পঞ্চায়েত ভোটের দিকে লক্ষ রেখে রাজনৈতিক ভাবে ‘সচেতন’ মহিলা প্রার্থী খোঁজা শুরু করল কংগ্রেস।
ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটে মহিলাদের জন্য ৫০% আসন সংরক্ষিত হয়েছে এ রাজ্যে। সাধারণত মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনে পুরুষ রাজনৈতিক কর্মীর বদলে তাঁর স্ত্রী বা পরিবারের কোনও মহিলা সদস্যকে দাঁড় করানোর ‘রেওয়াজ’ রয়েছে বিস্তর। তার ফলে প্রায়শই রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না-থাকায় স্বামী বা স্থানীয় নেতাদের ‘নির্দেশবাহক’ হয়েই রয়ে যান ওই মহিলারা। তা আর যাতে না-হয়, তার জন্যই সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধির পাশাপাশি ‘স্বাধীন’ ভাবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম মহিলাদেরই এ বার পঞ্চায়েতে প্রার্থী করার প্রস্তুতি নিচ্ছে কংগ্রেস। কর্মী বা নেতাদের পরিবারের কেউ প্রার্থী হলেও তাঁরা যাতে রাজনীতি-সচেতন হন, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে।
জেলায় জেলায় সভা, শিবির করে ইতিমধ্যেই মহিলাদের দলভুক্ত করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। সভা থেকে আগ্রহী মহিলা ‘বাছাই’য়ের পাশাপাশি স্থানীয় বিধায়ক, পঞ্চায়েত ও জেলা পরিষদের নেতাদেরও ‘রাজনীতি-মনস্ক’ মহিলা খোঁজার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং মুসলিম মহিলাও (সংশ্লিষ্টদের জন্য সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী করতে) যাতে উঠে আসেন, সে দিকেও নজর রাখতে বলা হয়েছে স্থানীয় নেতৃত্বকে। জাতীয় যুব কংগ্রেসের নেতা রাহুল গাঁধীর নির্দেশে শিক্ষিত তরুণীদেরও রাজনীতিতে আনার উপরে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে কংগ্রেস সূত্রে খবর।
পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতিতে মহিলা বাছাই-প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মহিলাদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তার পরে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে পারিবারিক ভাবে কংগ্রেস-মনস্ক মহিলাদের। এ ছাড়া, কংগ্রেস কর্মীদের স্ত্রী, বোন, মেয়েদেরও দলে এনে রাজনীতির পাঠ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। বোঝানো হচ্ছে, কী ভাবে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে, মানুষের সমস্যা মোকাবিলায় জনপ্রতিনিধি হিসেবে কী কী করণীয়।”
তৃণমূলের সঙ্গে শরিক কংগ্রেসের টানাপোড়েনের আবহে মহিলারা যে ‘স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে’ কংগ্রেসে যোগদানে আগ্রহী হবেন না, তা অজ্ঞাত নয় কংগ্রেস নেতাদের। তা বুঝেই বিগত ১৩ মাসে গ্রামের মানুষের জন্য বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে রাজ্য সরকারের খতিয়ান তুলে ধরার চেষ্টা করছে কংগ্রেস। প্রকল্প থাকলেও মানুষ যে তা থেকে ‘বঞ্চিত’ হচ্ছেন, সেটাই তুলে ধরে কংগ্রেসের ‘প্রাসঙ্গিকতা’ বোঝানোর চেষ্টা করছে তারা। রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মহিলাদের উপরে নির্যাতনের ঘটনাও শরিক-সমালোচনার ‘হাতিয়ার’ কংগ্রেসের। প্রদীপবাবুর কথায়, “কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পগুলি উল্লেখ করা হচ্ছে। সঙ্গে বোঝানো হচ্ছে, কংগ্রেসে যোগ দিলে গ্রামের মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ অনেক বাড়বে।” কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি কী ভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে, সেটাও বোঝানো হচ্ছে কংগ্রেসের হবু মহিলা প্রার্থীদের।
যখন ৩৩% আসন সংরক্ষিত থাকত মহিলাদের জন্য, সেখানেই প্রার্থী খুঁজতে বিপাকে পড়তে হত সব রাজনৈতিক দলকেই। এখন আরও বেশি আসনে মহিলা প্রার্থী খুঁজে পেতে আরও অসুবিধার মুখে পড়তে হতে পারে বুঝে আগেভাগেই মহিলা প্রার্থী খোঁজা শুরু হয়েছে বলে কংগ্রেস সূত্রের ব্যাখ্যা। প্রদেশ কংগ্রেসের এক সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য, “রাজ্যে এখন জোট-পরিস্থিতি যা, তাতে পঞ্চায়েতে একলা চলতে হতে পারে এটা ধরে নিয়েই অনেক আগে থেকেই মহিলা প্রার্থী খোঁজার কাজ শুরু হয়েছে। বুথ-অঞ্চল-ব্লক ধরে ধরে মহিলা বাছাইয়ের কাজ চলছে।” |