তিন দিন ধরে ধোঁয়ানো ক্ষোভ রুখতে শেষমেশ দূরশিক্ষার ছাত্রদের উপরে লাঠি চালাতে হল পুলিশ এবং র্যাফ-কে। যদিও পুলিশ তা স্বীকার করেনি। ছাত্র সংগঠন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী-আধিকারিকদের একটা বড় অংশ মনে করছেন, কড়া না হলে অনর্থ ঘটত।
কয়েক দিন আগেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে দূরশিক্ষা পাঠ্যক্রমের এমএ এবং এম কম পার্ট-১ পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে। অকৃতকার্য পড়ুয়াদের আগামী ১৯ অগস্ট ফের পরীক্ষা দিতে হবে বলে জানানো হয়েছে। পড়ুয়াদের ক্ষোভ, সবে তাঁরা ফল জেনেছেন। এখনও মার্কশিট হাতে পাননি। এখনই পরীক্ষা দিতে হলে ফের বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। পরীক্ষা অন্তত এক মাস পিছোনোর দাবিতে দু’দিন ধরেই তাঁরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। |
এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা হাজারখানেক ছাত্র দূরশিক্ষা দফতরের কাছে জড়ো হন। উপাচার্যকে তাঁদের সঙ্গে দেখা করে সকলকে পাশ করানোর প্রতিশ্রুতি দিতে হবে বলে তাঁরা দাবি জানাতে থাকেন। পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। কিছু ছাত্র দফতরের ভিতরে ঢুকে পড়েন। দফতরের সমস্ত কাউন্টার বন্ধ করিয়ে দিয়ে কর্মী ও আধিকারিকদের নিগ্রহ করা হয় বলে অভিযোগ। এক কর্মী মার খান। এর পরেই পুলিশ ও র্যাফ দফতরে ঢোকে। তাড়া করে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের বের করে দেওয়া হয়।
দূরশিক্ষা দফতরের সহ-অধিকর্তা নবকুমার ঘোষের অভিযোগ, “এক কর্মীকে পরীক্ষার্থীরা প্রচণ্ড মারধর করেন। ছাত্রদের ফর্ম দেওয়ার কাজ চলছিল। কিন্তু সমস্ত কাউন্টার বন্ধ করিয়ে দেওয়া হয়। দোতলায় উঠে সহ-অধিকর্তা (প্রশাসন) যাদবকুমার রায়কে ধাক্কা মেরে ফেল দেন কিছু পরীক্ষার্থী। আমাকেও ধাক্কা মারা হয়।” দু’দিন ধরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তৃণমূল প্রভাবিত বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাবন্ধু সমিতির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম মুখোপাধ্যায়। তাঁকেও নিগ্রহ করা হয় বলে অভিযোগ। নবকুমারবাবু বলেন, “বাধ্য হয়ে আমরা পুলিশে খবর পাঠাই। তারাই পরিস্থিতি সামাল দেয়। অন্তত ১০ দিন দূরশিক্ষা বিভাগে পুলিশ মোতায়েনের আবেদন জানিয়ে বর্ধমান থানায় চিঠি লিখেছি।” |
পরীক্ষার্থীরা অবশ্য অভিযোগ করেন, পুলিশ বেধড়ক লাঠিপেটা ও গালিগালাজ করেছে। তাদের লাঠিতে কয়েক জন ছাত্র আহত হয়েছেন। বর্ধমানের পুরাতনচকের আমিরুদ্দিন খান ঘাড়ে চোট পেয়েছেন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দখলে থাকা ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সন্তু ঘোষ ও সভাপতি নির্ভীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “পরীক্ষার্থীদের উপরে লাঠি চালানো বর্বরতা। উপাচার্যের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছি। আলোচনা করেই সমস্যা মেটানো যেত।”
সীতারামবাবু অবশ্য মনে করেন, “পুলিশ উচিত কাজই করেছে। তা না হলে বড় রকমের গোলমাল বাধত। দূরশিক্ষা দফতরে ভাঙচুর হত।” পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জার দাবি, “লাঠিচার্জ করা হয়নি। ওই পরীক্ষার্থীদের দফতর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় বড় অশান্তি হত। পুলিশকে বাধ্য হয়েই কিছুটা কড়া পদক্ষেপ করতে হয়েছে।” |