কোনও ব্লকে দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী কর্মীর পদ খালি পড়ে আছে, কোথাও আবার প্রযুক্তি সহায়ক নেই। এমনই হাল বীরভূম জেলা কৃষি দফতরের। জেলার যে ব্লকে কর্মী বা কৃষি আধিকারিক আছে সেই ব্লক থেকে তাঁদের এনে জোড়াতালি কোনও ভাবে কাজ চলছে। এই অবস্থায় বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প যেমন বাস্তবায়িত হচ্ছে না তেমনি চাষিরাও তাঁদের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
কর্মী অভাবে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, সে কথা স্বীকার করে নিয়েছে জেলা কৃষি দফতর থেকে প্রশাসনিক কর্তারা। জেলা মুখ্য কৃষি আধিকারিক প্রদীপকুমার মণ্ডল বলেন, “কর্মী অভাবে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের যথার্থ মূল্যায়ন করতে সমস্যা হচ্ছে ঠিকই। তবু সমস্যা সমাধানে জেলা, মহকুমা ও ব্লকস্তর থেকে কর্মী নিয়ে তিন জনের একটি মনিটারিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি প্রতিটি ব্লকে গিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ কতদূর কী হয়েছে তা দেখাশোনা করবে। কর্মী অভাবের কথা প্রশাসনের সর্বস্তরে বলা হয়েছে।” জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েতে কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক পদে কর্মীর অভাব আছে। সেটা আমাদের নজরে আছে। এ ছাড়াও অন্যান্য পদে দীর্ঘদিন কোনও কর্মী নেই। ফলে কাজের ক্ষেত্রে যে সমস্যা হচ্ছে, সে দিকে নজর আছে।”
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯টি ব্লকের মধ্যে ১০টি ব্লকে কৃষি আধিকারিক নেই। ওই ব্লকগুলি হল মুরারই-১ ও মুরারই-২, নলহাটি-২, রামপুরহাট-১, ময়ূরেশ্বর-১, সিউড়ি-২, দুবরাজপুর, রাজনগর, সাঁইথিয়া, লাভপুর। প্রায় ১ বছর ধরে ওই সব ব্লকে কৃষি আধিকারিক নেই। যে সব ব্লকে আধিকারিকরা আছেন তাঁদের নিজের ব্লক ছাড়াও অন্য ব্লকের কাজ সামাল দিতে হচ্ছে। যেমন রামপুরহাট-২ ব্লক কৃষি আধিকারিককে মুরারই-১ ও মুরারই-২ ব্লকের দায়িত্বও সামাল দিতে হচ্ছে। হেডকোয়ার্টারের কর্মী দিয়ে রামপুরহাট-১ ও ময়ূরেশ্বর-১ ব্লকের কাজ সামাল দিতে হচ্ছে। সম্প্রতি নলহাটি-১ ব্লক কৃষি আধিকারিক অসুস্থ হয়ে পড়ায় নলহাটি-১ ও নলহাটি-২ ব্লকে আধিকারিক পদে কাজ সামাল দেওয়ার লোক নেই। অন্য দিকে, জেলার প্রতিটি পঞ্চায়েতে এক জন করে কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক থাকার কথা। আবার পঞ্চায়েতের মৌজা বড় বলে সেখানে দু’জন করে কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক থাকার কথা। তাও নেই।
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, জেলায় ২৩৭টি কৃষি প্রযুক্তি সহায়কের পদ আছে। বর্তমানে ৫০ শতাংশও কর্মী নেই। ব্লকের কৃষি দফতরে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীও নেই। এর ফলে বিভিন্ন প্রকল্পের যথার্থ মূল্যায়ন হচ্ছে না। গত ডিসেম্বর মাসে কৃষকদের কিষান ক্রেডিট কার্ড বিলির জন্য দেড়লক্ষ আবেদনপত্র জেলা কৃষি দফতরে দেওয়া হয়েছিল। ওই আবেদনপত্রগুলি যে সমস্ত চাষির এক একর জমি আছে তাদের মধ্যে বিলি করার কথা। আবেদনপত্র ওই সব কৃষকেরা পাওয়ার পরে সেগুলি পূরণ করে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কে জমা দেওয়া হবে। তার পরে কৃষকেরা ঋণ পাবেন এবং ওই সমস্ত কৃষকেরা শস্য বিমার আওতায় পড়বেন। মুরারই থানার জোগাই গ্রামের চাষি জগন্নাথ প্রামাণিক বলেন, “মুরারই ২ ব্লকে দীর্ঘদিন ধরে ব্লক কৃষি আধিকারিক নেই। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে যিনি আছেন তিনি আরও দু’টি ব্লকের দায়িত্বে রয়েছেন। এর ফলে তাঁর পক্ষে এলাকার কৃষকদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ভাববার সময় কোথায়?” ওই থানার বিলাসপুর গ্রামের চাষি মধু মাল, কলহপুর গ্রামের তরুণ রাজবংশীরা বলেন, “ব্লক কৃষি আধিকারিক না থাকায় আমরা চাষের কাজে পরামর্শ পাচ্ছি না। ব্লকে বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগসুবিধা নিয়ে আলোচনা করা যাচ্ছে না।”
জেলার মুখ্য কৃষি আধিকারিক প্রদীপকুমার মণ্ডল বলেন, “এখনও পর্যন্ত জেলাতে ১ লক্ষ ৪৮ হাজার কিষান ক্রেডিট কার্ডের আবেদনপত্র বিলি করা হয়েছে।” এর মধ্যে কত জন কৃষককে ব্যাঙ্ক ঋণের পাশাপাশি শস্য বিমার আওতায় আনা হয়েছে সে তথ্য অবশ্য জেলা মুখ্য কৃষি আধিকারিক সঠিক ভাবে জানাতে পারেননি। এ দিকে কর্মীর অভাবে তথ্য আদান-প্রদানে সময় লাগছে। সম্প্রতি জেলার ১৯টি ব্লকে একই প্রজাতির উচ্চ ফলনশীন ধান চাষের একটি প্রকল্প চলছে।
এই অবস্থায় চাষিদের পাশাপাশি প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত করতে গিয়ে বেশির ভাগ ব্লকে কৃষি আধিকারিক ও পঞ্চায়েত স্তরে কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক না থাকায় সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে কর্মীদেরও। |