লম্বায় বড়জোড় ২০ ইঞ্চি। ওজন খুব বেশি হলে ৪০০ গ্রাম। অথচ চোরাশিকারের বাজারে গন্ডারের থেকেও মহার্ঘ্য এই ছোট্ট সরীসৃপ।
অর্থের লোভে এ বার গন্ডার নয়, তার চেয়ে অনেকগুণ ছোট, টোকে গেকো শিকারে মেতে উঠেছে উত্তর-পূর্বের গ্রামবাসীরা। মণিপুরের গ্রামগুলিতেই টোকে গেকো শিকার চলছে। মায়ানমার হয়ে চিনে পাড়ি দিচ্ছে গেকোর দেহ। দাম শুনলে চমকে উঠতে হয়। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে একটি গন্ডার মেরে তার খড়্গ পাচার করে মেলে ২০ লক্ষ টাকা। সেখানে টিকটিকি সদৃশ একটি গেকো মারলে ২০ লক্ষ টাকা অবধি মিলতে পারে।
চিনাদের বিশ্বাস, সরীসৃপ প্রজাতির এই টোকে গেকো থেকে এডস ও ক্যান্সারের ওষুধ মেলে। সেই বিশ্বাসই নিশাচর, টিকটিকিসদৃশ এই প্রাণীদের ক্ষেত্রে কাল হয়েছে। আগে উত্তর-পূর্ব ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ফিলিপিন্স ও পশ্চিম নিউ গিনিতে টোকে গেকো পাওয়া যেত। |
এই সেই টোকে গেকো। টিকটিকি সদৃশ এই প্রাণীটিকে বিক্রি করলে
মিলতে পারে ২০ লক্ষ টাকা। ছবি: উজ্জ্বল দেব |
শিকারিদের পাল্লায় পড়ে ফিলিপিন্স ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় টোকে গেকো এখন লুপ্তপ্রায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরুষ টোকে গেকো ১১ থেকে ২০ ইঞ্চি অবধি লম্বা হয়। স্ত্রী টোকে গেকোর দৈর্ঘ্য ৭ থেকে ১৯ ইঞ্চি। এদের গড় ওজন হয় ১৫০ থেকে ৪০০ গ্রাম। দেখতে সাধারণ টিকটিকির জাতভাই হলেও নীলাভ দেহে হলুদ বা লাল বুটি ও চেরা বড় চোখ তাদের বিশেষত্ব। উত্তর-পূর্বে টোকে গেকো মিললেও চট করে তা চোখে পড়ে না।
মণিপুরের পার্বত্য এলাকায় টোকে গেকোর দেখা মেলে। সম্প্রতি বনবিভাগ ও পুলিশ জানতে পেরেছে, রাজ্যে বিদেশি দালালরা বড় আকারের টোকে গেকোর সন্ধানে ঘুরছে। ১৪ ইঞ্চি লম্বা ও ২০০ গ্রামের বেশি ওজনের টোকে গেকো ধরে দিতে পারলে প্রচুর টাকা দেওয়া হচ্ছে। মণিপুরের পাহাড়ে ছোট টোকে গেকো প্রচুর দেখা গেলেও বড়দের দেখা মেলে কম। তাই গ্রামবাসীরা টাকার লোভে দুর্গম অরণ্যে পাড়ি দিচ্ছেন।
শিকারিদের দৌরাত্মে টোকে গেকো ফিলিপিন্সে বিরল হয়ে ওঠায় সে দেশে এই সরীসৃপ হত্যা, চালান, সংগ্রহ করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ধরা পড়লে ১২ বছর অবধি কারাদণ্ড ও মোটা জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে ভারতে টোকে গেকো হত্যার পরিমাণ কতটা, তা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য নেই। এমনিতে এই প্রজাতিটি আইইউসিএন-এর তালিকায় বিপন্ন তালিকাভুক্তও নয়। কিন্তু পরিবেশপ্রেমীদের আশঙ্কা, সরকার যতদিনে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হবে, ততদিনে মণিপুরে এই প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। |