মানেসরের মারুতি কারখানায় গোলমালের পিছনে মাওবাদীদের হাত রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে নির্দেশ দিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
মানেসরের ওই কারখানার শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি কোনও ট্রেড ইউনিয়নের সংযোগ নেই। এই পরিস্থিতিতে ওই কারখানার শ্রমিকদের উপর মাওবাদীদের প্রভাব ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে চাইছে কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, “হরিয়ানা পুলিশের থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। কারখানার ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পুরনো ইতিহাসও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। আমাদের কাছে রিপোর্ট রয়েছে, ওই এলাকায় অন্তত তিনটি ট্রেড ইউনিয়ন আসলে সিপিআই (মাওবাদী)-র প্রকাশ্য সংগঠন অথবা তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল।”
মারুতি সুজুকির কারখানায় হামলার পরিপ্রেক্ষিতে গাড়ি নির্মাতা সংস্থাগুলি একসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী দফতর ও হরিয়ানা সরকারের কাছে দরবার করবে বলে ঠিক করেছে। এই ধরনের ঘটনার জেরে দেশে বিনিয়োগ আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে বলেই মনে করছেন সিয়াম (সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স)। এ বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে চিঠি লেখা হবে। সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটি ২৫ জুলাই বৈঠকে বসবে। সেখানেই পরবর্তী পদক্ষেপ চূড়ান্ত হবে।
দিল্লি সংলগ্ন হরিয়ানার গুড়গাঁও শিল্পাঞ্চলে মাওবাদীদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা অবশ্য নতুন নয়। অনেক দিন ধরেই ওই সব এলাকায় মাওবাদীরা শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে। এ বার মারুতি কারখানায় যে ভাবে হিংস্র হামলা হয়েছে, তা শুধুমাত্র শ্রমিক অসন্তোষের ফল বলে মনে করছে না কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, শ্রমিকদের মনে পুলিশের ভয় রয়েছে। তাই বিক্ষোভ-ধর্মঘটের মাধ্যমে দাবিদাওয়া আদায়ের চেষ্টা করলেও সহজে কেউই অপরাধমূলক কাজকর্মে জড়িয়ে পড়তে চায় না। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে দেখা যাচ্ছে, দিল্লির আশেপাশে গুড়গাঁও, নয়ডা ও গাজিয়াবাদের মতো শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকরা বারেবারেই হিংসায় জড়িয়ে পড়ছেন। হন্ডা, রিকো অটো ও নিপ্পনের মতো কারখানাতে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। মারুতির কারখানাতেও যে ভাবে এক জন ম্যানেজারকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে এবং অন্য কর্তাদের উপরেও হামলা হয়েছে, তাতে গোটা ঘটনাটাই পূর্ব পরিকল্পিত বলে মনে করা হচ্ছে। হামলাকারীরা কারখানায় ঢোকার আগে সমস্ত সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট করে দিয়েছিল। শ্রমিকরা হঠাৎ ক্ষোভে ফেটে পড়ে হামলা চালালে এই ভাবে প্রমাণ লোপের চেষ্টা হত না।
এই পরিস্থিতিতে আজ মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়ার ম্যানেজিং ডিরেক্টর শিনজো নাকানিশি ও সংস্থার অন্য কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিংহ হুডা। নিরাপত্তার বিষয়ে মারুতি-কর্তাদের আশ্বস্ত করার পাশাপাশি তাঁরা যাতে হরিয়ানা থেকে কারখানা সরিয়ে নিয়ে না যান, সেটাও নিশ্চিত করতে চাইছেন হুডা। বৈঠক শেষে হুডা জানিয়েছেন, মারুতি কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁরা গুড়গাঁও ছেড়ে যাবেন না। হুডার স্নায়ুর চাপ বাড়িয়েছেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি ইতিমধ্যে মারুতি সুজুকিকে তাঁর রাজ্যে কারখানা নিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। ফলে হুডাকে বাড়তি সতর্কতা নিতেই হচ্ছে। এরই মধ্যে আজ ওই কারখানার আশেপাশের সমস্ত গ্রামের প্রধানদের নিয়ে মহাপঞ্চায়েত বসে। মহাপঞ্চায়েতের তরফেও কারখানা না সরানোর আবেদন জানানো হয়েছে।
মানেসরের কারখানায় হামলায় জড়িত থাকার অপরাধে ৯৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সরকারি ভাবে রাজ্য পুলিশের কর্তারা জানান, মাওবাদীদের জড়িত থাকার নিয়ে এখনও কোনও প্রমাণ তাঁদের কাছে নেই। তবে সব দিকই তাঁরা খতিয়ে দেখছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, এর আগে তামিলনাড়ুতেও মাওবাদীরা শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করেছিল। বণিকসভার তরফেও সরকারের কাছে এই অভিযোগ জানানো হয়েছিল। বাম শ্রমিক সংগঠনগুলি মাওবাদীদের জড়িত থাকার তত্ত্ব মানতে রাজি নয়। তাঁদের যুক্তি, আসলে সংস্থার তরফেই ভাড়াটে গুন্ডা লাগিয়ে হামলা চালানো হয়। যাতে কারখানা লক আউট করা যায়। কারণ গাড়ির বাজারে মন্দা চলছে। এখন কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকলে সংস্থার লাভ। হামলার ফলে কারখানার শ্রমিকদের সংগঠনটিকেও বেআইনি ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। |