নির্বাচনের সময় এসে অনেকেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অথচ গত ৩৪ বছরে এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল হয়ে পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ। তার জেরে গত রবিবার রাত থেকে দু’ দিন জলবন্দি হয়ে পড়েছিলেন ডামগ্রাম ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ডিমডিমা এলাকার বাসিন্দারা। মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব এলাকায় গেলে তাঁর কাছে এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় এক গৃহবধূ। এমনকী এলাকায় মন্ত্রীকে আসতে নিষেধ করেন তিনি। তা নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথা কাটাকাটিও হয়। সমস্যা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতেই মন্ত্রী এসেছেন বলে পরে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে বোঝালে শান্ত হন। মন্ত্রী তাঁকে বলেন, “আপনার অভিযোগ থাকলে জানাতে পারেন। কিন্তু আমি এলাকায় আসব না, আপনি এ কথা বলতে পারেন না। গত ৩৪ বছর আপনারা বামফ্রন্টকে জিতিয়েছেন। তাঁরা কোনও কাজ করেনি। আমরা ১ বছর হল ক্ষমতায় এসেছি। আমাদের কাজ করতে দিন। কাজ করার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করবেন না।” পরে ওই মহিলা ইন্দিরা খাতা বলেন, “এলাকার নিকাশি যাতে ঠিক হয় সে কথাই মন্ত্রীকে জানাতে চেয়েছি।” এলাকার বাসিন্দা অমলি পাসোয়ান, লিনা বাহাদুর মুখিয়ারা জানান, এত দিন কোনও মন্ত্রী এলাকায় আসেননি। গৌতমবাবু এলাকার বাসিন্দাদের সমস্যা দেখতে আসায় তাঁরা আশাবাদী। |
ভাঙা সেতু পরিদর্শনে গৌতম দেব। —নিজস্ব চিত্র। |
গৌতমবাবু জানান, ওই এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থার বিষয়টি তিনি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন। গৌতম দেবের বিধানসভা কেন্দ্রে থাকা ওই পঞ্চায়েত বরাবরই সিপিএমের ক্ষমতায়। ওই এলাকা লাগোয়া পুরসভার ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএম নেতা দিলীপ সিংহ বলেন, “শুরু থেকেই আমরা এই পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় আছি। অনেক কাজও হয়েছে। পঞ্চায়েতের সীমিত ক্ষমতায় অনেক কাজ করা সম্ভবও হয়নি। পুর এলাকা লাগোয়া এই সমস্ত জায়গায় বাসিন্দাদের চাহিদা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার লোকজনের চেয়ে বেশি। সেটাও বুঝতে হবে।” এ দিন ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের নেতাজিনগর এলাকায় মহানন্দার বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পরিদর্শন করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। রবিবার নদীর জল বেড়ে বাঁধের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উদ্বেগে রয়েছেন এলাকার বাসিন্দা অর্চনা রায়, শ্রীরাম সাহা, শর্মিষ্ঠা মোহন্তরা। আপাতত সাময়িক ভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হলেও বর্ষার পর ওই বাঁধ সংস্কারের জন্য তিনি সেচ দফতরের সঙ্গে কথা বলবেন। এ দিন বাঁধের অংশ মেরামতের কাজ শুরুও হয়েছে। এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা, রাস্তাঘাটের হাল ফেরাতে পুরসভা উদ্যোগী হচ্ছে না দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন গৌতমবাবু। ডাবগ্রাম ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের শিবনগর এলাকায় এবং সেখানে থেকে পরে হাতিয়াডাঙা জলে ভেঙে যাওয়া একটি কাঠের সেতু দেখতে যান। সেতু ভেঙে বাসিন্দাদের, বিশেষ করে স্কুলের পড়ুয়াদের যাতায়াতের সমস্যা হচ্ছে বলে তাঁরা মন্ত্রীকে জানান। গৌতমবাবু ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। শিলিগুড়ি পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের অম্বেডকর কলোনির একাংশ মঙ্গলবারও জলবন্দি ছিল। ক্ষতি দেখতে বাস্তুকারদের নিয়ে একটি টিম তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। বুধবার থেকেই তারা বিভিন্ন এলাকায় যাবে। মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের দেওয়ার জন্য জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিঙের জেলাশাসকের কাছে শাড়ি, জামা, বাচ্চাদের পোশাক চাওয়া হয়েছে। ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাশি ব্যবস্থাও দেখা হবে। বাম জমানায় দীর্ঘদিন ধরেই সেভাবে রাস্তাঘাট, নিকাশি তৈরির কাজ হয়নি। আমরা তা করার চেষ্টা করছি।” |