বিপণন কেন্দ্র
শুধুই প্রাচীর
পেরিয়ে গিয়েছে এগারো বছর। তৈরি হয়েছে শুধু পাঁচিল। ব্যয় হয়েছে ৩৫ লক্ষ টাকা। এমনই অবস্থা ইস্টওয়েস্ট রোডের ধারে প্রস্তাবিত ফল ও সব্জি বিপণন কেন্দ্রের।
হাওড়ার মাছবাজারের পাশ থেকে সব্জিবাজারটি সরিয়ে ইস্টওয়েস্ট রোডের ধারে ফল, ফুল ও সব্জির পাইকারি বিপণন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। রাজ্য খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের সহায়তায় এই প্রকল্পটি নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছিল এইচআইটি। সমন্বয়ের দায়িত্ব ছিল হাওড়া পুরসভার। প্রাথমিক ভাবে মঞ্জুর হয়েছিল ৯৫ লক্ষ টাকা। ২০০১-এর ১৩ মার্চ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু তার পরে আর কাজ এগোয়নি।
হাওড়ার বঙ্কিম সেতুর কাছে সাত একর জায়গা জুড়ে থাকা পাইকারি মাছবাজারটির আধুনিকীকরণের জন্য কেএমডিএ ইতিমধ্যেই দেড় একর জমি মৎস্য দফতরকে হস্তান্তর করেছে। এই মাছবাজারের পাশে প্রায় তিন একর জায়গা জুড়ে রয়েছে সব্জিবাজার। এটিকেই ইস্টওয়েস্ট রোডের ধারে স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। এইচআইটি-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার মৃন্ময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সব্জিবাজারটির পুনর্বাসনের জন্য কেএমডিএ ‘ইমপ্লিমেন্টিং এজেন্সি’ হিসেবে এইচআইটি-কে ইস্টওয়েস্ট রোডের ধারে জমি দেয়।’’ ২০০৭-’০৮-এ বেসুর সঙ্গে মিলিত ভাবে এইচআইটি খসড়া প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করে। ঠিক হয়েছিল দ্বিতল এই বিপণন কেন্দ্রে ৫৬০টি দোকান থাকবে। ফল, ফুল ও সব্জির জন্য আলাদা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত সংরক্ষণ ঘর থাকবে। মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২ কোটি টাকা।
উলুবেড়িয়া, জগৎবল্লভপুর, আমতা, বাগনান থেকে বিক্রেতারা প্রতি দিনই হাওড়া স্টেশন ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এসে সব্জি, ফল, ফুল বিক্রি করেন। সংরক্ষণের অভাবে অনেক কিছু নষ্ট হয়ে যায়। এইচআইটি সূত্রে খবর, বিপণন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য প্রথমে ৯৫ লক্ষ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। জমিটির কিছু অংশে জবরদখল ছিল। পুলিশের সহযোগিতায় জবরদখল সরিয়ে পাঁচিল দেওয়ার কাজও হয়। খরচ পড়ে ৩৫ লক্ষ টাকা। এর পরে কাজ এগোয়নি।
মৃন্ময়বাবু বলেন, ‘‘ঠিক হয়েছিল ‘বিল্ড অ্যান্ড ট্রান্সফার মডেল’-এ সব্জিবাজার গড়ে তোলা হবে। কেন্দ্রটি তৈরির পরে কেএমডিএ এবং হাওড়া পুরসভার সঙ্গে আলোচনা করে ইচ্ছুক সংস্থার হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে।’’ কেএমডিএ-র সিইও বিবেক ভরদ্বাজ বলেন, ‘‘ফল, সব্জি বিপণন কেন্দ্রের জন্য জমি হস্তান্তর করা হয়েছিল। রূপায়ণের দায়িত্ব ভারপ্রাপ্ত সংস্থারই।’’ বিপণন কেন্দ্রে স্টল নেওয়ার জন্য ফল, সব্জি ও ফুল বিক্রেতারা দশ টাকার ফর্মে দরখাস্ত করেছিলেন। এইচআইটি সূত্রে খবর, বিপণন কেন্দ্রটি তৈরি হবে না বলে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ফর্ম বিক্রির অর্থ দফতরেই জমা আছে।
সব্জিবাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাজেশ সোনকার বলেন, “এখানে প্রায় পাঁচ হাজার সব্জি ব্যবসায়ী আছেন। অনেকেই দশ টাকার ফর্ম পাননি। অনেক বহিরাগতকে আবেদনপত্র দেওয়া হয়েছিল। নতুন জায়গায় হাওড়া স্টেশনের মতো ট্রেনে সব্জি আনা-নেওয়ার সুবিধা না-থাকায় অনেক ব্যবসায়ী ওখানে যেতে ইচ্ছুক নন।” তিনি জানান, কিছু দিন আগেই কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায় এসেছিলেন। একটি প্রাথমিক সমীক্ষাও হয়েছে। কৃষি বিপণনমন্ত্রী বলেন, ‘‘হাওড়ার মাছবাজারের পাশাপাশি সব্জিবাজারটিরও আধুনিকীকরণের ব্যাপারে মৎস্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণমন্ত্রী আবু হেনার সঙ্গে কথা হয়েছে। এইচআইটি-র সঙ্গে বেশ কয়েক বার আলোচনাও হয়েছে।’’
এইচআইটি-র চেয়ারম্যান শীতল সর্দার বলেন, “দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করে জেনেছি যে সব্জিবাজারের অনেকেই ব্যবসা হারানোর ভয়ে এই নতুন জায়গায় আসতে ইচ্ছুক নন। কিন্তু বর্তমান সব্জিবাজারের সংস্কারের জন্য বাজারটি অন্যত্র সরানোও জরুরি। এ বিষয়ে কৃষি বিপণনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আবার আলোচনা করব।”
হাওড়ার মেয়র মমতা জয়সোয়ালের বক্তব্য: “জায়গাটি বেদখল হয়ে যাচ্ছিল বলে ৩৫ লক্ষ টাকা দিয়ে পাঁচিল দেওয়া হয়েছিল। তার পরে কাজ এগোয়নি।” মৎস্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণমন্ত্রী আবু হেনার কথায়: “হাওড়ার মাছবাজারের সঙ্গে সঙ্গে সব্জিবাজারটির সংস্কারের কথাও ভাবা হয়েছিল। একটি জায়গাও দেখা হয়েছিল। কিন্তু সব্জিবাজারের ব্যবসায়ীরা আপাতত ওখানে যেতে ইচ্ছুক নন। তাই কাজ এগোয়নি। আলোচনা চলছে।”

ছবি: প্রদীপ আদক




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.