যুদ্ধে জয় প্রায় নিশ্চিত, প্রণব খোশমেজাজে
বীরভূমের মিরিটি গ্রামের যে ছেলেটি খালি পায়ে রোজ কয়েক মাইল হেঁটে স্কুলে যেত, আগামিকাল তাঁরই রাষ্ট্রপতি ভবনে যাওয়া কার্যত নিশ্চিত।
অন্য সব নির্বাচনের মতো এখানেও তাঁর এক জন প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন। পূর্ণ অ্যাজিটক সাংমা। কিন্তু ১৩ তালকাটোরা রোডে আজকের ছবিটাই বলে দিচ্ছিল দেওয়াল লিখন কী হতে চলেছে। গত ক’দিন ধরেই বাড়িতে পুষ্পস্তবক উপচে পড়ছে। শুভার্থীদেরও ভিড়। আসছে একের পর ফোন। এর মধ্যে গত কাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানিয়ে দেন, তৃণমূল সমর্থন করবে তাঁকে। তার পরেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেন তিনি। বলেন, ‘তোর সমর্থন না পেলে আমার জেতা অসম্পূর্ণ থেকে যেত। আমি জিতেও নিজেকে জয়ী বলে মনে করতাম না।’ তাঁর ঘনিষ্ঠমহল বলছে, ‘জয়ী’ হওয়া আর ‘সুখী’ হওয়া এক নয়। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গোটা দেশ তাঁর সমর্থনে এগিয়ে এলেও শেষ পর্যন্ত নিজের রাজ্যের শাসক দলের (যারা আবার জোটসঙ্গীও) ভোট যদি না পেলে বেদনাটা রয়েই যেত তাঁর। গত কাল মমতার ঘোষণার পরে তাই এখন স্বস্তি। ‘সুখী’ হয়েই যেতে পারবেন রাইসিনা হিলসে তিনি। তিনি, প্রণব মুখোপাধ্যায়।
এ দিন তাঁর সঙ্গে দেখা করেন সংসদীয় মন্ত্রী পবন বনশল, রাজীব শুক্ল। পবন আবার প্রণববাবুর নির্বাচনী এজেন্টও। তাই শেষ মুহূর্তে খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখে নেন দু’জনে। জেতার বিষয়ে নিশ্চিত প্রণববাবু সকাল থেকেই খোশমেজাজে। প্রণব ঘনিষ্ঠ এক শুভানুধ্যায়ীর কথায়, “কথা বলার সময় মাঝেমধ্যেই তিনি পাঞ্জাবির আস্তিন গোটাচ্ছেন আর খুলছেন। জয়ের ব্যাপারে ভীষণ ভাবে নিশ্চিত। শুধু হিসেব কষছেন, জেতার মার্জিন কত হবে। ওঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, রাষ্ট্রপতি ভবনে এত ঘর কী করবেন? হেসে বলেন, এর আগে তো সরকারি কাজে সেখানে গিয়েছি। এর বাইরে তো কিছুই জানি না।”
একটা সময় কিন্তু ছবিটা এত সহজ ছিল না। অনেকেই ১৯৬৯ সালের মতো হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের গন্ধ পেয়েছিলেন। ৪৩ বছর আগের সেই লড়াইয়ে খুব অল্প ব্যবধানে নীলম সঞ্জীব রেড্ডিকে হারিয়ে জিতে যান ভি ভি গিরি। কিন্তু এখন সেই মেঘ কেটে যাওয়ায় প্রণববাবুর সঙ্গে কোন আমলা বা নর্থ ব্লকের সঙ্গী রাষ্ট্রপতি ভবনে যাবেন, শুরু হয়ে গিয়েছে তার তোড়জোড়ও। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, অর্থ মন্ত্রকের আমলা গোপালন থেকে প্রণবের ব্যক্তিগত প্রদ্যোৎ গুহ, যাচ্ছেন সকলেই।
প্রণববাবুর শিবিরে যখন ফুরফুরে হাওয়া, তখন প্রতিদ্বন্দ্বী পূর্ণ সাংমা আজ তামিলনাড়ুতে। মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার সঙ্গে দেখা করে তাঁকে সমর্থন করার জন্য ধন্যবাদ জানান সাংমা। রাষ্ট্রপতি পদের লড়াইয়ে তাঁর সমর্থনে প্রথম এগিয়ে এসেছিলেন জয়ললিতাই। সাংমা বলেন, “তিনি আমার জন্য সমর্থন জোগাড় করতে সক্রিয় ছিলেন। তাই ধন্যবাদ জানাতে এসেছি।” অঙ্কের হিসেবে অনেক পিছিয়ে থাকলেও লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার কিন্তু এখনও জেতার বিষয়ে আশাবাদী। সাজো সাজো রব সংসদেও। সেখানে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি তুঙ্গে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, বিভিন্ন দলের ৮০ জন সাংসদ বাদে লোকসভা ও রাজ্যসভার বাকি সদস্যরা সকলেই কাল এখানে ভোট দেবেন। ভোট গ্রহণ কেন্দ্র হচ্ছে সংসদের ৬৩ নম্বর কক্ষ। সেখানে আজ দিনভর ছিল ব্যস্ততা। ব্যালট পেপার ও বাক্স সংসদে পৌঁছে গিয়েছে। কাল সকাল দশটা থেকে শুরু হবে ভোটগ্রহণ। শেষ হওয়ার কথা বিকেল পাঁচটায়। এগারোটার সময় ভোট দিতে যাবেন সনিয়া গাঁধী, মনমোহন সিংহ। তাঁদের সঙ্গে থাকবেন প্রণববাবুও।
এরই ফাঁকে আজ সংসদে উপরাষ্ট্রপতি পদে জন্য নিজের মনোনয়নপত্র জমা দিলেন হামিদ আনসারি। লোকসভার সেক্রেটারি জেনারেল তথা ওই নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার টি কে বিশ্বনাথনের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। এ দিন আনসারির মনোনয়ন মাধ্যমে আর এক বার ইউপিএ শিবির নিজের ঐক্যের ছবি তুলে ধরতে সক্ষম হয়। মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সপা-র মুলয়াম সিংহ যাদব, এনসিপি-র শরদ পওয়ার, আরএলডি-র অজিত সিংহ, এনসি-র ফারুক আবদুল্লা, আরজেডি-র লালুপ্রসাদ। পওয়ার প্রথমে বসার আসন পাননি। পরে বাইরে থেকে চেয়ার এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.