাদের কাছে শ্যামল দাবি করে, ‘বড়দা’ই (উদয়চাঁদকে এ নামেই ডাকেন হোমের সকলে) লাঠি দিয়ে মাথায় মেরে গুড়িয়াকে হত্যা করেন। তখন দেহটি তাঁর ঘরে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেওয়া হয়। এ কথা শুনেই প্রতিবাদ করে উদয়চাঁদ দাবি করেন, গুড়িয়াকে তিনি মারেননি। গুড়িয়া খাট থেকে পড়ে মারা গিয়েছে। যদিও গ্রেফতারের সময়ে উদয়চাঁদ দাবি করেছিলেন, গুড়িয়া জানলা থেকে পড়ে মারা যান। এ দিকে, আলাদা জেরায় সিআইডি-কর্তাদের কাছে হোমের এক কর্মী শ্যামলের বিরুদ্ধেই গুড়িয়াকে লাঠি দিয়ে মারার অভিযোগ তোলেন। তবে যে লাঠি দিয়ে গুড়িয়াকে মারা হয়েছে বলে বিভিন্ন পক্ষ দাবি করেছে, তার হদিস সিআইডি এ দিন পায়নি। মৃত্যুর দিন গুড়িয়া যে রাতপোশাক পরে ছিলেন বলে সিআইডি-র অনুমান, সন্ধান মেলেনি সেটিরও। সিআইডি-র (এডিজি-১) সি ভি মুরলীধরন এ দিন বলেন, “গুড়িয়ার ময়না-তদন্তের রিপোর্ট আমাদের কাছে এসেছে। আমি নিজে এখনও সেটা দেখিনি। এখানে আবাসিকদের উপরে যৌন নির্যাতন হত। এখানকার বেশ কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে আমরা এ দিন কথা বলেছি।”
গুড়িয়ার ময়না-তদন্তের রিপোর্টে কী রয়েছে, সিআইডি সে ব্যাপারে কিছু না জানালেও, এনআরএস হাসপাতালের ফরেন্সিক বিভাগের (এখানেই গুড়িয়ার ময়না-তদন্ত হয়েছে) চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গুড়িয়ার দেহে কিছু আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেলেও মূলত মাথার আঘাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। যে হেতু দেহ মাটিতে কিছু দিন পোঁতা ছিল এবং তা পচে-গলে গিয়েছিল, সেই কারণে নিয়মমতো ভিসেরা, রক্ত, চুল, যোনিরস এবং শরীরে লেগে থাকা মাটি বেলগাছিয়ায় ফরেন্সিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসকদের ক্ষোভ, যে জায়গায় পড়ে গুড়িয়ার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, সেই জায়গা সম্পর্কে বিশদে তথ্য চেয়ে আবেদন করা হলেও পুলিশ এখনও ‘যথাযথ’ তথ্য দেয়নি। হুগলির ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার অমিতাভ বর্মা এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। |