২১-এর ঢেউ |
সিঙ্গুর-জমি নিয়ে ফের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
নিজস্ব সংবাদদাতা
|
আদালতে মামলার ফয়সালা হলেই সিঙ্গুরের জমি কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে শনিবার ধর্মতলার সমাবেশে আরও একবার ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শহিদ সমাবেশ মঞ্চে মমতা বলেন, “সিঙ্গুরের জমি সরকার নিয়ে নিয়েছে। আদালতে মামলার নিষ্পত্তি হলেই ওই জমি ফিরিয়ে দেব।” আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের আগে সিঙ্গুর নিয়ে মমতার ‘উদ্বেগের’ যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলেই মনে করেন তৃণমূলের নেতৃত্বের একাংশ। সেই কারণেই মমতা বারবার বিষয়টির উপর জোর দিচ্ছেন বলে তাঁদের অভিমত। প্রসঙ্গত, এদিন শহিদ সমাবেশের মঞ্চে সিঙ্গুরে নিহত তাপসী মালিক, রাজকুমার ভুলের পরিবারের লোকজনও ছিলেন। বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন সিঙ্গুরের কৃষিজমি আন্দোলন হাতিয়ার করেই তাঁর ‘রাজনৈতিক উত্থান’। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতেও জমি ফেরতের বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন মমতা। সরকারে আসার পর মমতার মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকের প্রথম সিদ্ধান্তই ছিল সিঙ্গুরের জমি ফেরানোর। জমি ফেরত দিতে সিঙ্গুর-আইনও তৈরি হয়। কিন্তু সম্প্রতি সেই আইন ‘অসাংবিধানিক ও অবৈধ’ বলে রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্য যে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু আইনি জটে এখনও আটকে ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকদের ভাগ্য। বিষয়টি এখন আদালতের বিচারাধীন। জমি ফেরত পেতে সরকারের তরফে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি তৃণমূল কৃষিজমি রক্ষা কমিটির নেতৃত্বে আন্দোলনেও নেমেছে। মমতা নিজেও সিঙ্গুর নিয়ে ফের আন্দোলনে যেতে চান। আন্দোলন-ভাবনার পাশাপাশি সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকদের জমি ফেরত দিতে তাঁর সরকারও যে ‘দায়বদ্ধ’, তা বোঝাতেই এ দিন তাঁর এই ঘোষণা। সরকারে এসে এখনও জমি ফেরাতে না পারলেও চাষিদের পাশেই যে তিনি রয়েছেন, তা আরও একবার মনে করিয়ে দিয়ে মমতা বলেন, “সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষি, খেতমজুর, বর্গাদারদের দু’হাজার টাকা করে অনুদান দিচ্ছি। অনিচ্ছুক পরিবার পিছু ৪ কিলোগ্রাম করে চাল দিচ্ছি।”
|
হরিশ্চন্দ্র |
ধোপদুরস্ত হয়ে মিটিংয়ে যাওয়ার ভাবনাটাই তাঁর কাল হল। বৌবাজারের কাছে রাস্তার কলে গামছা পরে আশ মিটিয়ে স্নান সারলেন পুরুলিয়ার গৌতম দাস। এর পরেই বিপত্তিটা টের পেলেন তিনি। কলের পাশে ছেড়ে রাখা প্যান্ট-জামার নামগন্ধ নেই। কটিমাত্র বস্ত্রাবৃত বিশাল বপুর যুবক পুলিশের সামনে কেঁদে পড়লেন: “স্যার, এখন আমি কী করি?” রাস্তার ওই কলেই সদ্য স্নান সেরে ওঠা এক প্রৌঢ়ের টিপ্পনি: “দানবীর হরিশ্চন্দ্রের গল্প শোনোনি! তোমার তো একদিন, উনি রোজই চান করে পরনের পোশাক গরিব-দুঃখীকে বিলিয়ে দিতেন।”
|
শাস্তির আশায় |
‘‘গুলি চালিয়েছিলেন যাঁরা, তাঁরা শাস্তি পেলে ১৩ শহিদের আত্মার শান্তি হবে”, সভামঞ্চে বললেন সৌগত রায়। ওই ১৩ শহিদের স্মৃতিতেই ২১ জুলাইয়ের সভা। সৌগতবাবু বলেন, “ওই অভিযানে পুলিশের গুলিতে ১৩ জন প্রাণ হারান। মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মমতা ওই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গড়েছেন। কমিশন অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের শাস্তির সুপারিশ করলে শহিদদের আত্মার শান্তি হবে।” |
|
গাছ থেকেই ফ্রেমবন্দি সমাবেশ। —নিজস্ব চিত্র |
|
ফ্রেমবন্দি |
বড়-সড় চিনে মোবাইল হাতে নানা ভঙ্গিতে নাগাড়ে ছবি তুলছেন চার জন যুবক। কখনও ক্লোজ-আপ, কখনও লংশটে ভিড়ের ছবি। মঞ্চে পুরোদমে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা চলছে। কিন্তু এস এন ব্যানার্জি রোডের মুখ ছেড়ে ভিড় ঠেলে এগোনোর চেষ্টাই করছেন না কেউ। চারমূর্তির বাড়ি বর্ধমান। মিরাজুল হক মোল্লা বললেন, “সব ছবি প্রিন্ট করে পার্টি অফিসে টাঙানো হবে। দাদারা বলে দিয়েছেন, বক্তৃতা শোনা নয়, কলকাতায় এটাই আমাদের কাজ।” এসপ্ল্যানেড ইস্টের দিকের বড়-বড় গাছ বা আশপাশের মেজ-সেজ বাড়ির ছাদেও দেখা গেল সখের ফটোগ্রাফারদের ছড়াছড়ি।
|
জোড়া-তালি |
মঞ্চের সামনে ভিড়ের জন্য জায়গা করতে খুলে নেওয়া হয় রাজপথের ডিভাইডার। জওহরলাল নেহরু রোড ও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের সংযোগে সেখানে ভিড় উপচে পড়েছিল। বিকেলে সভাস্থল খালি হতেই পুলিশের তত্ত্বাবদানে হাজির ঠিকাদার-বাহিনী। জেনারেটর ও ঝালাই মেশিনের একটানা ঘড়ঘড়ে শুরু হল রাস্তার সারাই। ফিরল ডিভাইডার। ভিড় ঠেকাতে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট ঘিরে রাখা গেটও হটল নিমেষে। কলকাতা ফিরল কলকাতাতেই। |
|