অন্যান্য রাজ্য গ্রামোন্নয়নে অঢেল ঋণ পাচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের গ্রামোন্নয়নে ঋণদানের ক্ষেত্রে অধিকাংশ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। শুধু অভিযোগ তুলেই ক্ষান্ত হচ্ছেন না তিনি। কেন এই বৈষম্য, সেই প্রশ্ন তুলে চিঠিও দিচ্ছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে।
পঞ্চায়েতমন্ত্রী বৃহস্পতিবার মহাকরণে জানান, পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে পঞ্চায়েত দফতরের অধীনে প্রায় চার লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে। এক যুগ ধরে ওই সব গোষ্ঠী বছরে মোট ৬৩০ কোটি টাকা ঋণ পায় বলে ব্যাঙ্কার্স কমিটি রিপোর্ট দিয়েছে। কিন্তু একই সময়ে প্রতি বছর আট হাজার কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ। দক্ষিণের অন্যান্য রাজ্য এবং মহারাষ্ট্র, বিহার, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ ইত্যাদি রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলোর ঋণ পাওয়ার হারও খুব ভাল। ভুগতে হচ্ছে শুধু পশ্চিমবঙ্গকে। সুব্রতবাবু বলেন, “এই পরিস্থিতির কথা জানিয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিচ্ছি। জানতে চাইছি, ব্যাঙ্কের এই বিমাতৃসুলভ আচরণের অর্থ কী?”
কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৯৯ সালে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে স্বনির্ভর প্রকল্প সূচনা করে। অন্ধ্রপ্রদেশ অবশ্য তার দু’বছর আগেই, ১৯৯৭ সালে বিশ্বব্যাঙ্কের সাহায্য নিয়ে শহর ও গ্রামে একযোগে স্বনির্ভর প্রকল্প শুরু করে দিয়েছিল। বস্তুত, ওই রাজ্যের সাফল্যের প্রমাণ পেয়ে পরে এই প্রকল্প শুরু করে কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গে স্বনির্ভর গোষ্ঠী আন্দোলন শুরু হয় ২০০১ সালে। তখন অর্থমন্ত্রী ছিলেন অসীম দাশগুপ্ত। তাঁর আমলে ব্যাঙ্কে গোষ্ঠীগুলির আমানতের হার দক্ষিণের রাজ্যগুলির থেকেও ভাল ছিল বলে অর্থ দফতর সূত্রের খবর। তবু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুপারিশ মেনে আমানতের ৬০ শতাংশ পুনরায় লগ্নি করতে আগ্রহী হয়নি ব্যাঙ্কগুলি। বরং এ রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কগুলি অত্যন্ত ভাল ভূমিকা পালন করেছিল বলে ওই সূত্রের দাবি। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী এই নিয়ে কেন্দ্রের কাছে বহু আবেদন-নিবেদন করলেও পরিস্থিতি বদলায়নি।
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সাফল্য-অসাফল্যের রিপোর্ট নিয়ে সুব্রতবাবু এ দিন পঞ্চায়েত অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে তিনি বলেন, “এ রাজ্যে বছরে ৬৩০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে বলে ব্যাঙ্কের রিপোর্ট পেয়েছি। সেই টাকার অনেকটাই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির উপার্জনের টাকা ব্যাঙ্কে আমানত হিসেবে রাখা, যা ব্যাঙ্ক আবার ঋণ হিসেবে এত দিন দিয়ে এসেছে।” এই বিষয়ে তিনি ব্যাঙ্কগুলির কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন আগামী সপ্তাহে। ব্যাঙ্কগুলি কেন এ রাজ্যে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ঋণ দিতে অনাগ্রহী, তার কারণ জানতে চাইবেন তিনি। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সাফল্য দেখতে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে ছ’জন অফিসার নিয়ে তিনি অন্ধ্র সফর করবেন বলে জানান সুব্রতবাবু। |