পাহাড়, জঙ্গল, চা বাগান, নদীকে ঘিরে তরাই-ডুয়ার্সের পর্যটনকে নতুনভাবে ঢেলে সাজার জন্য উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সফরে এসে সেই কথা বারবারই জানিয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে উত্তরবঙ্গের পর্যটনের সমস্যা-সম্ভাবনার পাশাপাশি বিভিন্ন চলতে থাকা প্রকল্পের কাজ সরেজমিনে দেখতে আসছেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী রচপাল সিংহ। আজ, মঙ্গলবার দুপুরে মন্ত্রী শিলিগুড়ি আসছেন। তার পরে সোজা ডুয়ার্সে যাবেন। রাজ্য পর্যটন দফতর ইতিমধ্যে রাজ্যের সেরা গন্তব্যের তালিকায় কলকাতার পর ডুয়াসর্কে দ্বিতীয় স্থানে রেখে কাজ শুরু করেছে। ইন্টারনেটে ‘বিউটিফুল বেঙ্গল’ স্লোগানকে সামনে রেখে সেই প্রচারও শুরু হয়েছে। পর্যটন মন্ত্রী বলেন, “ডুয়ার্সে একটি এবং শিলিগুড়িতে একটি বৈঠক রয়েছে। পর্যটনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হবে। রাজ্য সরকারের মনোভাব, পরিকল্পনা, চিন্তাভাবনার কথা বৈঠকগুলিতে তুলে ধরব। ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গের পর্যটন প্রসারের লক্ষ্যে অনেক কিছুই ঘোষণা করেছেন। সেই কাজগুলি এবার দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে।” উল্লেখ্য, রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এটাই পর্যটনমন্ত্রীর এটাই প্রথম উত্তরবঙ্গ সফর। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ‘রোডম্যাপ টু সাসটেনেবল ট্যুরিজম’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভা হবে ডুয়ার্সের লাটাগুড়ির প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে। সেখানে জয়ন্তী, গরুমারা, ময়নাগুড়ি, জলদাপাড়া-সহ গোটা ডুয়ার্সের পর্যটনের সঙ্গে জড়িত সংগঠনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বৈঠকে গোটা ডুয়ার্সের পর্যটন শিল্পের বর্তমান অবস্থা বিভিন্ন সংগঠনের তরফে পর্যটনমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরা হবে। তার পরে সরকারি প্রশিক্ষণ, ঋণ, চা পর্যটন, হোম ট্যুরিজম, বন দফতরের সঙ্গে পর্যটন দফতরের সমন্বয় বাড়ানোর দাবিগুলিই মূলত তুলে ধরা হবে। লাটাগুড়ি রিসর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কমল ভৌমিক বলেন, “শুধু লাটাগুড়ি নয়, গোটা ডুয়ার্সের পর্যটনের অবস্থা, সমস্যা, সরকারি সাহায্যের কথা মন্ত্রীর সামনে তুলে ধরা হবে। বহু মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ডুয়ার্সে এই শিল্পের উপর নির্ভরশীল। আমরা খুবই আশাবাদী, সরকার আমাদের সব রকম সাহায্য করবে।” রাজ্য পর্যটন দফতরের এক আধিকারিক জানান, প্রায় ৩ হাজার ৪০০ স্কোয়ার মাইল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ডুয়ার্স প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। চা বাগান, জঙ্গল, বহু নদী রয়েছে এই এলাকায়। রয়েছে ন্যাশনাল পার্ক, অভয়ারণ্য। কিন্তু এতদিন সরকারি কিছু প্রচেষ্টা ছাড়া বিক্ষিপ্তভাবে পর্যটনশিল্প জুড়ে গড়ে উঠেছে। লাটাগুড়ি, চালসার মত এলাকায় বর্তমানে রিসর্টের ভিড়। অনেক ক্ষেত্রে আইন না মেনেই কাজকর্ম হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি, বন দফতরের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ডুয়ার্সে। এতে প্রতিবছর ডুয়ার্সে আসা কয়েকলক্ষ দেশি বিদেশি পর্যটকদের কাছে নানা কারণে ভুলবার্তা পৌঁছায়। তা দূর করতে একটি সামগ্রিক মাস্টার প্ল্যান উত্তরবঙ্গের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। আজ, মঙ্গলবারের বৈঠকের পর বুধবার দিনভর মূর্তি, জলদাপাড়া, চিলাপাতা, গজলডোবায় চলতে থাকা পর্যটন প্রকল্পগুলির কাজ ঘুরে দেখবেন। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির দুই মাইল এলাকার একটি হোটেলে বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে পাহাড় ও সমতলের পর্যটন ব্যবসায়ী, পরিবহণ ব্যবসায়ী, হোটেল ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলি থাকবে। রাজ্য পর্যটন দফতরের ডেপুটি ডাইরেক্টর (উত্তরবঙ্গ) সুনীল অগ্রবাল বলেন, “ডুয়ার্সের পর শিলিগুড়িতে পর্যটনের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক হবে।” |