বারাবনির পরে এ বার সালানপুর। পরিস্রুত পানীয় জলের অভাবে ডায়ারিয়ার প্রকোপ দেখা দিল সালানপুর ব্লকের আল্লাডি পঞ্চায়েতের ডোমদহ গ্রামে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেশির ভাগ সময়েই কুয়ো বা নলকূপের জল পান করতে হয় তাঁদের। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের যে পাইপলাইনটি রয়েছে, সেটি দিয়েও ঘোলাটে কাদা মিশ্রিত জল পড়ে। বুধবার সকাল পর্যন্ত প্রায় ন’জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। তাঁদের মধ্যে ছ’জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভতি করানো হয়েছে। পাঁচ জন ঝাড়খণ্ডের মিহিজাম এলাকার একটি সরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ও এক জনকে সালানপুরের পিঠাইকেয়ারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছে।
ডোমদহ গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, মঙ্গলবার বিকেল থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন গ্রামবাসীরা। পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির কাছে বিষয়টি জানানোর পরেও গ্রামে কোনও চিকিৎসক দল যায়নি। প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং ওআরএস দেওয়ার ব্যবস্থা হয়নি। কীটনাশক বা প্রতিষেধক ছড়ানো হয়নি। পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের ব্যাপারে উদ্যোগ হয়নি।
তাঁদের আরও অভিযোগ, পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে ট্যাঙ্কে করে ওই গ্রামে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। কিন্তু সোমবার থেকে সেই জল সরবরাহও বন্ধ। যার ফলে বাসিন্দারা অপরিস্রুত জল পান করেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এলাকার বাসিন্দা প্রণব চৌধুরীর দাবি, “ব্লক প্রশাসন উদ্যোগী হয়নি। প্রথম থেকে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে। মহামারির আকার নেবে।”
আল্লাডি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মহম্মদ সেলিম জানান, এলাকার বাসিন্দারা তাঁকে ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছেন। ডোমদহ গ্রামে যে পরিস্রুত পানীয় জলের অভাব রয়েছে তা স্বীকার করেছেন সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল মজুমদার। তবে তাঁর দাবি, ওই গ্রামে যে ডায়েরিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে তা তিনি জানতেন না। জল সরবরাহ বন্ধ প্রসঙ্গে তাঁর যুক্তি, “বর্ষা শুরু হওয়ায় জলের সমস্যা মিটিছে। তাই আমরা জলের ট্যাঙ্ক পাঠানো বন্ধ করেছি।” তবে তার ফলে পরিস্রুত পানীয় জল না পেয়ে কাদা মিশ্রিত ঘোলা জল পান করে বাসিন্দাদের ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়েই ফের তা চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি সমিতির কর্মাধ্যক্ষ (স্বাস্থ্য)-র নেতৃত্বে একটি দল সেখানে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জলের পাইপলাইনে কোনও ভাবে দূষিত জল ঢুকে সংক্রমণ হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য নমুনা সংগ্রহ করেছেন সালানপুরের বিডিও জয়দীপ দাস। জয়দীপবাবুর দাবি, “বাসিন্দারা পাইপলাইন ফুটো করে যথেচ্ছ ভাবে অবৈধ সংযোগ নিচ্ছেন। বর্ষার সময়ে আশপাশের নালা-নর্দমা, ডোবার দূষিত জল পাইপের ফুটো দিয়ে ঢুকে দূষণ ছড়াচ্ছে। এর জন্যও ডায়েরিয়ার মতো রোগ ছড়াচ্ছে।”
বিডিও জানান, ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটি চিকিৎসক দলকে প্রয়োজনীয় ওষুধ, ওআরএস দিয়ে পাঠানো হচ্ছে। মহকুমা স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগেও স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি দল বৃহস্পতিবার সেখানে যাবে বলে জানিয়েছেন মহকুমার স্বাস্থ্য আধিকারিক অরিতা সেন চট্টরাজ। এ দিকে, বারাবনির মনোহরবহাল গ্রামে নতুন করে আর কোনও ডায়েরিয়া আক্রান্তের খবর নেই। তবে ওই গ্রামে এখনও অস্থায়ী চিকিৎসা শিবির রয়েছে। |