জনজীবন ‘যথাসম্ভব’ স্বাভাবিক রেখেই শনিবার ধর্মতলায় শহিদ সমাবেশ করতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলনেত্রীর মনোভাব জেনে তৃণমূল নেতৃত্ব সেই মতোই সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যদিও সপ্তাহের শেষ দিনটি অন্যান্য কাজের দিনের চেয়ে কিছুটা আলাদা। তবুও পুলিশ-প্রশাসনের সহযোগিতায় শনিবার ধর্মতলার বাইরে কলকাতাকে যতটা সম্ভব ‘স্বাভাবিক’ রাখার বিষয়ে ‘সতর্ক’ তৃণমূল নেতৃত্ব।
বিরোধী নেত্রী থাকাকালীনই মমতা রাস্তা-অবরোধ, কাজের দিন মিছিল-সমাবেশের বিরোধিতায়। এখন শাসকদলের প্রধান হিসেবে প্রত্যাশিত ভাবেই জনসাধারণের কোনও রকম অসুবিধা ঘটানোর কট্টর বিরোধী তিনি। ক্ষমতায় আসার পর এ বার দ্বিতীয় ‘শহিদ দিবস’ পালন করতে চলেছে তৃণমূল। গত বার ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে ব্রিগেডে পালিত হয়েছিল। এ বার ফের শহরের প্রাণকেন্দ্রে সমাবেশ। সে জন্যই আগাম কিছু ব্যবস্থা নিয়েছেন আয়োজকরা। ট্রেনে যে সব দলীয় কর্মী-সমর্থক আসবেন, তাঁদের দলনেত্রী আগাম নির্দেশ দিয়েছেন, অন্য সাধারণ যাত্রীদের যেন অসুবিধা না-ঘটানো হয়। তবে নেত্রীর ওই নির্দেশ সমর্থকরা কতটা মানবেন, তা নিয়ে বুধবারই সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
সমাবেশের দিন হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন সংলগ্ন রাস্তায় ভিড় কিছুটা কমাতে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা, বিশেষত, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি থেকে লোকজনকে আগাম শহরে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ বারই প্রথম সমাবেশের তিন দিন আগেই দুই স্টেশনে শিবির খোলা হয়েছে। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক অলক দাস জানিয়েছেন, এ দিন ভোরে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসে কোচবিহার ও দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রত্যন্ত প্রান্ত থেকে লোকজন শহরে আসতে শুরু করেছেন। তাঁদের শহরের বিভিন্ন ধর্মশালায় রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিয়ালদহের শিবির সকাল থেকে তদারকি করেছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। মন্ত্রী আব্দুল করিম চৌধুরী জানান, আজ, বৃহস্পতিবার থেকেই উত্তর দিনাজপুরের কর্মী-সমর্থকেরা কলকাতায় আসতে শুরু করবেন।
রাজ্যের নানা স্থান থেকে কর্মী-সমর্থকদের শহরে আনার ব্যবস্থা তিন দিন আগে থেকে করার কারণ জানিয়ে দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, অন্যান্য বার সমাবেশের দিন একই সঙ্গে বিভিন্ন জেলা থেকে লোক আসত। এর ফলে হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন সংলগ্ন বিভিন্ন রাস্তায় ব্যাপক ভিড় এবং যান চলাচলে বিঘ্ন হত। এ বার আগেভাগে সমাবেশে যোগদানকারীদের বড় একটা অংশ শহরে এসে যাওয়ায় কিছুটা হলেও ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় ও দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি আলোচনা করে সমাবেশে মিছিলের পথ ঠিক করে দলীয় নেতৃত্বকে নির্দেশ দিয়েছেন। এক প্রথম সারির নেতার কথায়, “সমাবেশে ভিড় হবেই। কিন্তু সেই ভিড়ের রেশ ধর্মতলা ও সংলগ্ন এলাকায় সীমাবদ্ধ রাখতেই চেষ্টা করব।”
জনজীবন স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি সমাবেশ ঘিরে কোনও বাড়তি ‘বাহুল্যও’ চান না মমতা। শহরে দৃশ্যদূষণ আটকাতে ক্ষমতায় আসার পর গত বার সমাবেশের প্রচার সংক্রান্ত হোর্ডিং তাঁর নির্দেশে ২১ জুলাইয়ের আগে খুলে ফেলা হয়েছিল। এ বার প্রথম থেকেই দলনেত্রীর নির্দেশে শহিদ দিবসের সমাবেশের প্রচার নিয়ে ‘সংযত’ তৃণমূল নেতৃত্ব। নেতাদের বক্তব্য, “এ বার আমরা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় শহিদ দিবসের সমাবেশ নিয়ে আগের থেকে বেশি সভা করেছি। ফলে ব্যানার-হোর্ডিংয়ে শহরের মুখ ঢাকার দরকার হয়নি।” |