কুলগাছিয়া বাজারে ‘জনতার শাসনে’ হত ২
পুলিশ-প্রশাসনের উপরে তাঁদের বিশেষ ভরসা নেই। ছিঁচকে চুরি থেকে সাইকেল নিয়ে পালানোর চেষ্টা, ধরা পড়লে অভিযযুক্তকে শাসনের দায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরা নিজেরাই হাতে তুলে নিয়েছেন। এমন ঘটনা নতুন নয় নদিয়ায়।
নদিয়া জেলা পুলিশের তথ্য বলছে, গত দু’ বছরে কৃষ্ণনগরেই গণপিটুনিতে মারা গিয়েছে ৫ জন অভিযুক্ত। শান্তিপুরে মারা গিয়েছে ২ জন। হাঁসখালিতেও সাইকেল চোর সন্দেহে দু-জনকে ধরার পরে, পুলিশে না দিয়ে জনতা নিজেই ‘শাসন’ করে তাদের। মারা যায় দুই যুবক। সেই তালিকায় শেষ সংযোজন বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরের কুলগাছিয়ার ঘটনা।
এ দিন, ওই বাজারে একটি সোনার দোকানে চুরির অভিযোগে এক কিশোর-সহ তিন জনকে ধরে ফেলে বাজারের লোকজন। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই বাঁশ, লাঠি, শাবল দিয়ে খুঁচিয়ে দু’জনকে মেরে ফেলে জনতা। স্থানীয় এক চিকিৎসকের তৎপরতায় বছর পনেরোর ওই কিশোর অবশ্য প্রাণে বেঁচে যায়। কিন্তু বাজারে অন্যান্যদের সামনেই অন্য দুই অভিযুক্তকে বাঁশে বেঁধে শুরু হয় প্রহার। পুলিশ আসে ঘণ্টা দুয়েক পরে। সাকুল্যে দশ কিলোমিটার দূরে কৃষ্ণনগর থানা। সেখান থেকে পুলিশ আসতে এত দেরি কেন?
আতঙ্ক। থানায় শিবু দাস। —নিজস্ব চিত্র।
জেলা পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বাঁদা ধরা গতে বলেন, “থানায় খবর দেওয়া হয়েছিল অনেক পরে।” যদিও স্খানীয় গ্রামবাসীদের অনেকেই জানিয়েছেন, মারধর শুরুর দশ মিনিটের মধ্যেই মোবাইলে ক্রমান্বয়ে থানায় ফোন করে ঘটনাটি জানানো হয়েছিল। বার বার ফোন করায় গ্রামবাসীদের অনেককেই পাল্টা ধমকও খেতে হয়েছিল বলে অভিযোগ। পুলিশ সুপার বিকেলে জানান, চোর সন্দেহে রাজু দাস (৪০) ও চিরঞ্জীব দাস (৪৩) নামে দু’জনকে ধরার পরে গণপিটুনি শুরু হয়। তাতেই মারা যায় ওই দু-জন। তাদের সঙ্গী এক কিশোরকে আটক করে জেরা করা হচ্ছে। তবে গণপিটুনিকর ঘটনায় এ দিন রাত পর্যন্ত কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। কেন? তারও কোনও স্পষ্ট উত্তর মেলেনি পুলিশ সুপারের কাছে। এ দিন সকালে কুলগাছির বাজারে তাঁর গয়নার দোকান সবে খুলেছিলেন খোকন দাস। তিনি বলেন, “দোকানে হাত-ব্যাগটা রেখে পাশের কলে একটু জল ভরতে গিয়েছিলাম।
গণপিটুনির খতিয়ান
• ২০০৮-এর ৮ অগস্ট থেকে ২০১২-র ১৯ জুলাই, বহরমপুর এবং লাগোয়া এলাকায় জনতার ‘শাসনের’ শিকার হয়েছে ১৫ জন। কখনও সাইকেল কখনও বা পকেটমার সন্দেহে তাদের পুলিশে না দিয়ে যথেচ্ছ পিটিয়েছে জনতা।

• কৃষ্ণনগরের চেহারাটা আরও ভয়ঙ্কর। শুধু কোতোয়ালি থানা এলাকাতেই ২০১০ থেকে ২০১২-র জুলাই পর্যন্ত জনতার ‘শাসনের’ বলি ৭ জন। শান্তিপুরে ২ জন। হাঁসখালিতেও জনতা পিটিয়ে মেরেছে ২ জনকে।
ব্যাগে টুকরো কিছু সোনা ছিল। দু-একটা গয়নাও ছিল। আচমকা একটা মোটরবাইকে তিন জন এসে দাঁড়ায় দোকানের সামনে। চোখের সামনেই গয়নার ব্যাগ তুলে নেয়। আমাদের চিৎকারে ওই দুই যুবক বাইক নিয়ে পালাতে থাকে। ওই কিশোর পড়ে যায় জনতা তাকেই ধরে ফেলে।” পুলিশের কাছে ওই কিশোর জানায়, তার নাম শিবু দাস। এই সময়ে স্থানীয় ওই চিকিৎসক বিজলীবাবু জনতার হাত থেকে ওই কিশোরকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান। তিনি বলেন, “না হলে ছেলেটিকেও পিটিয়ে মেরে পেলত লোকজন।” বাজার ছাড়িয়ে একটু এগোতেই পুরাতন ইটেবেড়ে এলাকায় জনতা অবশ্য বাইকটি আটকায়। পিছনে তখন ছুটছে শ’খানেক মানুষ। শুরু হয় গণপিটুনি। নিমেষে পিটিয়ে মেরে পেলা হয় দু-জনকে। খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পেরেছে, রাজু ও চিরঞ্জীব থাকতেন বাদকুল্লা স্টেশনের কাছের একটি ঝুপড়িতে। সেখানেই থাকে শিবুও। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক চুরি-ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে বলে পুলিশের দাবি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.