পথ দেখাল সূর্য ও ফুলমতি। তাই কুনকি হাতিদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজে পারদর্শী করতে তুলতে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ভাবছে বন দফতর। তবে বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন হাতি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেই পদক্ষেপ করতে চান। বনমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, ডুয়ার্সের সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতিতে পরীক্ষামূলক ভাবে ত্রাণ পৌঁছনো ও দুর্গতদের উদ্ধারের কাজে ওই দুটি কুনকি হাতি দারণ ‘সফল’ হয়েছে। বনমন্ত্রী বলেন, “সাধারণত বুনো দাঁতালদের তাড়ানো, পর্যটকদের ঘোরানো-সহ বন দফতরের নানা কাজে সাহায্য করে থাকে গরুমারার কুনকিরা। এ বার পরীক্ষামূলক ভাবে দেখা গেল দুর্গম, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এলাকায় ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজও করানো যায়। আগামী দিনে তা করা হবে কি না সেটা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলার পরে ঠিক করতে হবে।” বস্তুত, পর্যটকদের পিঠে চাপিয়ে চেনা পথে জঙ্গল সাফারিতে অভ্যস্ত সূর্য ও ফুলমতি। বন্যজন্তু তাড়ানোর প্রশিক্ষণও রয়েছে। গহন জঙ্গলে নজরদারির কাজও নানা সময়ে করতে হয়। কিন্তু, সর্ম্পূণ অপরিচিত এলাকায় বানভাসি খরস্রোতা নদী পার হয়ে ত্রাণ ও উদ্ধারের কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না ওই দুটি কুনকি হাতির। আচমকা গত সোমবার সেতু ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া নাগরাকাটার খয়েরকাটা গ্রামে ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজের জন্য ওদের ডাক পড়ে। বুধবার পর্যন্ত, তিন দিনে অন্তত ২৫ বার খরস্রোতা কুচি ডায়না নদী পারাপার করে ত্রাণ সামগ্রী গ্রামে পৌঁছেছে সূর্য-ফুলমতি। দুর্গতদের পিঠে চাপিয়ে গ্রাম থেকে সদরে পৌঁছে দিয়েছে। ইউনিট টেস্ট দিতে পৌঁছে দিয়েছে স্কুলপড়ুয়াদের।
বন দফতর সূত্রের খবর, ১৯৯৫ সালে যখন প্রথম বার কেন্দ্রীয় সরকার থেকে রাজ্যের বন দফতরকে হাতি ধরার অনুমতি দেয়, সে সময়ই মেদিনীপুর থেকে ধরা হয়েছিল সূর্যকে। তখন সূর্যের বয়স দেড় বছর। কুনকি প্রশিক্ষণের জন্য দক্ষিণ ভারত থেকে মাহুতদের নিয়ে আসা হয় মেদিনীপুরে। সেখানে প্রশিক্ষণের পরে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় গরুমারা জঙ্গলে। ২০০৪ সালে অসম থেকে পাচার হয়ে যাওয়ার পথে উদ্ধার করা হয় ফুলমতিকে। গরুমারায় এনে কুনকি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তার পর থেকে সূর্যের মতো ফুলমতিও পর্যটকদের পিঠে চাপিয়ে জঙ্গলে ঘোরানোর কাজ করে চলেছে।
গরুমারার অন্যতম প্রধান মাহুত দীনবন্ধু বর্মন বলেন, “সূর্য ও ফুলমতিকে তিন দিনে অন্তত ২৫ বার বন্যায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া দুর্গম এলাকায় যাতায়াত করতে হয়েছে। শুকনো খাবার ওষুধ থেকে শুরু করে চিকিৎসকদের গ্রামে নিয়ে যাওয়া, অসুস্থদের গ্রাম থেকে আনার কাজ করেছে ওরা। এতো আর পর্যটকদের পিঠে চাপিয়ে নিয়ে হেলেদুলে জঙ্গল সাফারি করা নয়। যথেষ্ট সাবধানে ওরা কাজটা করেছে।” জলপাইগুড়ি বন্যপ্রানী বিভাগের ডিএফও সুমিতা ঘটক অবশ্য বলেন, “কুনকি হাতিদের দিয়ে বন্যা ত্রাণের কাজ করানো নতুন কিছু নয়। বিশেষ জরুরি অবস্থায় দুই কুনকি হাতি চায় প্রশাসন। এর আগে ২০০১ সালে জলদাপাড়াতেও বন্যাত্রাণে কুনকি হাতিদের ব্যবহার করা হয়েছিল।”
অতীতে জলদাপাড়ায় কুনকিদের বন্যা ত্রাণের কাজে লাগানো হয়েছে। কিন্তু, গরুমারায় এবারই প্রথম। সে জন্য গরুমারার কুনকি হাতিদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভাবছে বন দফতর। |