অসম জুড়ে বিক্ষোভ, চিঠি মনমোহনকে
প্রীতমের খুনিদের হদিস পেল পুলিশ
প্রীতম হত্যাকাণ্ডের কিনারার পথে বিহার পুলিশ। অন্তত তদন্ত এখনও পর্যন্ত যে পথে এগোচ্ছে. তাতে সেই
প্রীতম ভট্টাচার্য
ইঙ্গিতই মিলছে বলে বিহারের রেল পুলিশের কর্তাদের দাবি। ইতিমধ্যেই এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তল্লাশি চলছে আরও ৫ জনের খোঁজে। এরই পাশাপাশি, শিলচরের ছেলে প্রীতম ভট্টাচার্যের হত্যার তদন্তভার সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার দাবি অসম জুড়ে ক্রমশ জোরদার হয়ে উঠছে। বহু দিন পর প্রীতমের নৃশংস হত্যাকাণ্ড বরাক ও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাকে জোটবদ্ধ করেছে।
গত ৯ জুলাই গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাল ছাত্র, পদার্থবিদ্যার স্নাতকোত্তর প্রীতম ভট্টাচার্য জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি-র জন্য নাম নথিভুক্ত করতে অসম-অবধ এক্সপ্রেসে দিল্লি যাচ্ছিলেন। তাঁর কাকা রামমোহন ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, প্রীতম ফোনে তাঁদের বলেন, এনজেপি স্টেশন থেকে কামরায় ওঠে চার যুবক। তারা যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছিল। ট্রেনটি নওগাছিয়ায় পৌঁছনোর পরেই ওদের মধ্যে দু’জন প্রীতমের ব্যাগটি নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। সেই ব্যাগে ছিল প্রীতমের মার্কশিট, ক্যামেরা, ল্যাপটপ ও জামাকাপড়। প্রীতম তাদের বাধা দিলেও ব্যাগটি নিয়ে তারা পালিয়ে যায়। এর পরেই প্রীতম ট্রেন থেকে নেমে তাদের পিছু নেওয়ার চেষ্টা করেন। সামনে এক জন পুলিশকে পেয়ে বাকি দুই যুবককে দেখিয়ে বলেন, এদের লোকেরা তাঁর ব্যাগ নিয়ে পালিয়েছে। ওই পুলিশ প্রীতমের কথায় আমল দেয়নি।
এর মধ্যে ট্রেনটি ছেড়ে দিলে প্রীতম তাতে উঠতে পারেননি। প্রীতমের কাকার কথায়, দুপুর দেড়টা নাগাদ প্রীতম ওই স্টেশনে দাঁড়িয়ে বাড়িতে ফোন করে মা উৎপলা ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর বাবার সঙ্গেও কথা হয়। তাঁদের সব ঘটনা জানান। ওর মা প্রীতমকে বলেন, “তুই উল্টো দিকের ট্রেন ধরে কাটিহারে চলে আয়। তার পর সেখান থেকে কোনও ট্রেন ধরে দিল্লি যা। ওখানে বেশি ক্ষণ থাকার দরকার নেই।” রামমোহনবাবু জানান, “এর পর বেলা তিনটে নাগাদ ফোন করে দেখা যায় প্রীতমের ফোনটি বন্ধ। ব্যস্ত ভেবে তখন আমরা আর মাথা ঘামাইনি। পরের দিনও ওর সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পেরে দিল্লিতে যে হোটেলে ওর ওঠার কথা ছিল সেখানে ফোন করি। হোটেলে না পৌঁছনোয় আমরা নড়েচড়ে বসি।” এর পর প্রীতমের কাকা কাটিহারে আসেন, পটনা যান। পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। দু’দিন পর প্রীতমের মৃতদেহ পাওয়া যায় নওগাছিয়া স্টেশনের কাছেই।
প্রীতম হত্যার প্রতিবাদে শিলচরের রাস্তায় নাগরিক মিছিল।
এই হত্যাকাণ্ড ফের বিহারের রেলযাত্রা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। প্রীতমের পরিবারের পক্ষ থেকে বিহারে পুলিশ-অপরাধী আঁতাঁতের অভিযোগও আনা হয়েছে। বিহার পুলিশের এক সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার প্রকাশ্যে এই নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও বিষয়টি নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। পুরো ঘটনার কিনারা করতে পুলিশের উপর তিনি বাড়তি চাপও দিয়েছেন। এবং নীতীশ কুমারের হস্তক্ষেপে নড়েচড়ে বসেছে বিহার পুলিশ।
গত কাল রাতে কাটিহারে রামকৃষ্ণ নামে ট্রেনের এক ভেন্ডারকে পুলিশ গ্রেফতার করে। সে হকারি করার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাগ সরানোর কাজও করত। ভোজপুরের এক মুখিয়ার ব্যাগ সরানোর সময় রেল পুলিশের হাতে ওই দুষ্কৃতী ধরা পড়ে। রামকৃষ্ণের গ্রেফতারির খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পটনা থেকে এডিজি-রেল পি এন রায় কাটিহারে পৌঁছে গিয়েছেন। সেখানে রয়েছেন রেল পুলিশের অন্য অফিসাররাও। আজ সারা দিন রামকৃষ্ণকে দফায় দফায় জেরা করেন তাঁরা। নওগাছিয়ায় যেখানে প্রীতমের দেহ পাওয়া গিয়েছে, সেখানেও রামকৃষ্ণকে নিয়ে যান তাঁরা। এডিজি-রেল জানিয়েছেন, “রামকৃষ্ণকে জেরা করে পুলিশ বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এর থেকে বেশি আমরা এখনই বলতে পারছি না।” তবে রেল পুলিশেরই অন্য সূত্রে জানা গিয়েছে, মবলত খগাড়িয়ার বাসিন্দা রামকৃষ্ণ রেলে ভেন্ডার বা হকারের কাজ করত। ব্যাগ-লিফটারদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ ছিল। তাদের হয়ে কাজও করত। পুলিশি জেরায় সে জানিয়েছে, প্রীতমের ব্যাগ যারা তুলে নেয়, সেই দলে চার-পাঁচ জন ছিল। রামকৃষ্ণ মূলত ট্রেনে প্রীতমের উপর নজর রাখার দায়িত্বে ছিল। কিন্তু তাঁর ব্যাগ নিয়ে গ্যাংটি নওগাছিয়ায় নেমে যাওয়ার পর প্রীতম যে ওই ভাবে নেমে এসে তাদের তাড়া করবে, সে কথা তারা ভাবেনি। রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়েই দুষ্কৃতীরা প্রীতমকে খুন করে। দলের অন্যদের নামও রামকৃষ্ণ পুলিশকে জানিয়েছে। পুলিশ বাকিদের খোঁজে ব্যাপক তল্লাশি শুরু করেছে।
এ দিকে, প্রীতম হত্যার তদন্তের ভার সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার দাবিতে আজ অসম জুড়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে। বরাক ও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাকে জোটবদ্ধ করেছে প্রীতমের মৃত্যু। অসমের সব ক’টি জেলায় আজ বিক্ষোভ দেখায় অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু)। মালিগাঁওয়ে উত্তর-পূর্ব রেলের সদর দফতরের সামনে তারা বিক্ষোভ দেখায়। রেলমন্ত্রী মুকুল রায়ের কুশপুতুলও পোড়ানো হয়। শিলচরে প্রীতমের বন্ধু-বান্ধবরা তৈরি করেছে একটি মঞ্চ। নাম ‘জাস্টিস ফর প্রীতম’। শিলচরের নাগরিকরা এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে তাঁর দফতরে চিঠি পাঠাচ্ছেন। প্রতিবাদী মঞ্চ আগামী সোমবার বেলা ১২টায় বরাক উপত্যকায় দু’মিনিট নীরবতা পালনের ডাক দিয়েছে। সিবিআই তদন্তের দাবিতে শুরু করা হবে স্বাক্ষর অভিযান। প্রীতমের বাবা, শিলচর মহিলা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ শঙ্কর ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, “প্রীতম ফিরবে না। কিন্তু প্রীতমের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে ভবিষ্যতে না হয় তার জন্য রেলমন্ত্রীকে একটি চিঠি লিখেছি। ট্রেনে যাত্রীদের নিরাপত্তা চেয়েছি।”

—নিজস্ব চিত্র


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.