বাঁধ সারাতে জরুরি তলব সেনাকে
রাতভর বৃষ্টি হওয়ায় জলবন্দি লক্ষাধিক
মানুষ, জলে ভেসে ২ জনের মৃত্যু
রাতভর বৃষ্টিতে শিলিগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির ফের কিছুটা অবনতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে শিলিগুড়ির মহানন্দা লাগোয়া এলাকায় জলের তোড়ে ভেসে ১টি দেড় বছরের শিশু সহ ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। নাম অঙ্কুশ ওঁরাও ও অর্ঘদীপ্ত পাল (২৪)। ওই এলাকায় মহানন্দার বাঁধ মেরামতির জন্য সেনাবাহিনীকে তলব করা হয়েছে।
এ দিন মহানন্দা, বালাসন, মহিষমারি, পঞ্চনই, চামটা সহ অন্তত ১১টি পাহাড়ি নদীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় শতাধিক গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। দেড় হাজারের বেশি বাসিন্দাকে স্বেচ্ছাসেবীদের সাহায্য নিয়ে উদ্ধার করেছে প্রশাসন। সব মিলিয়ে লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত বলে পুরসভা-প্রশাসনের দাবি। দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “বাঁধ মেরামতের কাজ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় করতে হবে। সে জন্য সেনাবাহিনীকেও তলব করা হয়েছে। সকলে মিলে কাজ করলে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।” বিকেল থেকেই সেনাবাহিনী অস্থায়ী বাঁধ তৈরির কাজে নেমেছে। এ দিন মহাকরণে সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, “উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় অস্বাভাবিক হারে বৃষ্টি হচ্ছে। সব মিলিয়ে ২৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সব দফতরের আধিকারিকেরাই মাঠে নেমে কাজ করছেন। পুরো ঘটনার রিপোর্ট মুখ্য সচিবকে পাঠানো হয়েছে।” পাশাপাশি, পাহাড়েও ছোট-বড় ধস গড়িয়ে নামার বিরাম নেই। এদিনও কালিম্পঙের কাছে রংপোয় তারখোলায় ফের ধস নামে।
মহানন্দার বাঁধ মেরামত করছেন সেনা জওয়ানরা। শিলিগুড়ির
মিলন মোড়ে বৃহস্পতিবার কার্তিক দাসের তোলা ছবি।
সিকিমের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা দিনভর বিচ্ছিন্ন থাকে। রাত পর্যন্ত রাস্তার ধস পুরোপুরি সরাতে পারেনি সীমান্ত সড়ক সংস্থা। দার্জিলিং, কালিম্পং ও কার্সিয়াঙের গ্রামের একাধিক রাস্তাও ধসের ফলে দীর্ঘ সময় বিচ্ছিন্ন ছিল।
ডুয়ার্স ও কোচবিহারেও তিস্তা, তোর্সা, কালজানি সহ অন্তত ১৫টি নদীর জল বেড়ে যাওয়ায় কমবেশি ৭০টি গ্রাম জলবন্দি হয়ে পড়েছে। বীরপাড়ার তাসাটি চা বাগানে বিরবিট নদীর জল ঢোকায় প্রায় ১২০০ পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। ভুটান থেকে আসা উমেশ খাল রেতি নদীর সঙ্গে মিশে গিয়েছে। ফলে বানারহাটের কাঁঠালগুড়ি চা বাগান বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কালচিনিতে বাসরা নদী রাস্তা দিয়ে বইতে থাকায় হ্যামিলটন ও হাসিমারার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত গজলডোবা ব্যারেজ থেকে ১ লক্ষ ৪২ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। যা কিনা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তাতেই তিস্তার জল বাড়তে থাকে। তিস্তা লাগোয়া চরের গ্রামগুলি ফের জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
চম্পাসারি গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাতেই জল ঢুকতে শুরু করে এলাকায়। সকালের দিকে বাঁধের প্রায় দেড়শো মিটার জলের তোড়ে উড়ে গেলে হু হু করে জল ঢুকে পড়ে। তিনধরিয়া, কড়াইবস্তি, গুলমা বস্তি, যদুভিটা, বাবুভাসা, মিলনমোড়, মহিষমারি, মাজুয়া, দক্ষিণ পলাশ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এর মধ্যেই অঙ্কুশ বাড়ির সামনেই খেলার সময়ে লাগোয়া খালে পড়ে যায়। নাগরাকাটার বাসিন্দা অর্ঘদীপ্ত বাঘাযতীন কলোনিতে তিনি ভাড়া বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতেন। মহানন্দার জল দেখতে গিয়ে পা পিছলে নদীতে পড়ে যান তিনি।
সেচ দফতরের শিলিগুড়ির এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র সমর সরকার বলেন, “গত ২৪ ঘণ্টায় শিলিগুড়িতেই প্রায় ১৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তার জেরে মহানন্দার বিপুল জলরাশির ধাক্কা সামলাতে পারেনি মেরামত করা অংশটি। তার সঙ্গে আমরা নদীর স্রোত ফের ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম হলে পরিস্থিতি হয়তো সামাল দেওয়া যাবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.