|
|
|
|
জঙ্গি সন্দেহে ধৃতদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু |
|
লস্করের কাছে অস্ত্র
চালাতে শিখেছিল ইউনুস
নিজস্ব সংবাদদাতা • বনগাঁ |
|
জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবার সদস্য সন্দেহে ধৃত চার জনের বিরুদ্ধে মামলার শুনানি শুরু হল বনগাঁ মহকুমা আদালতে।
২০০৭ সালের ৪ এপ্রিল বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে ধরা পড়েছিল শেখ সামির ওরফে শেখ নঈম, মুজফ্ফর আহমেদ রাঠৌড়, শেখ আবদুল্লাহ এবং মহম্মদ ইউনুস। তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র-সহ ১২টি ধারায় মামলা দায়ের করে পুলিশ ও সিআইডি।
শুক্রবার বেলা দেড়টা নাগাদ বনগাঁ আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (ফাস্ট ট্র্যাক-২) অপরাজিতা ঘোষের এজলাসে তোলা হয় ওই চার জনকে। পুলিশের গাড়ি থেকে নামানোর পরে সশস্ত্র কম্যান্ডোরা আদালতকক্ষ পর্যন্ত ঘিরে নিয়ে আসে তাদের। এই মামলায় মোট ৪৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের কথা। এ দিন বিএসএফের তৎকালীন ১৯৩ নম্বর ব্যাটালিয়নের জি-ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর মনোজ কুমারকে (বর্তমানে কোচবিহারে কর্মরত) জেরা করেন সরকারি আইনজীবী সমীর দাস ও বিরোধী পক্ষের আইনজীবী সুব্রত বসু।
মনোজের কাছে সরকারি আইনজীবী জানতে চান, ২০০৭ সালের ৩ এপ্রিল তিনি কোথায় কর্মরত ছিলেন। মনোজ জানান, সে সময়ে তিনি পেট্রাপোলের হরিদাসপুর ক্যাম্পে ছিলেন। খবর আসে, চার জন প্রশিক্ষিত লস্কর জঙ্গি বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকবে। ক্যাম্পের অ্যাসিস্ট্যান্ট কম্যান্ডার অমিত যাদব বারো-তেরো জনের একটি বিশেষ দল তৈরি করেন। তাতে ছিলেন মনোজও। পেট্রাপোল সীমান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েন সকলে। এ দেশে ঢুকতেই ওই চার জনকে
ধাওয়া করে ধরে ফেলেন।
জিজ্ঞাসাবাদে নিজেদের বাংলাদেশি বলে দাবি করে (তদন্তে নেমে পুলিশ পরে জেনেছে, শেখ সামির ঔরঙ্গাবাদের বাসিন্দা। রাঠৌড় থাকত শ্রীনগরে।
বাকি দু’জন পাক নাগরিক) ধৃতেরা। তাদের জিনিসপত্র তল্লাশি করে দেখেন জওয়ানরা।
মনোজ জানান, তল্লাশিতে পাওয়া যায় কলেজের পরিচয়পত্র, সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ডলার, টাকা, সিমকার্ড ছাড়া একটি মোবাইল ফোন প্রভৃতি। ধরা পড়ার পরে হরিদাসপুর ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
ধৃতেরা আদালত কক্ষে একটি জাল-ঘেরা জায়গায় বসেছিল। শেখ সামির এ সময়ে বিচারককে উদ্দেশ করে ইংরেজিতে বলে ওঠে, “আমাদের ধরে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এই বিষয়টি মহামান্য আদালত যেন নথিভুক্ত করেন।”
সরকারি আইনজীবী জানতে চান, জেরায় কী জানিয়েছিল ধৃতেরা?
মনোজ জানান, ইউনুস বলেছিল, সে ২০০৬ সালে পাকিস্তানে লস্কর-ই-তইবার কাছে একুশ দিনের অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। সেখানেই একে-৪৭, হ্যান্ড গ্রেনেড চালানো শেখে। পরে রাওয়ালপিন্ডি থেকে বাগ এয়ারলাইন্সে চেপে ঢাকায় আসে। সঙ্গে ছিল শেখ আবদুল্লাহ ও মুজফ্ফর আহমেদ রাঠৌড়। ঢাকার মতিঝিলে একটি হোটেলে উঠেছিল তারা। সেখানে দেখা হয় সামিরের সঙ্গে। বেনাপোল দিয়ে এ দেশে ঢোকার সময়ে ধরা পড়ে যায় সকলে।
এর পরে ধৃতদের শনাক্ত করতে বলেন সরকারি আইনজীবী। মনোজ একে একে সকলের নাম বলেন। এর পরে আবার শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। মনোজ জানিয়েছেন, গত ৪ এপ্রিল (যে দিন গ্রেফতার করা হয়েছিল চার জনকে) সিআইডি-র অফিসারেরা হরিদাসপুর ক্যাম্পে গিয়ে জেরা করেন সকলকে।
এ বার সওয়াল করতে ওঠেন অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী সুব্রত বসু। বিচারককে তিনি জানান, কোন এলাকা থেকে তাঁর মক্কেলদের ধরা হয়েছিল, ‘সিজার লিস্টে’ তার উল্লেখ নেই। সুব্রতবাবু মনোজের কাছে জানতে চান, তিনি কত দিন ধরে তল্লাশির কাজ করছেন। মনোজ জানান, অনেক দিন।
ইতিমধ্যে ঘেরা জায়গায় বেঞ্চে উঠে পড়ে সামির বিচারকের উদ্দেশে ইংরেজিতে উত্তেজিত ভাবে বলে, “আমি সাক্ষীকে প্রশ্ন করতে চাই। এটা আমাদের জীবন-মরণের ব্যাপার।” বিচারক জানান, এই অধিকার নেই। সওয়াল করতে পারেন তাঁদের আইনজীবীই। সুব্রতবাবু শান্ত করেন সামিরকে। বিচারককে জানান, সাক্ষী ধৃতদের নাম কিছুটা ভুল বলেছেন। বিচারকের নির্দেশে মনোজ ফের সকলকে শনাক্ত করেন। জানা যায়, রাঠৌড়কে তিনি আবদুল্লাহ বলেছিলেন। আবদুল্লাহকে আবার রাঠৌড় বলে উল্লেখ করেন। মনোজের যুক্তি, যখন ধরা পড়েছিল তখন কারও দাড়ি-গোঁফ ছিল, কারও ছিল না। এখন কিছুটা আলাদা চেহারা। সে জন্যই সমস্যা হয়েছে।
ঘড়িতে তখন বেলা পৌনে ৩টে। সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব এ দিনের মতো মুলতুবি ঘোষণা করেন বিচারক। জানান, সোমবার সকাল ১১টায় ফের সাক্ষ্যগ্রহণ হবে বলে। |
|
|
|
|
|