রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় • কলকাতা |
ছেলেকে নিয়ে টেনসড্?
পিছনে ঘুরে উত্তর দেওয়ার আগেই ফোনটা এল। ফোনের উল্টো দিকে ছেলে অঙ্গদ বেদী। “হাঁ বেটা...তু টেনশন মত কর। মিডিয়া আমি সামলে নেব।” মিনিট পাঁচেক কথা। ফোন ছেড়ে তার পর পাল্টা প্রশ্ন, “কী বলছিলেন?”
প্রশ্নটা আবার উড়ে যেতে না যেতেই রীতিমতো ঝাঁঝিয়ে উঠলেন বিষেণ সিংহ বেদী। গাড়ির সামনের সিট থেকে শরীর ঘুরে গেল পিছনে। এবং নিজ-মেজাজে পরপর ক্ষেপণাস্ত্র-বর্ষণ। “নিজের ছেলেকে আমি চিনি না নাকি? মেরা খুন হ্যায় ইয়ার। পুলিশের একটা কথাও আমি বিশ্বাস করি না,” বলে একটা দু’সেকেন্ডের ব্রেক। তার পর ফের ‘সিক্সথ গিয়ারে’ গিয়ে শ্লেষ, “আসলে বিষেণ বেদীর ছেলে তো, তাই জন্যই এ সব হচ্ছে। কথা হবে, হেডলাইন হবে। সবাই ভুলে যাবে অঙ্গদ বেদীরও একটা আলাদা পরিচয় আছে। আর এই ঘটনাটা তো মাসখানেক আগে ঘটেছিল। তা হলে রিপোর্ট দিতে এত দেরি হল কেন?”
ভারতীয় স্পিনের অন্যতম কিংবদন্তি মানেন না, তাঁর ছেলে মাদক-কাণ্ডে জড়িয়ে থাকতে পারে। মানেন না, রাহুল শর্মার পক্ষে মাদক নেওয়া সম্ভব। এ দিনই রাহুলের বাবা প্রশ্ন তুলেছেন, যে ছেলে বিয়ার পর্যন্ত খায় না, সে কী ভাবে মাদক নেবে? বেদী আরও এক ধাপ এগিয়ে বললেন, “রাহুল? ও তো আমিষ পর্যন্ত ছোঁয় না। সে নেবে মাদক!” |
মাত্র দু’দিনের ঝটিকা সফর। সরকারি ভাবে সিএবি-র বার্ষিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে আসা। কিন্তু সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পরামর্শ অনুযায়ী সিএবি চাইছে তাঁর সঙ্গে কোচিং সংক্রান্ত কথাবার্তাও সেরে রাখতে। সৌরভ নিজে এই প্রস্তাব এনেছেন শুনে অবাক লাগেনি? জবাবে ছোটখাটো অট্টহাস্যের পর বেদী বললেন, “খুব অবাক হয়েছিলাম। দেখুন, লর্ডসে সৌরভ জামা ওড়াচ্ছে এই ছবিটা আমি যেমন মানতে পারি না, তেমনই ও ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য যা করেছে তা অস্বীকারও করতে পারব না।”
সিএবি-র সঙ্গে কথাবার্তা কত দূর এগিয়েছে, বলতে রাজি নন। কিন্তু তাঁর হাত ধরে বাংলা থেকে ভবিষ্যতে কোনও বেদী পাওয়া সম্ভব? বাঁ হাতি স্পিনারের আকাল যখন দেশ জুড়েই চলছে। “বাংলায় প্রতিভা কেমন জানি না। কিন্তু বেদী বা প্রসন্ন হতে গেলে কঠিন পরিশ্রম দরকার। টি-টোয়েন্টি নামক তামাশার যুগে যেটা হারিয়ে যাচ্ছে,” সাফ মন্তব্য তাঁর। সঙ্গে উত্তপ্ত সংযোজন, “দেশে কিছু মাঝারি মানের স্পিনার তৈরি হচ্ছে। যেমন প্রজ্ঞান ওঝা। ও নিজেই জানে না কী করছে। আমাদের ক্যাপ্টেন ভরসা করত আমাদের উপর। বিপক্ষের কুড়িটা উইকেট তোলার ক্ষমতা রাখতাম। ধোনির সেই ভরসার জায়গা কোথায়? শুনে রাখুন, টেস্ট ক্রিকেটের এ ভাবে বারোটা বাজলে বেদীরা আর আসবে না।”
বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য দুর্নাম তাঁর বরাবরের। এ দিনও মুরলী-আজমলকে ‘চাকার’ বলতে দু’বার ভাবলেন না। তবে বেদী মনে করেন, ভারত-পাক সিরিজ শুরু হয়ে ভালই হয়েছে। “গাওস্কর অন্য রকম ভাবতেই পারে। কিন্তু দু’দেশের ব্যবসা যখন চলছে, কূটনৈতিক সম্পর্ক যখন আছে, তখন ক্রিকেট খেলতে সমস্যা কোথায়? বরং ধোনিদের ক্লান্তির ভয় আমি পাচ্ছি। আগে তো প্রচুর সিরিজ আছে,” বলছিলেন তিনি।
ধোনিদের প্রসঙ্গের ফাঁকে ঘুরেফিরে আসে কলকাতা নিয়ে জমে থাকা আবেগ। ‘কলকাতা’ নয়, ‘ক্যালকাটা’-ই তাঁর বেশি পছন্দের। বহুদিন পর শহরে এসেও ভুলতে পারেননি টেস্ট ম্যাচের সময় ইডেনের উত্তুঙ্গ আবেগ। আর বাংলায় এলে তাঁর কোচিং-মডেল কী হবে? ’৯০-এর বহু সমালোচিত সেই হাড়ভাঙা খাটুনির মডেল? “আবার কী? ভারতীয় টিমের কোচ থাকার সময় যা করেছি, এখনও তাই করব। খাটুনির কোনও বিকল্প আছে নাকি? কথাতেই তো আছে নো পেইন, নো গেইন।” |