অচলাবস্থা কাটতে চলেছে এয়ার ইন্ডিয়ায়।
দীর্ঘদিনের ছুটিতে চলে যাওয়া পাইলটরা গত দু’তিন দিন ধরে একে একে কাজে যোগ দিতে শুরু করেছেন। বিমানসংস্থা সূত্রের খবর, যাঁরা যোগ দিচ্ছেন, তাঁদের আবার বিমান চালানোর ক্লাস করতে হবে। সাত দিন সেই ক্লাস করার পর বিমানে প্রশিক্ষক-পাইলটের পাশে বসে আরও সাত দিন ওড়ার প্রশিক্ষণ নিতে হবে। সেই পর্ব মিটলে তাঁদের নতুন করে ডাক্তারি পরীক্ষা হবে। এত সবের পরেই তাঁরা ফের যাত্রী-বিমান চালানোর দায়িত্ব পাবেন। শনিবার রাতে এয়ার ইন্ডিয়ার এক কর্তা বলেন, “পাইলটরা এখন কাজে যোগ দিতে শুরু করলেও আমাদের উড়ানসূচি স্বাভাবিক হতে এখনও মাস দুয়েক লেগে যাবে।”
সংস্থা সূত্রের খবর, বিক্ষুব্ধ ৪৫৩ জন পাইলটের মধ্যে শনিবার রাত পর্যন্ত প্রায় ১৫০ জন কাজে যোগ দিয়েছেন। আগামী সপ্তাহে আরও প্রায় ২০০ জন যোগ দিতে চলেছেন। এই ৪৫৩ জনের মধ্যেই ৯৯ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। সেই ৯৯ জনের মধ্যে আবার ৪০ জন চিঠি দিয়ে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন, তাঁরা কাজে ফিরতে চান। বাকি ৫৯ জন রবিবারই চিঠি পাঠাতে চলেছেন বলে এক পাইলট জানিয়েছেন। এয়ার ইন্ডিয়ার যে পাইলটরা আন্তর্জাতিক উড়ান চালাতেন, এত দিন তাঁরা ‘ছুটি’ নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিলেন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তাঁদের দাবি, পূর্বতন ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের পাইলটরাও আন্তর্জাতিক রুটে বোয়িং ৭৮৭ চালাতে শুরু করলে তাঁদের পেশাগত জীবনে ক্ষতি হবে। কারণ, পূর্বতন এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলটদের সঙ্গে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের পাইলটদেরও সিঙ্গাপুরে বোয়িং ৭৮৭ চালানোর প্রশিক্ষণ নিতে পাঠানো হয়েছিল। এরই প্রতিবাদে ৭ মে থেকে গণছুটি নিয়ে বসে যান ৪৫৩ জন পাইলট। দীর্ঘ আইনি টানাপোড়েনের পর শেষ পর্যন্ত আদালত দু’পক্ষকে বৈঠক করে সমস্যা মেটাতে বলে। চাকরিতে যোগ দিতে চান পাইলটেরা। তবে তাঁদের শেষ শর্ত ছিল, বরখাস্ত হওয়া পাইলটদেরও কাজে ফেরাতে হবে।
শনিবার মুম্বই থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার এক সিনিয়র পাইলট বলেন, “আদালতের নির্দেশ পেয়ে সম্প্রতি কর্তৃপক্ষ পাইলটদের ফোন এবং এসএমএস পাঠাতে শুরু করেছেন। অনেককে ই-মেলও করা হয়েছে। আমিও ওঁদের বার্তা পেয়ে গত কাল দেখা করতে যাই। সংস্থার চিকিৎসক ‘নিয়মমাফিক’ পরীক্ষা করে জানিয়ে দেন আমি কাজে যোগ দিতে পারব। এ বার আমাকে ওই ক্লাস করতে হবে।” তবে, কাজে যোগ দেওয়ার সময়ে প্রধানত তিনটি শর্ত আরোপ করেছেন কর্তৃপক্ষ। এক, এ বার থেকে আর ইউনিয়ন করা যাবে না। দুই, ধর্মঘট করা যাবে না। তিন, দিল্লি হাইকোর্টে করা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এখানেই একটু উষ্মা রয়েছে পাইলটদের। তাঁরা বলছেন, হাইকোর্ট যখন কর্তৃপক্ষকে তাঁদের ফিরিয়ে নিতে বলেছিল, তখন এ সব শর্তের কথা আসেনি।
পাইলটদের কাজে ফেরানো নিয়ে একটি তিন সদস্যের কমিটিও গড়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। সংস্থার মুখপাত্র জানিয়েছেন, বরখাস্ত হওয়া যে পাইলটরা ফের কাজে যোগ দিতে চেয়েছেন, তাঁদের অনেককেই কমিটি দিল্লিতে ডেকেছিল। কিন্তু গত শুক্রবার রাত পর্যন্ত মাত্র তিন জন হাজির হন। সংস্থার সিংহভাগ পাইলট যে হেতু মুম্বইয়ে থাকেন, তাই এ বার মুম্বইয়েই কমিটির বৈঠক হবে বলে ঠিক হয়েছে। সংস্থার এক কর্তার কথায়, “যাঁদের বরখাস্ত করা হয়েছে, তাঁদের প্রত্যেকের বিষয়টি আলাদা ভাবে বিবেচনা করে তার পর চাকরিতে বহাল করা হবে।” পাইলটদের কিন্তু পাল্টা দাবি, কোনও এক জনকেও যদি বাদ দেওয়া হয়, তা হলে আবার তাঁরা আদালতের শরণাপন্ন হবেন। |