কেরোসিন ঢেলেছি গায়ে, ধরলেই আগুন দেব
ভিযুক্ত নাগালেই। পুলিশকর্মীরা প্রায় ধরেও ফেলেছেন তাকে। হাতকড়া পরানোটাই যা বাকি।
অভিযুক্ত যুবক হঠাৎই সুড়ুত করে ঘরে ঢুকে বোতল থেকে কী একটা ঢেলে দিল নিজের গায়ে। তার পরেই হাতে দেশলাই নিয়ে হুমকি, “গায়ে কেরোসিন দিয়েছি। পাকড়াও করলেই গায়ে আগুন ধরিয়ে দেব।”
ব্যস, থমকে গেল পুলিশ।
এখানেই শেষ নয়! অভিযুক্তের হুমকির মধ্যেই ‘রে রে’ করে তেড়ে এল সেই বাড়ির তিন মহিলা। কারও হাতে বঁটি, কারও হাতে কাটারি। পলকের মধ্যে এক পুলিশ অফিসারকে ঠেলে ঘরের ঢুকিয়ে শিকল তুলে দিল তিন রণরঙ্গিণী। সেই সঙ্গে ‘বড় গলা’য় গালাগালির বৃষ্টি! যথেচ্ছ ইটপাটকেলও।
চোর ধরতে যাওয়া পুলিশকর্মীদের চুল খাড়া হওয়ার জোগাড়। তাঁদের কেউ ব্যস্ত মহিলা সামলাতে। কেউ বা ফোনে যোগাযোগ করছেন কর্তাদের সঙ্গে। শুক্রবার হরিদেবপুরের সুকান্ত পল্লিতে হানা দিতে গিয়ে পুলিশ এ ভাবেই কার্যত ঘোল খেয়ে গেল!
পুলিশি সূত্রের খবর, সম্প্রতি একটি অটোরিকশা চুরির তদন্তে নেমে সনৎ ধর নামে ওই এলাকার এক বাসিন্দার কথা জানা যায়। তাকে ধরতেই শুক্রবার হরিদেবপুরের সুকান্ত পল্লিতে হানা দেয় পুলিশ।
লালবাজার সূত্রের খবর, বাড়ি থেকে সনৎকে পাকড়াও করতে দুই অফিসার-সহ চার জন গিয়েছিলেন ওই এলাকায়। ভেবেছিলেন, আর-পাঁচটা অভিযান বা তল্লাশির মতোই জলভাত হবে ব্যাপারটা। যাবেন, অভিযুক্তকে পাকড়াও করবেন এবং থানায় নিয়ে আসবেন।
অঙ্কন: সুমন চৌধুরী
কিন্তু সে-দিন সুকান্ত পল্লিতে পৌঁছনোর পরেই তদন্তকারীরা বুঝতে পারেন, ‘হাওয়া’ খারাপ! পুলিশ জানিয়েছে, বেগতিক দেখে হঠাৎ একটি ঘরে ঢুকে গায়ে তরল পদার্থ ঢেলে দেয় সনৎ। তার পরেই হাতে দেশলাই নিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিতে থাকে। আর বাড়ির মহিলারা কিছু বোঝার আগেই এক অফিসারকে ঠেলে ঢুকিয়ে দেয় একটি ঘরে। দা, কাটারি নিয়ে তাড়া করে অন্য পুলিশকর্মীদের। ছোড়া হতে থাকে ইট-পাটকেলও।
শেষ পর্যন্ত হরিদেবপুর থানা থেকে অতিরিক্ত বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন অতিরিক্ত ওসি পুলককুমার দত্ত। ঘরের দরজা ভেঙে গ্রেফতার করা হয় সনৎকে। তার পরেই ‘কেরোসিন’-এর পর্দাফাঁস’! সনতের কাছাকাছি গিয়ে গন্ধ শুঁকতেই চমকে ওঠেন পুলিশ অফিসারেরা। কোথায় কেরোসিন? এ তো স্রেফ জল!
এক পুলিশকর্মীর কথায়, ঘরের ভিতরে বোতলভর্তি জল গায়ে ঢেলেই আত্মহত্যার নাটক করছিল সনৎ। হুলস্থুল কাণ্ডের মধ্যে গন্ধ-বিচারের কথা মাথায় আসেনি কারও। ডিসি (সাউথ-ওয়েস্ট) সুব্রত মিত্র বলেন, “সনৎ-সহ তার পরিবারের চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সনৎকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বাকিদের পাঠানো হয়েছে জেল-হাজতে।”
সনতের দুষ্কর্ম এই প্রথম নয়। পুলিশের খবর, বেহালা-ঠাকুরপুকুর এলাকায় বেশ কয়েকটি সাইকেল এবং মোটরবাইক চুরির অভিযোগ রয়েছে ওই যুবকের নামে। কয়েক দিন আগেই জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে সে। তার পরে একই অভিযোগে আবার হাজতবাস। চোর-পুলিশ খেলার অনেক সুলুক-সন্ধান আছে। গল্পের বইয়ে এবং অবশ্যই সিনেমায়। কিন্তু কোণঠাসা হয়ে সনৎ এ বার যা করল, সেটা প্রায় বেনজির। চুরিবিদ্যা যে ‘মহাবিদ্যা’, তার আদিগ্রন্থেও চোরের আত্মরক্ষার জন্য এমন নিদান আছে কি না সন্দেহ!
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.