বছর সাতানব্বইয়ের বৃদ্ধটিকে দেখে ঈষৎ করুণা হতে পারে। কিন্তু ‘নৃশংস’ নাৎসি কম্যান্ডারের ভূমিকায় তাঁকে কল্পনা করা প্রায় অসম্ভব। অথচ পুলিশি তথ্য বলছে ইনিই চল্লিশের দশকের কুখ্যাত ও বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্বের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ নাৎসি নেতা লাদিসলাউস সিৎসিক-সাতারি। প্রায় সত্তর বছর পর সম্প্রতি তাঁকে বুদাপেস্টের ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করেছে হাঙ্গেরি পুলিশ। যুদ্ধাপরাধ ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে লাদিসলাউসের বিরুদ্ধে।
|
লাদিসলাউস সাতারি |
হাঙ্গেরির পুলিশি তথ্য অনুসারে, অগুনতি ইহুদিকে নির্দ্বিধায় আউশভিৎসের নাৎসি ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে’ পাঠানোর বিরল ‘কৃতিত্ব’ রয়েছে এই নাৎসি নেতার ঝুলিতে। এতেই শেষ নয়। ১৯৪৪ সাল নাগাদ রয়্যাল হাঙ্গেরিয়ান পুলিশের ‘কম্যান্ডার’ থাকাকালীন প্রায় ৮০ জন ইহুদিকে ট্রেনের কামরায় উঠিয়ে দেন লাদিসলাউস। এমন এক কামরা যেখানে শ্বাস নেওয়ার জন্য ছিল না একটি ছিদ্রও। কামরার যাত্রীরা কাতর আর্তনাদ করলেও সে চিৎকার কানে তোলেননি তিনি। এর পরও একাধিক ইহুদি গণহত্যায় নাম জড়িয়েছে তাঁর। শুধু তা-ই নয়, কারণ ছাড়াই ইহুদি বন্দীদের নিয়মিত বেত মারার ‘রেকর্ড’ও রয়েছে আজকের এই অশীতিপর বৃদ্ধের। সেই তালিকা থেকে বাদ যেতেন না শিশু ও মহিলারাও। অসুস্থদেরও রেয়াত করতেন না তিনি।
অত্যাচারের ইতিবৃত্ত যাতে কেউ ভুলে না যান, সে জন্য বিশ্ববাসীকে আবেদন জানিয়েছেন আমেরিকার ইহুদি অধিকার কমিশন সিমন ভিজেনথাল সেন্টারের প্রধান এফরাইম জুরোফ। লাদিসলাউসের বার্ধক্য যাতে কোনও ভাবেই তাঁর শাস্তির মেয়াদ বা ভয়াবহতা কমাতে না পারে, সে ব্যাপারেও বিশ্ববাসীকে সচেতন করেছেন জুরোফ। কারণ তাঁর মতে, প্রায় সাড়ে পনেরো হাজার ইহুদি খুনে অভিযুক্ত কোনও ভাবেই ক্ষমা পেতে পারেন না।
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পরই ইউরোপ ছেড়ে পালিয়ে যান লাদিসলাউস। পাড়ি দেন সূদূর কানাডায়। আর্ট-ডিলারের ভুয়ো পরিচয় নিয়ে সেখানে পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় কাটানোর পরে চলে আসেন হাঙ্গেরিতে। তার পর কেটে গিয়েছে ১৫ বছর। এত দিনেও লাদিসলাউসের পড়শিরা জানতে পারেন নি যে তাঁদের সঙ্গেই বাস করছেন বিগত শতাব্দীর ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ নাৎসি নেতা।
আপাতত যিনি নিজগৃহেই নজরবন্দি। |