দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা কোনও দিন সে অর্থে
আলোকবৃত্তে
আসেননি।
অথচ, তাঁরা
গোটা জীবন ধরে জেলার মনন এবং সাংস্কৃতিক
মানচিত্রকে
রঙিন করে তুলেছেন।
মাটি থেকে উঠে আসা সেই সব মানুষের কথা। |
মানুষ দু’জনের কাছে বৃক্ষরোপণ অর্থাৎ গাছ লাগানো কোনও ‘ধামাকা’ বা উৎসব নয়। নয় প্রচারে উঠে আসার কৌশল। বরং আড়ালে থেকে আসা-যাওয়ার পথের ধারে জায়গা নির্বাচন করে সেখানে গাছ লাগানোর কাজ করে চলেন। কারণ, এ ভাবে চারপাশটাকে সবুজ করে তোলাটা অনেক সহজ বলে মনে হয়েছে বর্ধমানের সমুদ্রগড় লাগোয়া শ্রীরামপুরের অজিত কুমার পোদ্দারের। পেটের তাগিদে নিত্যদিন কলকাতায় পা পড়ে তাঁর। অফিস পাড়ায় টেলিফোন এক্সচেঞ্জের কাছে নানা ধরনের পুরনো-নতুন বই নিয়ে তাঁর ফুটপাথের পসরা। সামান্য আয় থেকে কোনওমতে সংসারের গাড়িকে সচল রাখেন। আবার এই জগৎকে সবুজে ভরিয়ে দেওয়ার নেশায় সেখান থেকেই নানা ধরনের গাছের চারা, বীজ কেনার খোরাক জোগাড় করেন।
তবে বীজ সংগ্রহের উপায়ও অভিনব। অফিস পাড়ায় আঁধার নামে। আর এই আঁধারের অপেক্ষায় থাকেন অজিত। নিজের ব্যবসা গুটিয়ে ফল বিক্রেতাদের কাছ থেকে নিয়ে আসেন বিভিন্ন ফলের বীজ।
|
কী কী বীজ সংগ্রহ করেন?
“যা সহজেই পাওয়া যায়। মাটিতে ফেলে দিলে সবার অযত্নেই বেড়ে ওঠে। যেমন সবেদা, তেঁতুল, পেঁপে, আতা এই সব আর কি। কখনও কখনও বীজ কিনেও আনি। তবে অনেক দামি বীজ কিনতে পারি না। বন দফতর থেকেও সংগ্রহ করি।” কথা শেষ করেন মৃদুভাষী অজিত।
তবে এ কাজে তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করে চলেছেন নবদ্বীপের দেয়ালপাড়ার তরুণ শিবু দেবনাথ। ডেলি প্যাসেঞ্জারির সূত্রে দু’জনের আলাপচারিতার শুরু ট্রেনেই। কথায় কথায় জানা হয়ে গিয়েছিল দু’জনের নেশাই এক। বছর চল্লিশের শিবুর ভাষায়, “ঠিক করেছিলাম ফরাক্কা থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত নৌকা ভানা করে, নদীর নানা নির্জন ঘাটের কাছে বীজ ছড়াতে ছড়াতে যাব। কিন্তু তা করতে যে খরচের বহর তাতে ভেস্তে গেল পরিকল্পনা। এখন এ ভাবেই চলছে।” থামলেন কলকাতায় এক বেসরকারি সংস্থার হিসাবরক্ষক।
দু ’ই বৃক্ষপ্রেমীর কাছে জানা গেল, পরিবেশ সচেতনতাই তাঁদের এমন নেশা ধরিয়েছে। সহজে, কম খরচে ছাপোষা-গেরস্তও সমাজের কিছু কাজ করতে পারে সেটাই দেখাতে চেয়েছেন তাঁরা। দু’জনেই জানালেন, “মাসে বা সপ্তাহে ছুটির দিন দু’জন বা একজন ট্রেনে একবার চক্কর দিই। অবশ্য বীজের থলে তাকে সঙ্গে। নেমে পড়ি পছন্দমতো স্টেশনে। দেখে নিই ‘সে’ বেঁচে আছে তো! তা না হলে আবার দুটো বীজ ফেলে দিই। যখন দেখি তা থেকে চারা বেরিয়েছে, চারপাশটা একটু সাফ করে দিই। দেখে খুব আনন্দ হয়।”
ভদ্রেশ্বরে ‘ভ্রমণ আড্ডায়’ সকলে যখন দুই বৃক্ষপ্রেমীর খোঁজ করছেন, জানা গেল দু’জনে তখন গঙ্গার ধারে গাছতলায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিনে পয়সার বীজের সন্ধানে। |