অবশেষে লক আউটের পথেই হাঁটল মানেসরের মারুতি সুজুকি কারখানা। গত কালই সংস্থার চিফ অপারেটিং অফিসার এস ওয়াই সিদ্দিকি এই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। আর আজ সাংবাদিক বৈঠকে সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর শিনজো নাকানিশিকে পাশে বসিয়ে মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান আর সি ভার্গব বলেন, “মানেসরের কারখানায় লক আউট ঘোষণা করা হল। গাড়ি তৈরি করে কিছু টাকা রোজগারের চেয়ে সহকর্মীদের নিরাপত্তা আমার কাছে বেশি জরুরি।” এই সিদ্ধান্তকে সমর্থনই করেছে হরিয়ানা সরকার।
হাঙ্গামার জেরে গত বুধবার থেকেই উৎপাদন বন্ধ রয়েছে এখানে। তবে ভার্গব এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন, কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার প্রশ্ন নেই। ভিন্ রাজ্যে তা সরিয়েও নিয়ে যাওয়া হবে না। গত বুধবার মালিক-শ্রমিক পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে আগুনে পুড়ে মারা যান এই কারখানার জেনারেল ম্যানেজার (মানব সম্পদ) অবনীশকুমার দেব। জখম হন প্রায় ১০০ জন। খবর রটেছিল, এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মানেসরের কারখানাটি তাঁর রাজ্যে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু সেই জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে ভার্গব বলেন, “কারখানা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার খবর ভিত্তিহীন। হরিয়ানার শিল্পায়নের প্রতীক হল এই মারুতি।” |
সাংবাদিক বৈঠকে মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়ার ম্যানেজিং ডিরেক্টর শিনজো নাকানিশি।
পাশে চেয়ারম্যান আর সি ভার্গব। নয়াদিল্লিতে রয়টার্সের তোলা ছবি। |
কারখানা না সরানো হলেও ফের কবে উৎপাদন শুরু হবে সেই ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি ভার্গব। তিনি জানান, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং কর্মীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এখানে উৎপাদন শুরু করা সম্ভব নয়। মারুতির লক আউটকে স্বাগত জানিয়ে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী শিবচরণলাল শর্মা বলেন, “শীঘ্রই শিনজো নাকানিশির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিংহ হুডা।”
কেন্দ্রীয় কর্পোরেট মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলির মতে, মানেসর কারখানার হিংসাত্মক ঘটনা দেশের শিল্পের পরিবেশ সম্পর্কে বিশ্বের কাছে ‘খুব ভুল বার্তা’ পাঠাল। মারুতি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, পরিকল্পনা করে এই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এবং এর পিছনে বাইরের হাত রয়েছে। একই কথা বলেছেন হরিয়ানার শিল্পমন্ত্রী রণদীপ সিংহ সুরজওয়ালাও। তাঁর কথায়, “রাজ্যে শিল্পোন্নয়নের পরিবেশের ক্ষতি করতে পরিকল্পনামাফিক এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আমরাও সে রকম কিছু ইঙ্গিত পেয়েছি।” এর পিছনে কি কোনও রাজনৈতিক শক্তি রয়েছে? শিল্পমন্ত্রীর জবাব, “সেটা বলার সময় এখনও আসেনি।” তবে মানেসরের ঘটনার আঁচ পড়েছে রাজধানীতেও। মারুতি শ্রমিকদের সমর্থনে আজ দিল্লির পথে নামে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। সেখানে হরিয়ানা ভবনের সামনে মারুতি-সুজুকি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরা।
হরিয়ানার শ্রমমন্ত্রী শিবচরণলালও এ দিন ‘বাইরের মদত’ থাকার কথা বলেছেন। তবে তাঁর বক্তব্য, “হিংসায় জড়িয়ে শ্রমিকরা ঠিক করেননি। কারণ নির্দিষ্ট আট ঘণ্টা কাজের জন্য তাঁরা যথেষ্ট ভাল মজুরি পেতেন। সেই সঙ্গে নানা সুযোগ-সুবিধাও।” তবে শর্মা এটাও জানিয়েছেন যে, দু-তিন মাস ধরে শ্রমিকরা মালিক পক্ষের কাছে মজুরি বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। যদিও হরিয়ানার শ্রম দফতর সূত্রের খবর, প্রতি মাসে শ্রমিকদের সঙ্গে যে বৈঠক হয় সেখানে কিন্তু তাঁরা কোনও অসন্তোষ জানাননি। পরস্পরবিরোধী এই মন্তব্যে স্বাভাবিক ভাবেই গোটা বিষয়টি নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে ভার্গব হরিয়ানা সরকারকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তদন্ত শেষ করার অনুরোধও জানান। সংস্থার তরফেও তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। |