লক্ষাধিক মানুষ সঙ্কটে, জানালেন মানস
বন্যা পরিস্থিতি ঘুরে দেখলেন মুখ্যসচিব
ই মুহূর্তে রাজ্যের প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার মানুষ বন্যার ফলে সঙ্কটে পড়েছেন বলে দাবি করলেন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। শুক্রবার মহাকরণে তিনি জানান, তাঁদের মধ্যে ২০-২৫ হাজার মানুষই শিলিগুড়ি লাগোয়া চম্পাসারির। সেচমন্ত্রী জানিয়েছেন, সাতদিন ধরে রতুয়া ব্লকের দেবীপুর, হরিশ্চন্দ্রপুরে ফুলেশ্বর-মহানন্দায় ঘূর্ণাবর্ত হচ্ছে। নদীর জল বাঁধের নীচে ধাক্কা মেরে তিনটি স্পারের ক্ষতি করেছে। মন্ত্রীর কথায়, “সেচ দফতরের কর্মীরা দিন-রাত কাজ করছেন। সারারাত কাজের পর এ দিন ভোর ৫টায় চম্পাসারিতে মহানন্দার বাঁধ মেরামত করতে পেরেছেন সেচ দফতরের কর্মীরা। সাহায্য করেছে সেনা ও প্রশাসন। অবশ্য শুধু মেরামত করলেই হবে না, যে ভাবে জল ঢুকছে তাতে বাঁধ আরও ২ ফুট উঁচু করতে হবে। সেই কাজ শুরু হয়েছে।” এ দিন জলের তোড়ে ভেঙে যাওয়া বাঁধের কাজ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শেষ করা হবে বলে জানিয়ে দিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষ। শুক্রবার দুপুর ২টা নাগাদ মুখ্যসচিব শিলিগুড়ি লাগোয়া মিলন মোড়ে মহানন্দা নদীর ভেঙে যাওয়া বাঁধের কাজ পরিদর্শনে যান। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্য্যায়। মুখ্যসচিব দার্জিলিংয়ের জেলাশাসকের কাছে বাঁধের কাজের বর্তমান অবস্থা জেনে নেন। তিনি সেনাবাহিনীর অফিসারদেরও সঙ্গেও কথা বলেন। সেখান থেকে তাঁরা দার্জিলিঙে যান। মুখ্যসচিব বলেন, “যুদ্ধকালীন তপৎপরতায় অস্থায়ী বাঁধ তৈরির কাজ শেষ হবে। সেনাকর্মী, প্রশাসন এবং সেচ দফতরের কর্মীরা তৎপরতার সঙ্গে কাজ করছেন।
শিলিগুড়িতে মহানন্দার বাঁধ পরিদর্শনে মুখ্যসচিব। শুক্রবার কার্তিক দাসের তোলা ছবি।
বাঁধের উচ্চতা আরও বাড়াতে হবে। যে পরিমাণ কাজ হয়েছে তার থেকে আরও পাঁচ ফুট উঁচু করতে বলেছি। বর্ষার পরে সেখানেই স্থায়ী বাঁধ তৈরি করবে সেচ দফতর। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রত্যেকেই নির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণ পাবেন।” ভাঙা বাঁধের উপর নদীর দাঁড়িয়ে কোন পরিস্থিতিতে তা ভেঙে গিয়েছে তা নিয়েও জেলাশাসক ও সেচ দফতরের কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। সেচমন্ত্রী আরও বলেন, “মহানন্দা গতিপথ বদলে ফেলছে বলে সমস্যা জটিল হয়েছে। চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে ৮টি জেসিপি মেশিন দিয়ে নদীবক্ষে বালি-পাথর কেটে নদীকে গতিপথে ফেরানো যায়।” দক্ষিণবঙ্গে যেমন নদী থেকে বেআইনি ভাবে বালি তোলা হচ্ছে তেমনই উত্তরবঙ্গে নদীর পাড় থেকে বেআইনি ভাবে পাথর তুলে নেওয়াতেই নদীগুলি গতিপথ বদলাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মানসবাবু। তাঁর কথায়, “এটা আটকাতে আমরা বদ্ধপরিকার। মুখ্যমন্ত্রীও সেই নির্দেশই দিয়েছেন।” উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে বৃষ্টির পরিমাণে তারতম্যও সেচ দফতরকে ভাবিয়ে তুলেছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, মুখ্যসচিবের পরিদর্শনের কথা জেনে ব্লক প্রশাসনের তরফে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার একটি রিপোর্ট তৈরি করে এ দিন তা নিয়ে মিলন মোড়ে হাজির ছিলেন মাটিাগড়ার বিডিও বীরবিক্রম রাই। প্রশাসন সূত্রের খবর, চম্পাসারির মিলন মোড় সংলগ্ন এলাকা, মাটিগাড়ার দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে।
অস্থায়ী সেতু মেরামতি। কোচবিহারে তোর্সায়। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
এ দিন ওই এলাকায় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার তরফেও একটি ত্রাণ শিবির করে খাবার বিলি করা হয়। সেখানে যান মহিলা মোর্চার সভানেত্রী তথা বিমল গুরুঙ্গের স্ত্রী আশা দেবী। তিনি জানান, সমস্ত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে তাঁদের সংগঠনের তরফে সাহায্য করা হবে। শিলিগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান নান্টু পালও বেসরকারি উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে জামাকাপড় বিলি করার ব্যবস্থা করেন। দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “সমস্ত দিকে নজর রাখছি। বাঁধ মেরামতির সঙ্গে সঙ্গে দুর্গতদের প্রয়োজনীয়তাও দেখা হচ্ছে। সে হিসেবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” অন্য দিকে, নাগরাকাটা ব্লকের খয়েরকাটা গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগের সমস্যা মিটল। এ দিন সকালে বিন্নাগুড়ি সেনা ছাউনির বাস্তুকার ও সেনারা কুচি ডায়না নদীর ওপর সেতু তৈরী করে দেন। এই সেতু দিয়ে ভারী যানও চলাচল করতে পারবে। উল্লেখ্য গত সপ্তাহের শনিবার থেকেই খয়েরকাটার একমাত্র কাঠের সেতুটি জলের তোড়ে ভেঙে যায়। ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ করতে গত সোমবার থেকে এখানে কুনকি হাতি নামানো হয়। কিন্তু, সেনা জওয়ানরা ৭০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি অস্থায়ী ভাবে তৈরি করে দেন। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র, মালবাজারের মহকুমা শাসক দেবযানী ভট্টাচার্য সেনা জওয়ানদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.