প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলা বন্যা পরিস্থিতির বেশ খানিকটা উন্নতি হয়েছে শনিবার। এ দিন জলপাইগুড়ি জেলায় কোনও নদীতে লাল সংকেত ছিল না। তবে জল কমতে থাকায় নদী বাঁধগুলিতে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু মাত্র জলপাইগুড়ি সদর এবং মালবাজার মহকুমা মিলিয়ে বিভিন্ন নদী বাঁধের ৭০টি জায়গায় ক্ষতি হয়েছে। নদী বাঁধের মেরামতিতে প্রায় ১০ কোটি টাকা লাগবে বলে জানানো হয়েছে।
এ দিন শিলিগুড়ি মিলন মোড়ে মহানন্দা ভাঙা বাঁধের কাজ দ্রুত শেষ করতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলার বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী নেমেছে। শনিবার সকালে ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এনডিআরএফ)-এর ৭০ জনের ওই দল কলকাতা থেকে মিলন মোড়ে পৌঁছায়। তারা বাঁধের কাজে ক্যাম্প তৈরি করেছে। এদিনও প্রশাসন ও বেসরকারি উদ্যোগে ১৩টি ত্রাণ শিবির চলছে ওই এলাকায়। সেখানে প্রচুর মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। মাটিগাড়ার বিডিও বীরবিক্রম রাই বলেন, “বাঁধ নির্মাণের কাজ অনেকটা এগিয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের যাতে কোনও অসুবিধে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখছি। ত্রাণ শিবির চলছে। এ ছাড়াও একটি সমীক্ষা চলছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। নিয়ম মেনে সবাই ক্ষতিপূরণ হবে।”
জলপাইগুড়ি জেলায় কৃষির ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১১ কোটি টাকার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মালবাজার ব্লকে। এই ব্লকে প্রায় ৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমন ধান, ভুট্টা এবং কয়েকটি বিশেষ ধরনের শাকসব্জির ক্ষতি হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। মালবাজার ব্লক ছাড়াও সদর ব্লক, কালচিনি, রাজগঞ্জ ও নাগরাকাটা ব্লকেও ক্ষতি হয়েছে। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র বলেন, “ক্ষতি বিষয়ক বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে নিয়মিত মহাকরণে তথ্য জানানো হচ্ছে।”
সেচ দফতর সূত্রের খবর, তিস্তা নদীর মন্ডলঘাট ও জলপাইগুড়ি সদরের নদী বাঁধে ভাঙন দেখা গিয়েছে। মালবাজারের চেল নদী, কুমারগ্রামে সঙ্কোশের নদী বাঁধে ফাটল ধরাও উদ্বেগে রেখেছে সেচ দফতরকে। শনিবার ভোর বেলা থেকে রাজগঞ্জের বীরেন বস্তি ও মিলনপল্লী এলাকাতেও তিস্তা নদীর পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। তিস্তা নদীর জল ঢুকে প্লাবিত সদর ব্লকের নাথুয়ার চর ও বোয়ালমারিতে নতুন করে ত্রাণ শিবির খুলেছে ব্লক প্রশাসন।
মালবাজার মহকুমায় বন্যা পরিস্থিতি অবস্থার উন্নতি ঘটে ফের জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। শনিবার মালবাজারের মহকুমাশাসক দেবযানী ভট্টাচার্য বলেন, “সেচ দফতর জানিয়েছে, তিস্তায় লাল সতর্কতা তুলে নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য নদীগুলোতেও আর কোন সতর্কতা নেই।”
এদিকে তিস্তা ব্যারাজের সমস্ত গেট গত কিছুদিন ধরে খুলে দেওয়ায় রাজগঞ্জ ব্লকের মিলনপল্লি এবং বীরেন বস্তি গ্রামের ১০০ একরেরও বেশী জমি নদী গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। শনিবার ওই এলাকায় পরিদর্শনে যান রাজগঞ্জের বিডিও নরবু শেরপা। বেশ কিছু ঘরও এখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। |