মাঠের ঘাস বড় হয়েছে। প্রায় মাস খানেক ধরে তা কাটা হচ্ছে না। তাতে মাঠে খেলার পরিস্থিতি নেই। টাকা না মেলায় ঘাস কাটার যন্ত্র চালাতে তেল কিনতে পারছেন না কর্মীরা। গত জুন মাসের বেতনও হয়নি স্টেডিয়ামের কাজে যুক্ত ১২ জন কর্মীর। শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম কমিটির আয় ব্যায়ের হিসাবে নানা অসঙ্গতি দেখে নতুন কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র। জুন মাসের শেষের দিকে বৈঠক করে নতুন কমিটি গঠনও হয়েছে। তবে প্রথা মেনে এখনও অধিকাংশ সদস্যদের চিঠি পাঠিয়ে বিষয়টি জানানো হয়নি। বা নতুন কমিটির কোনও বৈঠক হয়নি। এই পরিস্থিতিতে কর্মীদের বেতন না-মেলা, মাঠের কাজের জন্য সরঞ্জাম কেনার টাকা না-মেলায় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
স্টেডিয়াম কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের তহবিল থেকেই কর্মীদের বেতন হয়ে থাকে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সেই তহবিল থেকে বেতনের টাকা তুলতে কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট ব্যক্তির ‘সই’ প্রয়োজন। পদাধিকার বলে স্টেডিয়াম কমিটির চেয়ারম্যান জেলাশাসক এবং সচিব মহকুমাশাসক। মহকুমাশাসকই ব্যাঙ্কের টাকা তোলার ক্ষেত্রে যাবতীয় ‘সই’ করবেন বলে ঠিক হয়েছে। প্রক্রিয়া মেনে মহকুমাশাসকের সইয়ের ‘নমুনা’ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে হয়। তা হলে পরবর্তীতে তিনি টাকা তোলার ক্ষেত্রে চেকে সই করতে পারবেন। শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক বৈভব শ্রীবাস্তব বলেন, “নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। ব্যাঙ্কের টাকা তোলার ক্ষেত্রে আমার ‘সই’ এর নমুনা ব্যাঙ্কে পাঠাতে হবে। ‘নমুনা সই’ করে দিয়েছি। দ্রুত তা ব্যাঙ্কে পাঠানো হবে। আশা করী শীঘ্রই কর্মীদের বেতন দেওয়া সম্ভব হবে। মাঠের পরিচর্যার দিকটিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।”
স্টেডিয়াম কমিটির একটি সূত্রই জানিয়েছে, এই মূহূর্তে স্টেডিয়ামে ১২ জন কর্মী রয়েছেন। তার মধ্যে ৪ জন মালি রয়েছেন। তাঁরা মূলত মাঠের পরিচর্যা করেন। মাঠের ঘাস কাটা, জল দেওয়া, কোথাও কোনও সমস্যা হলে তা দেখা তাঁদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। মোটর চালিত যে যন্ত্রের সাহায্যে মাঠর ঘাস কাটা হয় তা চালাতে পেট্রোল ডিজেল লাগে। প্রয়োজন মতো কর্তৃপক্ষ তেলের টাকা দেন। মালিরা ছাড়াও রয়েছেন ৩ জন সাফাই কর্মী, ১ জন পিওন। অফিস পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে এক মহিলা কর্মী, স্টেডিয়ামে থাকা সংগ্রহশালা দেখভালের জন্য ১ কর্মী এবং ১ জন বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি। তা ছাড়া অফিসের নথিপত্র দেখভালের কাজে রয়েছেন এক জন করণিক।
কেউ ২ হাজার টাকা, কেউ ৫ হাজার টাকা মাস মাইনেতে কাজ করেন। মাসে তাঁদের বেতন দিয়ে ৪২ হাজার টাকার মতো লাগে। মাসের প্রথম সপ্তাহেই সাধারণত কর্মীদের বেতন হয়। অথচ জুলাই মাস পার হতে চললেও এখনও তাদের জুন মাসের বেতন হয়নি বলে অভিযোগ। তাতে বিপাকে পড়েছেন কর্মীরা। সমস্যার কারণে তাদের অনেককেই ধারদেনা করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।
স্টেডিয়াম কমিটির সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে স্টেডিয়ামের আয়-ব্যয়ে নানা অসঙ্গতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। ক্রীড়া দফতরের নির্দেশে পুরো বিষয়টি মহকুমাশাসক, জেলশাসক তদন্ত করছেন। স্টেডিয়াম কমিটির নামে মোটা টাকা ‘ফিক্সড ডিপোজিট’ রয়েছে। অপর একটি ‘সেভিং অ্যাকাউন্ট’ রয়েছে। স্টেডিয়ামের হল ভাড়া, মেলার মাঠ ভাড়া-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে যে আয় হয় তা সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমা থাকে। কর্মীদের বেতন দেওয়ার জন্য পৃথক কোনও ‘অ্যাকাউন্ট’ নেই। ওই সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকেই দেওয়া হয়। অথচ আয়ের টাকা ঠিক মতো সেই অ্যাকাউন্টে জমা করা এবং ব্যায়ের হিসাবে অনেক ক্ষেত্রেই অনিয়ম রয়েছে বলে একাংশের অভিযোগ। সে কারণে পুরো বিষয়টি দেখে এগোতে চাইছে বর্তমান কর্তৃপক্ষ। সে কারণেই কর্মীদের বেতন দিতে দেরি হচ্ছে বলে অনেকের ধারণা। মহকুমাশাসক অবশ্য স্টেডিয়াম কমিটির অভ্যন্তরীণ এ সব ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি। স্টেডিয়ামের প্রতিষ্ঠার সময় থেকে কমিটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন যিনি সেই অজিত সরকার বলেন, “কর্মীদের বেতন হচ্ছে না এমনটা কখনও হয়নি। পরিচর্যার অভাবে মাঠ নষ্ট হচ্ছে। আগের সমস্ত হিসাবের নথি রয়েছে। কোনও অনিয়ম হয়নি। আর্থিক হিসেবে কোনও দুর্নীতি হয়েছে মনে হলে কেউ আইনের দ্বারস্থ হতেই পারেন। স্টেডিয়াম চত্বরে যাদের ঘর দেওয়া হয়েছে তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলে ছিলেন। যে সব সংস্থাকে ঘর দেওয়া হয়েছে তারা খেলাধূলা এবং সমাজসেবার সঙ্গেই যুক্ত।” |