পশ্চিমবঙ্গ থেকে লিয়েন্ডার পেজ, ভরত ছেত্রী, জয়দীপ কর্মকার, রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়েরা লন্ডন অলিম্পিকে তো যাচ্ছেনই। সেই সঙ্গে এ বার অলিম্পিকে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করবে তুলাইপাঞ্জি আর গোবিন্দভোগও। ১ এবং ২ অগস্ট অলিম্পিক ভিলেজের হেঁশেল সুরভিত করবে বাংলার এই দু’ধরনের সুগন্ধি চালের ভাত।
রীতিমতো সরকারি উদ্যোগেই তুলাইপাঞ্জি আর গোবিন্দভোগের এই বিলেত-সফর। বিদেশের দরবারে এ রাজ্যের চালের সৌরভ তুলে ধরতেই এই উদ্যোগ বলে সোমবার মহাকরণে জানান কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়। কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রকের অধীন ‘এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড প্রসেসড ফুড প্রোডাক্ট এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ বা অ্যাপেডা-র মাধ্যমে ওই চাল পাঠানো হচ্ছে লন্ডনে।
তুলাইপাঞ্জির ভাত এতই সুন্দর আর সুগন্ধি যে, ওই চালকে ‘দেশি বাসমতী’-ও বলা হয়। এই চাল হয় উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ, মোহিনীগঞ্জ ও তুফানগঞ্জ অঞ্চলে। গোবিন্দভোগ অবশ্য দক্ষিণবঙ্গের চাল। আগে মূলত বর্ধমান, হুগলি, নদিয়া ও বীরভূমে গোবিন্দভোগের চাষ হত। তবে এখন বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো শুখা জেলাতেও ওই সুগন্ধি চাল উৎপাদন হচ্ছে। চুঁচুড়া ধান গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী বিজন অধিকারী বলেন, “এই দু’জাতের ধানের চরিত্র এবং গুণাগুণ নির্ণয় করা হয়েছে। এখন কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা এই দুই চালের ফলন আর গুণমান বাড়ানোর কাজ চালাচ্ছেন।” |
বিলেত-সফরে বাংলার সুগন্ধি চাল। —নিজস্ব চিত্র |
দেশের নানান ফসল বিদেশে জনপ্রিয় করা এবং সেখানকার বাজারে সেগুলো বিক্রির ব্যাপারে সাহায্য করে থাকে অ্যাপেডা। ওই সংস্থা এ বার ভারতের অন্যান্য কৃষিপণ্যের সঙ্গে বাংলার ওই দু’ধরনের সুগন্ধি চাল বিদেশের বাজারে রফতানির একটা সুযোগ তৈরি করে দিল। লন্ডন অলিম্পিকের পাকশালা থেকে ছড়িয়ে পড়া সৌরভই সেই বাজার তৈরি করে দেবে বলে সরকারের আশা। লিয়েন্ডার-জয়দীপ-রাহুলেরা প্রতিযোগিতার ময়দানে কেমন ফসল তুললেন, সেই দিকে বাংলার যেমন নজর থাকবে, তেমনই বাংলার শস্য তুলাইপাঞ্জি-গোবিন্দভোগ বিশ্বক্রীড়ার আসরে কেমন সৌরভ ছড়াল, তার উপরেও থাকবে বাঙালির উৎসুক নজর।
অরূপবাবু জানান, লন্ডন অলিম্পিকে ভারত থেকে মোট ৫০ কিলোগ্রাম চাল যাচ্ছে। তার মধ্যে ১০ কিলোগ্রাম করে তুলাইপাঞ্জি আর গোবিন্দভোগ। শুধু বিদেশের মনোহরণেই থামছে না সরকার। ভবিষ্যতে মহাকরণেও তুলাইপাঞ্জি ও অন্যান্য সুগন্ধি চাল এবং নানা ধরনের মরসুমি ফল বিক্রির স্টল খোলার জন্য তাঁর দফতর চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী। কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালেও ২০০০ বর্গফুট এলাকায় দোকান খুলে রাজ্যের নানা ধরনের চাল ও অন্যান্য কৃষিপণ্য বিপণনের ব্যবস্থা হবে। |