পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের রেখা কালিন্দি, আফসানা খাতুন, সুনীতা মাহাতোরা লড়েছিলেন নাবালিকা বিবাহের বিরুদ্ধে। আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার।
আয়লার ভয়াবহ তাণ্ডব নাড়িয়ে দিয়েছিল কলকাতার পাঁচ বছরের মেয়ে সর্জনাকে। রেলের কামরায়, স্টেশনে নাচ-গান করে সে টাকা তুলেছিল দুর্গতদের সাহায্য করতে।
১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে নিজের প্রাণ বিপন্ন করে ১৫০ জন সেনার প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন অতুল হালদার। শৌর্যচক্র পেয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু পক্ষাঘাতে পঙ্গু হয়ে পড়লে সবাই ছেড়ে চলে যায়। বিছানায় শয্যাশায়ী অতুলবাবুর চিকিৎসার খরচ চালানোর টাকাও ছিল না।
রেখা, আফসানা, অতুলবাবুদের লড়াই এবং বিপন্নতার সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ভবনের মেলবন্ধন গত পাঁচ বছর ধরে ঘটিয়েছেন এক বাঙালি অফিসার। বিদায়ী রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলের মিডিয়া উপদেষ্টা অর্চনা দত্ত। যিনি বলছেন, “দেশের বিভিন্ন প্রান্তের এই বিপন্ন, লড়াকু প্রান্তিক মানুষগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করানোর চেষ্টা করেছি রাষ্ট্রপতির। শুধুমাত্র তাঁর বক্তৃতা তৈরি করা বা সংবাদমাধ্যমের জন্য ‘ব্রিফ’ বানানোই নয়, বেশি গুরুত্ব দিয়েছি এগুলিতেই।” অর্চনাদেবীর কথায়, “এই সব মানুষ যদি রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে একটি ফোন পান বা আমন্ত্রণ পান, তা হলে তাঁদের গোটা জীবনটাই বদলে যায়। সমস্যার সমাধানে রাজ্য বা কেন্দ্রও এগিয়ে আসে অনেক দ্রুত।” আফসানা খাতুনরা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পেরেছেন, অতুলবাবু পেয়েছেন তাঁর চিকিৎসার জন্য সাহায্য। ছোট্ট সর্জনা তার সংগ্রহ করা অর্থ তুলে দিয়েছে রাষ্ট্রপতির হাতে। বিনিময়ে পেয়েছে অনেক সাহস আর ভবিষ্যতে এমন আরও কাজ করার উদ্যম।
নিজে যেহেতু বঙ্গসন্তান, তাই দেশের অন্যান্য প্রান্তের পাশাপাশি অর্চনাদেবী সমান নজর দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্ত এলাকাগুলির উপরেও। তাঁর ধারণা, নতুন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় দায়িত্ব নেওয়ার পরেও এই ‘সমাজসেবার’ ধারাটি অব্যাহতই থাকবে।
বর্ধমানের অপর্ণা ঘোষের উদাহরণ দিয়েই অর্চনাদেবী বোঝালেন, কী ভাবে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ একটি পরিবারকে উদ্ধার করেছে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে। বর্ধমানের একটি পুজোয় প্রথামাফিক কামান দাগার সময় দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত হন অপর্ণার স্বামী। কোলের শিশুকে নিয়ে পথে দাঁড়াতে হয় তাঁকে। খবর পেয়ে অর্চনাদেবী তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কথা বলেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে। পরে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপেই বর্ধমান জেলাতে একটি সরকারি চাকরি পেয়ে যান অপর্ণা। অর্চনাদেবী জানালেন, “হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন অপর্ণা। ভাল করে মানুষ করতে পারছেন তাঁর ছেলেকেও।” |