পুজোর ছক মেনেই একুশের সমাবেশের ভিড় সামলাল পুলিশ
পুজোয় যানজটের চাপ সামলানোর কৃতিত্ব রয়েছে কলকাতা পুলিশের। এ বার মিছিল-মিটিংয়ে শহরের গতি স্বাভাবিক রাখার দৃষ্টান্তও গড়ল তাঁরা। পুলিশের হিসেবে, এ দিন সমাবেশে ৫ লক্ষ লোকের ভিড় হয়েছিল। সকাল ন’টা থেকেই ধর্মতলার চিলতে পরিসরে কার্যত পা ফেলার জায়গা ছিল না। পরে আরও ভিড় বাড়তে থাকে।
লালবাজারের কর্তারা বলছেন, গত বছর ব্রিগেডে ২১ জুলাইয়ের সমাবেশেও আগে থেকে পরিকল্পনা করে এগোনো হয়েছিল। কিন্তু এ বার শহরের প্রাণকেন্দ্রে সমাবেশ হওয়ার ফলে চাপ ছিল অনেক বেশি। অভিজ্ঞ অফিসারেরা বলছেন, “২০১০ সালে যান নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা ঠিক মতো না হওয়ার কারণেই ভুগতে হয়েছিল শহরবাসীকে।”
এ দিনের সমাবেশ নিয়ে একাধিক সমস্যা ছিল পুলিশের সামনে। ধর্মতলার অপরিসর এলাকায় ভিড় সামাল দেওয়া এবং মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা বজায় রাখা। একই সঙ্গে মিছিল এড়িয়ে শহরের গতি স্বাভাবিক রাখাটাও ছিল চ্যালেঞ্জ। ২০১০ সালের ২১ জুলাই সমাবেশে ভিড়ের চাপে মঞ্চের একাংশ ভেঙে গিয়েছিল। তা মাথায় রেখেছিলেন পুলিশকর্তারা। লালবাজার জানিয়েছে, মঞ্চের আগে-পিছনে ব্যারিকেড দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ডোরিনা ক্রসিং, মেট্রো চ্যানেল, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ে জায়ান্ট স্ক্রিন লাগিয়ে বক্তৃতা শোনার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। পুলিশ বলছে, সেটা মাথায় রেখেই এ দিনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
ছাতা মাথা সভার পথে। শনিবার হাওড়া ব্রিজে। ছবি: প্রদীপ আদক
পুলিশ সূত্রের খবর, সকাল দশটার পর থেকে ধর্মতলামুখী মিছিলের সংখ্যা এবং আয়তন, দুই-ই বাড়তে থাকে। শহরতলি এবং জেলাগুলি থেকে সমর্থকেরা ট্রেনে চেপে শিয়ালদহ এবং হাওড়া স্টেশনে এসে পৌঁছন। সেখান থেকে মিছিল করে সমাবেশের দিকে আসতে থাকেন তাঁরা। বাসে, মাটাডোরে চেপেও বহু লোক এ দিন সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।
পুলিশকর্তারা বলছেন, এ বার শহরের কেন্দ্রে ওই বিশাল মানুষের চাপ সামলাতে আগে থেকেই নির্দিষ্ট ছকে এগিয়েছিল পুলিশ। যার ফলেই এ দিন খুব বেশি যানজটে ভুগতে হয়নি সাধারণ মানুষকে। তবে অনেকে মনে করছেন, শনিবার হওয়ায় এ দিন শহরে নিত্যযাত্রীদের ভিড় কিছুটা হলেও কম ছিল। রাস্তার উপরে যানজট এড়াতে অনেকেই মেট্রো বেছে নিয়েছেন। মেট্রোর হিসেবে, এ দিন সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লক্ষ যাত্রী মেট্রোয় যাতায়াত করেছেন।
শিয়ালদহ স্টেশন এবং এন্টালির সিআইটি রোড থেকে মিছিলগুলি এজেসি বসু রোড, এস এন ব্যানার্জি রোড হয়ে ধর্মতলা যাওয়ার কারণে ওই রাস্তায় যানবাহন থমকে গিয়েছিল। বেলা বারোটার পর থেকে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের গাড়িগুলিও থমকে যায়। তবে মধ্য কলকাতার একটি অংশ বাদ দিয়ে শহরের অন্যান্য জায়গায় এ দিন যান চলাচলে খুব বেশি সমস্যা হয়নি হয়ে পুলিশ জানিয়েছে।
এ দিন হাওড়া স্টেশন থেকে মিছিল করেও প্রচুর তৃণমূল সমর্থক সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। রেল সূত্রের খবর, শুক্রবার রাত থেকেই বহু সমর্থক স্টেশনে এসে জড়ো হয়েছিলেন। শনিবার সকালে সেই সংখ্যা আরও বাড়তে শুরু করে। কিন্তু সেই মিছিলে হাওড়া
ব্রিজে যানজট হয়নি। রাস্তার বদলে এ দিন মিছিল গিয়েছে ব্রিজের ফুটপাথ ধরে। বিদ্যাসাগর সেতু দিয়ে আসা গাড়িগুলিও যানজটের মুখে পড়েনি।
পুলিশ সূত্রের খবর, পুজোর সময় যে ভাবে রাস্তা ফাঁকা রেখে বা পার্কিং লটে গাড়ি দাঁড় করানোর উপরে জোর দেওয়া হয়, এ দিনও অনেকটা সেই ছকেই কাজ করা হয়েছে। ছোট আয়তনের মিছিলগুলির জন্য বরাদ্দ ছিল ফুটপাথ। পাশাপাশি, সমাবেশমুখী জনতাও অনেক শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিল।
কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) দিলীপকুমার আদক বলেন, “এ দিনের শহর স্বাভাবিক রাখতে শুক্রবার রাত থেকেই পরিকল্পনামাফিক কাজ শুরু করা হয়েছিল। মিছিল গেলেও যানবাহন যাতে একেবারে আটকে না যায়, সে দিকে নজর ছিল। বিদ্যাসাগর সেতু দিয়ে আসা গাড়িগুলিকে আগে থেকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য হাওড়া কমিশনারেটের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল।” ট্র্যাফিক সূত্রের খবর, হাওড়ার মাইতিপাড়া এবং বিদ্যাসাগর সেতুর টোলপ্লাজা থেকে শহরে ঢোকা গাড়িগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল।
গত কয়েক বছরে সমাবেশে কলকাতার মানুষের নাকাল হওয়ার কারণে বারবারই সমালোচনার মুখে পড়েছে কলকাতা পুলিশ। প্রশ্ন উঠেছে, মিছিলের দিনে যানজট এড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েও। কিন্তু এ দিনের ব্যবস্থাপনা সেই পরিকল্পনার আঁচ দিতে পারবে বলেই মনে করছেন পুলিশের একাংশ।
তা হলে কি এর পর থেকে এই ‘মডেলেই’ এগোবে পুলিশ?
তা নিয়ে অবশ্য নিশ্চিত নন ট্র্যাফিককর্তারা। ডিসি (ট্র্যাফিক) বলছেন, “যানবাহনের গতিবিধি আঁচ করে ট্র্যাফিক পুলিশের পরিকল্পনা হয়। ভবিষ্যতের কোনও সমাবেশে কী অবস্থা থাকবে, তার উপরে নির্ভর করেই পরিকল্পনা তৈরি হবে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.