ওঁদের দু’জনের মধ্যে মিল বহু। দু’জনেই জন্মেছেন বীরভূম জেলায়। এক জন মিরাটিতে, অন্য জন দাঁড়কায়। দুই গ্রামের দূরত্ব প্রায় ১২-১৩ কিলোমিটার। দু’জনেই স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরের ডিগ্রি পেয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। দু’জনেই যে-সব বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, তার একটি রাষ্ট্রবিজ্ঞান। দু’জনেই নিজের নিজের দেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। এবং দু’জনেই বাঙালি।
এক জন অবশ্যই প্রণব মুখোপাধ্যায়।
অন্য জন বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন সাত্তার। প্রণববাবু যে দিন দেশের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন, সে দিন বীরভূমের দাঁড়কার সাত্তার সাহেবের পরিবারও সমান অতীতচারী। ১৯০৬ সালে লাভপুরের দাঁড়কা
|
আব্দুস সাত্তার |
গ্রামে জন্ম সাত্তার সাহেবের। বাবা সফিউর রহমান ছিলেন সম্পন্ন চাষি। স্থানীয় গুনুটিয়া স্কুলে প্রাথমিক পাঠ শেষ করে পঞ্চম শ্রেণিতে লাভপুরের যাদবলাল হাইস্কুলে ভর্তি হন।
এর পর কলকাতায় এসে এন্টালি অ্যাকাডেমি থেকে স্কুল ফাইনাল দেন। স্কুলজীবন শেষ করে প্রথমে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ এবং পরে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। স্নাতক স্তরে বিষয় ছিল রাষ্ট্রবিজ্ঞান। আইন নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্তাতকোত্তর ডিগ্রি পান। ১৯৪৭-’৪৮ সালে কলকাতা কর্পোরেশনের ডেপুটি চিফ এগ্জিকিউটিভ নিযুক্ত হন। ’৫০-এ কলকাতা কর্পোরেশনের ‘অ্যাক্টিং চিফ’ হিসেবে কাজ করেন।
’৫০-এর শেষের দিকেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে যান। পরের বছরগুলিতে অবিভক্ত পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী, ঢাকা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি, অবিভক্ত পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবেও দায়িত্ব সামলান। ১৯৭০-এ নির্বাচন কমিশনার পদে নিযুক্ত হন। ’৭১-এ মুজিবর রহমান জয়লাভ করার সময় নির্বাচন কমিশনার ছিলেন সাত্তার সাহেবই।
সে বছরই দেশভাগ। ’৭১-এ ইসলামাবাদে সাত্তার সাহেবকে আটক করা হয়। জুলফিকর আলি ভুট্টোর আর্জি সত্ত্বেও তাঁর মুক্তি হয়নি। ’৭৩-এ লুকিয়ে তিনি আফগানিস্তান হয়ে দিল্লি পৌঁছন। কলকাতা হয়ে ঢাকা যান। ১৯৭৫-এ ঢাকার ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রেসিডেন্ট’ বা সহকারী রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। ’৭৬-এ উপরাষ্ট্রপতি এবং ’৮১-তে রাষ্ট্রপতি। ১৯৮২-র ২৪ মার্চ হোসেন মহম্মদ এরশাদ সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল করলে সরতে হয় সাত্তার সাহেবকে। নিঃসন্তান মানুষটির ভাইপো রুহুল ও সিরাজুল ইসলাম রয়ে গিয়েছেন দাঁড়কায়। রয়েছে সাবেক বাড়িটিও। রাষ্ট্রপতি ভোটে প্রণববাবুর জয়ের খবরে স্বভাবতই পড়শি গ্রামের এই বাসিন্দারাও খুশি। তবে ক্ষোভও ধরা পড়ল তাঁদের গলায়। জানালেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন সাত্তার সাহেবকে এ দেশে আসার অনুরোধ জানানোর জন্য সরকারকে চিঠিও দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের সেই ইচ্ছে পূরণ হয়নি। |