হরচন্দ্র-প্রতাপচন্দ্রের বাড়ি বিপন্ন
ঐতিহ্য-লোপ
কটা পুরনো বাড়ির পরতে পরতে কত ইতিহাস সঞ্চিত হলে তাকে ‘ঐতিহ্যবাহী’ বলা যায়? কোনও মানদণ্ড নেই। তবু হরচন্দ্র-প্রতাপচন্দ্র ঘোষের স্মৃতিবাহী ২৭ বারাণসী ঘোষ স্ট্রিটের বাড়িটাকে ‘ঐতিহ্যবাহী’ বলতে দ্বিধা হওয়ার কথা নয়। পুরসভার তালিকায় এ বাড়ির পাথরের তোরণটি (বাঁ দিকের ছবি) প্রথম শ্রেণির হেরিটেজ স্থাপত্য হিসাবে চিহ্নিত। ডেভিড হেয়ার ও ডিরোজিয়ো-র প্রিয় ছাত্র, ইয়ং বেঙ্গলের অন্যতম হরচন্দ্র ঘোষ (১৮০৮-’৬৮) মুন্সেফ হিসাবে কর্মজীবন শুরু করে শেষে স্মল কজেস কোর্টের বিচারপতি হন। নন্দলাল সিংহের অকালমৃত্যুতে তিনি কালীপ্রসন্ন সিংহের অভিভাবক নিযুক্ত হন, তাঁর তত্ত্বাবধানে এই সম্পত্তির বিশেষ উন্নতি হয়েছিল। তাঁর জন্যেই কৃষ্ণদাস পাল ‘হিন্দু পেট্রিয়ট’-এর দায়িত্ব পান। বেথুন স্কুল প্রতিষ্ঠায় তাঁর ভূমিকা ছিল। হরচন্দ্রের বড় ছেলে প্রতাপচন্দ্র (১৮৪৫-১৯২১) ছিলেন এশিয়াটিক সোসাইটির সহ-গ্রন্থাগারিক, পরে রেজিস্ট্রার অব অ্যাসিওরেন্সেস।
প্রাচ্যবিদ প্রতাপচন্দ্র প্রতাপাদিত্যকে নিয়ে বঙ্গাধিপ পরাজয়-এর (১ম খণ্ড ১৮৬৯) লেখক হিসেবেই সর্বাধিক পরিচিত। বৌদ্ধ ধর্ম-দর্শনে আকৃষ্ট হওয়ার পর জোড়াসাঁকোর বাড়িটিকে তিনি নানা বৌদ্ধমূর্তি ও অন্যান্য প্রতীকে সজ্জিত করেন। তোরণের উপরের বুদ্ধমূর্তিটি আজ অপহৃত, অন্যগুলি ধ্বংসপ্রায় (ডান দিকের ছবি)। দোতলার দেওয়ালে গাঁথা গোলাকার মার্বেল ফলকে খোদিত ছিল হরচন্দ্রের প্রতিকৃতি। প্রতাপচন্দ্রের ভাই শরৎচন্দ্রের বংশের মীরা ঘোষ এই দোতলায় থাকতেন, তিনি অত্যন্ত বিরক্তির সঙ্গে জানিয়েছেন, এ সব এখন কিছুই নেই, বাড়ি বিক্রি হয়ে গিয়েছে, এবং বাড়ির কোনও অংশ ‘হেরিটেজ’ বলে তাঁর জানা নেই, ‘সব মিথ্যে কথা’। বাড়ির হেরিটেজ তোরণে ‘ওম কনস্ট্রাকশন’-এর পোস্টার ঘোষণা করছে, তারাই এখন এই সম্পত্তির মালিক। স্থানীয় কাউন্সিলার স্মিতা বক্সি কিছু জানেন না, ‘বেআইনি ভাবে বাড়ি ভাঙা হলে’ তবেই তিনি যা করবার করবেন। যদিও, কোনও হেরিটেজ স্থাপত্য ‘ভাঙা হলে’ আর কী করার থাকবে কে জানে। উত্তরসূরিরা নির্বিকার হতেই পারেন, আমরাও কি হাত গুটিয়ে থাকব?

শতবর্ষে ভাস্কর
আধুনিক ভারতীয় ভাস্কর্যের পথপ্রদর্শক তিনি। বাবার উৎসাহেই স্নাতক হওয়ার পর ভাস্কর্য নিয়ে লেখাপড়া। ভাস্কর প্রদোষ দাশগুপ্তের জন্ম ১৯১২-য় ঢাকায়। ১৯৩২-এ লখনউ আর্ট স্কুল এবং পরে মাদ্রাজ স্কুল অব আর্টে শিক্ষা। লন্ডন ও প্যারিস ঘুরে কলকাতায় ফিরে ১৯৪০-এ নিজের স্টুডিয়ো গড়ে তোলেন। ’৪৩-এ তৈরি করেন ক্যালকাটা গ্রুপ। ’৪৫-এ কলকাতায় প্রথম একক প্রদর্শনী। ১৯৫১-য় সরকারি আর্ট কলেজে অধ্যাপনা শুরু। লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি অব আর্টস-এর ফেলো হওয়ার পর ১৯৫৭-য় দিল্লির ন্যাশনাল গ্যালারি অব মডার্ন আর্ট-এর নির্দেশক হন। মাইস্কাল্পচার, ফলেনলিভ্স, টেম্পলটেরাকোটাঅববেঙ্গল, মডেলেরসন্ধানে ইত্যাদি বইয়ে শিল্পীর সঙ্গে তাঁর লেখকসত্তার পরিচয় আছে। শিল্পীর জন্মশতবর্ষে ললিতকলা আকাদেমির সহায়তায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে দেখা যাবে ওঁর ভাস্কর্যের একটি প্রদর্শনী (সঙ্গে তারই একটির ছবি), তত্ত্বাবধানে রিনা লাঠ। ২৫ জুলাই ৬ টায় শিল্পীর জীবন ও কাজ নিয়ে বলবেন সন্দীপ সরকার। প্রদর্শনী ২৬ জুলাই থেকে ১২ অগস্ট পর্যন্ত।

আইনজীবী
সাধারণ মানুষের স্বার্থে কী ভাবে আইন রক্ষাকবচ হয়ে দাঁড়াতে পারে, গীতানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের অর্ধশতকের পেশাগত আইনজীবী জীবন তার প্রমাণ। ৭৫ বছর বয়সেও সমান ঋজু সদাহাস্য মানুষটি মেধা, পেশাদারি ও সাংগঠনিক দক্ষতায় সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে সম্মান ও ভালবাসা আদায় করে নিয়েছেন। লিগাল এড সার্ভিস-এর প্রাণপুরুষ গীতানাথবাবু দীর্ঘ দিন ধরে আইনি লড়াই চালিয়ে বহু ‘নন ক্রিমিনাল লুনাটিক’-কে বন্দিজীবন থেকে মুক্তির স্বাদ দিয়েছেন। পুলিশ বা জেল হেপাজতে মৃত্যুর মামলা লড়েছেন বিনা পারিশ্রমিকে। দুঃস্থ ও অবলা মহিলাদের স্বার্থে আইনি লড়াই করেছেন। দীর্ঘ দিন আনন্দবাজার পত্রিকায় ‘আইন আপনার বন্ধু’ শীর্ষকে তাঁর কলম ছিল খুবই জনপ্রিয়। স্কটিশ চার্চ কলেজের এই প্রাক্তনী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পরীক্ষায় প্রশ্নকর্তা ও প্রধান পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। মোহনবাগানের সহ সভাপতি গীতানাথবাবুর ক্লাব ও ফুটবলারদের বিভিন্ন মামলা লড়া ছাড়াও গড়াপেটা বন্ধে বড় ভূমিকা রয়েছে। তিনি দীর্ঘায়ু হোন।

বিবেকের স্রোতে
সেই উনিশ শতকের শেষে নিজের বাণী প্রচারে গুরুর নির্দেশে তিনি স্বয়ং বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। আর আজ, তাঁর ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নানা সশ্রদ্ধ অনুষ্ঠান চলছে বিশ্বের নানা দেশে। এই তালিকায় এ বার যোগ দিল সিঙ্গাপুর ২৭ জুলাই সেখানে ‘জুবিলি হল’ মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বিবেকের স্রোতে’: গান, ভাষ্য পাঠ, আবৃত্তি ও শাস্ত্রীয় নৃত্যের মাধ্যমে স্বামী বিবেকানন্দের জীবন ও বার্তা। কলাকুশলীরা কিন্তু কলকাতারই, ‘শ্রুতিবৃত্ত’ তাঁদের গোষ্ঠী, সিঙ্গাপুরের টেগোর সোসাইটি আয়োজিত অনুষ্ঠানের জন্য রওনা হওয়ার আগে গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে জানালেন প্রবুদ্ধ রাহা। কলকাতার অংশগ্রহণে বিদেশে বিবেকানন্দ-স্মরণ, খুব বেশি ঘটেনি আগে।

ভারতসভা
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার আগে পর্যন্ত ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন’ বা ‘ভারতসভা’ ছিল অন্যতম উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে শিবনাথ শাস্ত্রী, নীলকমল মিত্র প্রমুখ ১৮৭৬-এর ২৬ জুলাই দেওয়ান রামকমল সেনের ‘অ্যালবার্ট হল’-এ (বর্তমান কলেজ স্ট্রিট কফি হাউস) এটি প্রতিষ্ঠা করেন। আজও বিভিন্ন সামাজিক কাজে জড়িয়ে আছে ভারতসভা। ১৩৭তম প্রতিষ্ঠাদিবস উপলক্ষে ২৬ জুলাই বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ৬২ বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিটের ‘ভারতসভা ভবন’-এ ‘বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সুশীল সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষকে বলবেন সুনন্দ সান্যাল ও তরুণ সান্যাল। পৌরোহিত্য করবেন মীরাতুন নাহার এবং প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন শুভাপ্রসন্ন। দেশাত্মবোধক গানে মীনা চৌধুরী।

আন্তোনিয়োনি উৎসব
ভাল ভায়োলিন বাজাতেন, নয় বছরেই প্রথম কনসার্ট। অর্থনীতি নিয়ে পড়াশুনোর পর সংবাদপত্রে চলচ্চিত্র নিয়ে লেখা শুরু ও সিনেমার সঙ্গে যোগ। বিশ্বের প্রথম সারির পরিচালকদের অন্যতম মিকেলাঞ্জেলো আন্তোনিয়োনির জন্ম ১৯১২-র ২৯ সেপ্টেম্বর। মৃত্যু ২০০৭-এর ৩০ জুলাই। তাঁর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে উৎসবের আয়োজন করল ‘নিও ফিল্ম ফাউন্ডেশন অব বেঙ্গল’। ২৫-২৬ জুলাই নন্দন-২’এ দেখানো হবে রেডডেজার্ট, জাব্রিস্কিপয়েন্টওব্লোআপ। ‘আন্তোনিয়োনি টুডে: ভিউজ অ্যান্ড রিফ্লেকশন্স’ শীর্ষক আলোচনায় থাকবেন ফাদার গাস্তঁ রোবের্জ, শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, দেবকান্ত চক্রবর্তী, বীরেন দাসশর্মা ও স্বপন মল্লিক। সহযোগী আয়োজক কলকাতায় ইতালির কনসুলেট জেনারেল, দিল্লির ইতালীয় সংস্কৃতি কেন্দ্র ও নন্দন। এ দিকে দু’ঘণ্টার ছবি ‘আই অ্যাম হান্ড্রেড ইয়ার্স ইয়ং’-এ ধরা রইল একশো বছরের নানান ভারতীয় সিনেমার দুর্লভ মুহূর্ত, সঙ্গে তথ্যানুসন্ধান, বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকারদের মত ও শ্যাম বেনেগালের ভাষ্যপাঠ। ফিল্মস ডিভিশনের এই ছবিটির পরিচালক যশ চৌধুরী। নন্দন-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এ-ছবি দেখানো হবে ২৩ জুলাই সন্ধে ৬টায়।

উত্তম-সংগ্রহ
এক ঘুঁষিতেই উত্তমকুমারের নাক ফাটিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘সিঁড়ি দিয়ে নামছেন মহানায়ক। আমায় দেখেই ছুঁড়ে দিলেন আশ্চর্য প্রশ্নটা, আমায় চিনতে পারছেন? আমি তো হা।ঁ বললাম, চিনব না, সে কি, আপনি উত্তমকুমার, মহানায়ক। বললেন, দূর মশাই, মনে পড়ে, রোগাপাতলা ছেলেটার নাক ফাটিয়ে দিয়েছিলেন ঘুঁষি মেরে।” উত্তম তখন উত্তম নন, অরুণ, বক্সিং শিখতে গিয়েছিলেন বব দাসের কাছে। ‘মহানায়ক’-এর জীবনের এমন অনেক তথ্যই এখনও সে ভাবে পরিচিত নয়। বস্তুত আবেগ-উচ্ছ্বাসের বন্যা ছাড়া তাঁর প্রামাণ্য কোনও জীবনীও লেখা হয়নি এখনও। তবু, কেউ কেউ সংগ্রহ করে চলেছেন উত্তম-জীবনীর উপাদান। তেমনই এক জন, ‘এখন সত্যজিৎ’ পত্রিকার সম্পাদক সোমনাথ রায়ের সংগ্রহ নিয়ে গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় ২৪ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে উত্তম-ছবির পোস্টার, বুকলেট, লবিকার্ড ইত্যাদির প্রদর্শনী। চলবে ২৭ পর্যন্ত। থাকছে আগামী ছবির বিজ্ঞাপন-স্লাইডও।

সংরক্ষণ
সূচনালগ্ন থেকেই রবীন্দ্রনাথ-সহ বিশিষ্ট সাহিত্যিকরা যুক্ত থেকেছেন বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ও (১৮৯৮-১৯৭১) সাধারণ সদস্য থেকে পরিষদের সভাপতি হন, সেই পদে ছিলেন আমৃত্যু। বীরভূম জেলার লাভপুরের মানুষটি সেন্ট জেভিয়ার্সে পড়তে এসে কলকাতাবাসী হন, মূলত সাহিত্যসেবার কারণেই থেকে যান এই শহরে। জীবনের শেষ দিকে বাড়ি করেন টালা পার্কে (সঙ্গের ছবি)। আগামী জন্মদিনে (২৪ জুলাই) তাঁর নানা স্মারক তিনটি প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষিত হতে চলেছে। ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় বাংলা আকাদেমি সভাঘরে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে পাণ্ডুলিপি, আঁকা ছবি, প্রাপ্ত পুরস্কার ও গ্রন্থসংগ্রহ অর্পণ করা হবে ‘ভারতীয় প্রদর্শশালা’ ও ‘বাংলা আকাদেমি’কে। পরে ‘গদ্যের গল্পসল্প’ অনুষ্ঠান, থাকবেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, ঝড়েশ্বর চট্টোপাধ্যায়, সৈকত রক্ষিত ও ব্রাত্য বসু। দিনটি পরিষদের প্রতিষ্ঠাদিবস। বিকেল চারটায় পরিষদ সভাকক্ষে বিভিন্ন পুরস্কার প্রদানের পর প্রতিষ্ঠাদিবসের ভাষণ দেবেন জাতীয় গ্রন্থাগারের ডিজি স্বপন চক্রবর্তী। সেখানেই তারাশঙ্করের ব্যবহৃত সামগ্রী, চিঠিপত্র, আলোকচিত্র, তাঁর বইয়ের নানা সংস্করণ, তাঁকে নিয়ে লেখা বই ও পত্রপত্রিকা পরিষদে দান করা হবে। এই সঙ্গে হুগলি জেলার ইতিহাসকার সুধীরকুমার মিত্রের সংগ্রহের দুর্লভ নথি, চিঠিপত্র ইত্যাদি পরিষদে অর্পণ করবেন তাঁর উত্তরসূরিরা।

স্মরণ
১৯৩০-’৯০ দশকে পরিব্যাপ্ত ‘পদ্মভূষণ’ সুনীল জানা-র কাজের জগৎ। বহু অসামান্য আলোকচিত্রে তিনি ধরে রেখেছেন ভারতীয় জীবন-বৈচিত্র, দাঙ্গা আর দুর্ভিক্ষ। আদিবাসীজীবন, শ্রমিক কৃষক আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, আছে এ সবও। আর আছে মহাত্মা গাঁধী থেকে শুরু করে বহু রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের ছবি। প্রথমে ব্যবহার করতেন একটি কোডাক বক্স ব্রাউনি, তার পর তুলে নেন রোলিফ্লেক্স। জীবনের শেষ দিকে ব্যবহার করেছেন নিকন ক্যামেরা। ১৯১৮-য় অসমে জন্ম, আমেরিকার বার্কলে শহরে মৃত্যু গত ২১ জুন। ‘বই-চিত্র’ আয়োজিত সভায়, ‘বই-চিত্র’ সভাঘরে ২৪ জুলাই সন্ধ্যা ৬টায় সুনীল জানা-র স্মৃতিচারণ করবেন অশোক মিত্র এবং প্রখ্যাত আলোকচিত্রী সুব্রত পত্রনবিশ।

বনফুল
‘ছবি আসে ছবি যায় নির্বিকার মানস-দর্পণ।’ আত্মপরিচয়-এর শেষ লাইনে লিখেছিলেন বনফুল, পংক্তিটি যেন তাঁর সৃষ্টির ক্ষেত্রেও সত্যি। উপন্যাস কবিতা রম্যরচনা নাটক গল্প ইত্যাদি যেখানেই হাত দিয়েছেন তিনি, সোনা ফলিয়েছেন। সম্প্রতি মিত্র ও ঘোষ থেকে বেরল নির্বাচিত বনফুল (৩০০.০০)। ১৯ জুলাই ছিল তাঁর জন্মদিন। তাঁর রচনাপ্রসঙ্গে শুরুতেই লিখেছেন ধীমান দাশগুপ্ত: ‘স্থানকালমনশ্চেতন বনফুল’। তাঁকে নিয়ে রাজশেখর বসু লিখেছিলেন ‘নেশা তব মানিল না পেশার বাঁধন,/বনফুল দিল চাপা বলাই ডাক্তারে।’


পলাতক
আবার পলাতক। না, ‘যাত্রিক’-এর তরুণ মজুমদার নন। পরিচালকের ভূমিকায় এ বার তাঁর সহকারী নেহাল। ছবির ‘পলাতক’ জমিদার আংটি চাটুজ্জের ভাই নয়। এ ছেলে নীলকান্ত। মা’কে ব্যভিচারী আর জেঠিমাকে অত্যাচারীর ভূমিকায় দেখে ছোট ছেলেটি পালাতে শুরু করে, নারীর থেকে, নাড়ির টান থেকে। পালাতে পালাতে এক সময় ঈশানপুর শ্মশানে মৃতের নাম নথিভুক্ত করার কাজ তাকে থিতু করে। বাঁধা পড়ে মোতির কাছে। এই চণ্ডাল-কন্যার মধ্যে সে দেখে সত্যিকারের মানুষকে। এ ছবি জাতপাতের বিরুদ্ধে সাহিত্যিক-চিত্রনাট্যকার নবেন্দু ঘোষের প্রতিবাদ। ‘ঈশানপুরের মশান’ নামে উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয়। যা নিয়ে ছবি করতে চেয়েছিলেন বাসু ভট্টাচার্য। ঘটনাচক্রে তা না হওয়ায় কাজ শুরু করেছিলেন তাঁরই সহকারী নন্দু ভট্টাচার্য। তখনই ‘আগুনের উক্তি’ নামে চিত্রনাট্য করেন নবেন্দু বাবু। নন্দু ভট্টাচার্য মারা যাওয়ায় প্রযোজক রমেশ সিংহল ডেকে নেন নেহালকে। নাম বদলে তরুণ মজুমদারের বিখ্যাত ছবির নাম কেন? ‘নিছক কাকতালীয়। তবে শু্যটিং করেছি বীরভূমের পলাশি গ্রামে, যেখানে জেঠুর বহু বিখ্যাত ছবির কাজ হয়েছে।’ এটাই নেহালের প্রথম ছবি। নবেন্দু ঘোষের চিত্রনাট্য নিয়ে নেহাল উৎসাহী। তবে ছবির কৃতিত্ব তিনি দিচ্ছেন তাঁর শিক্ষককে। বললেন, ছবিটি দর্শকদের ভাল লাগলে সেটা জেঠুরই অবদান। ছবি তৈরির খুঁটিনাটি শিখিয়েছেন তিনিই।’ পলাতক মুক্তি পাচ্ছে আগামী ২৭ জুলাই।

বীতশোক
তিনজের নামেই শোকের অতীত হয়ে ওঠার অঙ্গীকার ছিল তাঁর। সেই সাক্ষ্য রয়ে গিয়েছে তাঁর কবিতায় জেন-মনস্কতার অনুশীলনেও। তবু তাঁর আকস্মিক প্রয়াণে বাংলা কাব্যসংসারে শোকের অন্তঃস্রোত। বীতশোক ভট্টাচার্যের (৬১) নিভৃত প্রস্থান (১৪ জুলাই) কতটা ক্ষত ও ক্ষতি রেখে গেল, বাংলা কবিতারও তা বুঝতে সময় লাগবে। মেনিনজাইটিস যখন মস্তিষ্কের অধিকার নিল, আরোগ্য-নিকেতনের শয্যায় তখনও তাঁকে মনে হয়েছে কবিতার অনাবিষ্কৃত কোনও গহিন পথের মগ্ন অভিযাত্রী। তিনি কবিতাকে যত বুঝেছিলেন, কাব্যভুবন তাঁকে ততটা বুঝেছিল কি না, সংশয় জাগে। মৃত্যুর সময়জ্ঞানের আর কাব্যবোধের এত অভাব! এতই অবিবেচনা মৃত্যুর! দশক দেগে দেওয়ার গণ্ডিবদ্ধতাকে কবির প্রতি অবিচার মনে করতেন বীতশোক। বিশ্বাস করতেন, কবিতার শক্তিতেই কবি সত্য হয়ে উঠবেন। তাই ভারতবিদ্যা ও বিশ্ববিদ্যার ঐতিহ্যকে আত্মস্থ করে কবিতায় নিজস্ব আধুনিকতার পথে চলে গিয়েছিলেন তিনি। বৈদিক ঋকের মন্ত্রসংহতি আর লোকায়ত সংস্কৃতির ধূলিচন্দন ওতপ্রোত তাঁর অন্য যুগের সখা, শিল্প, এসেছি জলের কাছে, দ্বিরাগমন, জলের তিলক কাব্যগ্রন্থে। ফলত তাঁর কবিতা হয়ে উঠেছিল ‘বন্ধুদের থেকে কত বাধ্যতামূলক দূর’। খেদ ছিল তাঁর, ‘আমার কবিতার মোটে এক মুষ্টি পাঠক!’ তাঁর অধ্যাপক ও প্রাবন্ধিক সত্তা গিলে ফেলেছে কবিসত্তাকে, এমন সমালোচনাও অবিরল। অথচ অতিসচেতন ভাবেই কবিতায় মেধা চর্চার নতুন ‘স্কুল’ তাঁর অন্বিষ্ট ছিল। সময়ের সঙ্গে সংগ্রামে সেটাই তাঁর প্রহরণ। নিজের পরিচায়নে বীতশোক লিখেছিলেন ‘মানমন্দিরের ঊর্ধ্বে ঐ ওই জেগে থাকা আমার হৃদয়; সে একা একটি তারা’। সময়ের ঊর্ধ্বে তাঁর কবিতার তারা কী ভাবে জ্বলছে, আরও কিছু রাত জেগে সেটা খুঁজে নিতে হবে সময়কেই।
   

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.