‘আনন্দ’হীন মুম্বইয়ের ছায়া মহানগরেও
তাঁর মৃত্যুসংবাদের সঙ্গে একাকার হয়ে গিয়েছে সেলুলয়েডের সেই মৃত্যুদৃশ্য। চার দশক ধরে যা দর্শকদের কাঁদিয়ে চলেছে। কিন্তু খোদ রাজেশ খন্না না কি কোনও মতে হাসি চেপে রেখেছিলেন। শট ‘ওকে’ হতেই সহ-অভিনেত্রী সুমিতা সান্যালকে যিনি বলবেন, “করছিলেনটা কী! আমার বুকে হাত বুলিয়ে কান্নাকাটির সময়ে যা সুড়সুড়ি লাগছিল!”
‘আনন্দ’ ছবির সঙ্গে আজকের কলকাতার নিবিড়তম সুতো সুমিতাদেবীই। মঙ্গলবার দিনভর লেক গার্ডেন্সের বাড়িতে ‘রাজেশজি’র এই দুষ্টুমি ভরা রসবোধের কথাই তাঁর মনে পড়ছিল। সেই সঙ্গে বলিউডের তখনকার এক নম্বর সুপারস্টারের দুর্লভ ভদ্রতা ও সৌজন্যও তাঁর স্মৃতিতে খোদাই হয়ে রয়েছে।
‘আনন্দ’ ছবিতে ভাঙা-ভাঙা বাংলায় সংলাপই কি রাজেশ খন্নাকে বাঙালি হৃদয়ের এতটা কাছে এনে ফেলেছিল? না কি ‘অমর প্রেম’-এর ধুতি-পাঞ্জাবি শোভিত সুবেশ ‘বাঙালি’ নায়কই করল বাজিমাত? পাড়ার মোড় থেকে টালিগঞ্জের স্টুডিওপাড়া বা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে মঙ্গলবার সারা দিনই এমন জল্পনা ঘুরপাক খেয়েছে। ফেসবুকের শোকবার্তায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁকে ‘সত্তরের দশকের সাড়া-ফেলা সুপারস্টার’ বলে উল্লেখ করেছেন।
‘আনন্দ’ ছবিতে রাজেশ খন্না ও অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে সুমিতা সান্যাল
তিনি বলেছিলেন, ‘এত ভালবাসা ভাল নয়, বাবুমশাই।’ বলেছিলেন, ‘পুষ্পা, আই হেট টিয়ার্স।’ কলকাতা তাঁর কোনও কথাই ‘শোনেনি’। তাই সারা দেশের মতো ‘কাকা’র জন্য এই মহানগরীতেও সাইবার-দেওয়ালে শোকোচ্ছ্বাস, টালিগঞ্জে থমকে যায় শু্যটিং। এ দিন দুপুরে একটি ছবির নাচের দৃশ্যের ফ্লোরে খবরটি পান ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। গোটা ইউনিটে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে নীরবতা নেমে আসে। দুপুরটা আরও এক বার টিভি-তে ‘আরাধনা’ দেখে কাটিয়েছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। তাঁর হিসেবে, “এই নিয়ে ৪৫ বার হল।”
বাঙালি ও রাজেশের সম্পর্কের রসায়ন উঠে এসেছে ঋতুপর্ণ ঘোষের টুইট-বার্তায়। সিনেমার ‘কিউপিড’-এর স্মরণে যিনি লিখেছেন, “ধুতি-পাঞ্জাবিতে বাঙালির শৌর্যের বিজ্ঞাপন তো তুমিই ভারতকে দেখালে!” প্রবীণ মৃণাল সেনের আফশোস, “রাজেশ এবং আমি দু’জনেই মুখিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত আমাদের একসঙ্গে কাজ করা হল না।” বাবা বিশ্বজিতের বন্ধু রাজেশের বিদ্যাসাগরী চটির প্রতি গভীর দুর্বলতার খবর দিয়েছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। রোম্যান্টিক নায়কের চরিত্রে অভিনয়ের সময়ে ‘কাকা’র প্রতি ঋণ তিনি অকপটে স্বীকার করছেন।
‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ খ্যাত অনীক দত্তের মতে, অভিনেতা রাজেশকেও ছাপিয়ে গিয়েছেন এই নায়ক রাজেশ। গুরু পাঞ্জাবি কিংবা কান-ঢাকা চুলে ‘কাকা’র যাবতীয় ভাব-ভঙ্গিই গিলে খেয়েছে বাঙালি। বাংলা ছবির হিন্দি-রিমেক ‘সফর’, ‘অনুরোধ’, ‘বাওয়ার্চি’ বা ‘অমর প্রেম’-এও বারবারই তাঁর কথা মনে পড়েছে পরিচালকদের। ‘হেমলক সোসাইটি’র ক্যানসারে আক্রান্ত আনন্দ করের মধ্যেও রাজেশের আনন্দের স্মৃতিই উস্কে দিতে চেয়েছিলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়।
তাঁর কথায়, “রোম্যান্টিক ইমেজের হাত ধরে উত্তমকুমার ছাড়া রাজেশই বাঙালির এতটা কাছের লোক হতে পেরেছিলেন।” পর্দায় ‘বাবুমশাই’ না হয়েও যিনি বরাবরের মতো বাঙালির মনে ‘বাবুমশাই’ হয়েই থেকে গেলেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.