প্রণব-হামিদে বাজিমাত কংগ্রেসের
হতাশ বিজেপি বুঝছে দিল্লি এখনও দূরেই
ক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনেই লোকসভা ভোটের মহড়া সেরে ফেলা। কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের এক দিন আগে পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, বিজেপি শিবির তাতে রীতিমতো হতাশ। রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি ভোট নিয়ে কংগ্রেস যে ভাবে বাজি মাত করল, তাতে বিজেপি নেতৃত্বের কাছে এটা এখন স্পষ্ট যে, ২০১৪-র লোকসভা ভোটে দিল্লি দখল করতে হলে আরও সহস্র যোজন পেরোতে হবে তাঁদের।
বিজেপি-র শীর্ষ সূত্রের মতে, রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে তাঁদের প্রায় প্রতিটি কৌশলই ব্যর্থ হয়েছে। এই দুই নির্বাচনে জয়ের জন্য সংখ্যা গোড়া থেকেই ছিল না। সেটা জেনেও লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি চেষ্টায় নেমেছিল বিজেপি। কিন্তু কংগ্রেস-বিরোধী জোটকে আরও মজবুত করার লক্ষ্যে তাদের একের পর এক চেষ্টা ভেস্তে গিয়েছে। প্রথমে ভাবা হয়েছিল, কংগ্রেসের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীকে সমর্থন করে উপরাষ্ট্রপতি পদে নিজেদের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার জন্য দর কষাকষি করা হবে। কিন্তু কংগ্রেস তার সুযোগই দেয়নি। বিজেপি-র সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই সনিয়া গাঁধী ইউপিএ-র প্রার্থী হিসেবে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা করে দেন।
দ্বিতীয় সুযোগটি এল যখন সনিয়ার প্রস্তাবিত নাম খারিজ করে পাল্টা তিন জনের নাম প্রস্তাব করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুলায়ম সিংহ। মমতা-মুলায়মের প্রস্তাবিত এ পি জে আব্দুল কালামকে বিজেপি সমর্থন দিতে পারে, এমন বার্তা দিয়ে ইউপিএ ভাঙার কৌশল নেন নিতিন গডকড়ীরা। কিন্তু মুলায়মের মধ্যস্থতায় কালাম নিজেই বেঁকে বসেন। মমতার সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গ করে মুলায়ম আশ্রয় নিলেন সনিয়ার শিবিরে।
এর পরেও ‘কোণঠাসা’ মমতাকে সঙ্গে পাওয়ার একটা শেষ আশা ছিল বিজেপি নেতৃত্বের। তাঁরা ভেবেছিলেন, মমতা যদি এনডিএ-তে না-ও আসেন, কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক রুক্ষ হলে লোকসভায় বিজেপি-রই লাভ। বিজেপি সমর্থিত প্রার্থী পূর্ণ সাংমা ছুটে যান মহাকরণেও। বড়াই করে তিনি এমনও বলেন যে, মমতার ভোট তাঁর ঝুলিতেই যাবে। কিন্তু গত কাল বিজেপি-র এই তৃতীয় কৌশলে জল ঢেলে দিয়েছেন মমতা।
চার, সাংমাকে সমর্থন করে নবীন পট্টনায়ক ও জয়ললিতার মতো নতুন দুই অতিথিকে এনে এনডিএ জোটের শক্তি বাড়াতে চাইছিল বিজেপি। কিন্তু যত দিন গড়িয়েছে, সাংমা সম্পর্কে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন জয়ললিতা। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নবীন ও জয়া যতটা সক্রিয় হয়েছিলেন, এখন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএ প্রার্থী যশোবন্ত সিংহের ব্যাপারে তেমন উৎসাহ দেখাচ্ছেন না তাঁরা।
পাঁচ, এনডিএ-কে প্রসারিত করা তো দূরস্থান, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএর দুই পুরনো শরিক জেডি-ইউ এবং শিবসেনার সমর্থনও হাসিল করে নিয়েছে কংগ্রেস। নীতীশ কুমার তো জোট ছাড়ারও হুমকি দিয়ে রেখেছেন। ফলে বিজেপি এখন ঘর সামলাতেই ব্যস্ত। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নীতীশকে পাশে রাখার মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে বিজেপি দেখাতে চাইছে অটুটই রয়েছে এনডিএ।
ছয়, বিজেপি চেয়েছিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এমন এক রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করতে, যাতে লোকসভা নির্বাচনে তৃতীয় ফ্রন্ট দানা বাধার আর কোনও সুযোগ না থাকে। কিন্তু অতীতে যারা তৃতীয় ফ্রন্টের ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিল, তাদের অধিকাংশই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে। তিন ‘ম’ (মমতা-মুলায়ম-মায়াবতী), এমনকী বামেরাও সমর্থন করছে প্রণববাবুকেই।
সাত, ব্যর্থতার বোঝায় শাকের আঁটি দলের কোন্দল ও নেতৃত্বের সঙ্কট। কর্নাটকের সঙ্কট স্পষ্ট করে দিয়েছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দুর্বলতা। রাজ্যের নেতাদের চাপে মাথা ঝোঁকাতে হচ্ছে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের। তার উপর সাংমা তো বটেই, যশোবন্তকে উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করা নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে দলে। লালকৃষ্ণ আডবাণী এর মাধ্যমে যে ভাবে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন, তা অনেকেই ভাল ভাবে নেননি।
বিজেপি-র আট নম্বর ব্যর্থতা হল, মাস কয়েক আগেও দুর্নীতি ও মূল্যবৃদ্ধির প্রশ্নে তারা কংগ্রেসকে যে ভাবে কোণঠাসা করার সুযোগ পেয়েছিল, এখন সেই পরিস্থিতি অনেকটাই ঘুরিয়ে দিতে সমর্থ হয়েছেন সনিয়া গাঁধী।
এই পরিস্থিতিতে বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতা মন্তব্য, “আমাদের এখন দু’টি লক্ষ্য। এনডিএ অটুট রাখা ও বিজেপি-র নিজস্ব শক্তি বাড়ানো। লোকসভায় বিজেপি একাই দু’শোর কাছাকাছি পৌঁছতে পারলে অনেক শরিক আপনা থেকেই মিলবে। রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন শেষ হলেই বিজেপি সর্বশক্তি দিয়ে আম-আদমির দুর্দশার প্রসঙ্গ তুলে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লোকসভার যুদ্ধে নামবে। সেমিফাইনালে হারলেও ফাইনালে জয়ই আমাদের পাখির চোখ।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.