এ বার শিলিগুড়িতে পুলিশ কমিশনারেট করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সোমবার মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমতি সাপেক্ষে ঠিক হয়েছে, সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ৩ অগস্ট শিলিগুড়িতে পুলিশ কমিশনারেট উদ্বোধন হবে। ক্ষমতায় আসার পরে তৃণমূল জোট সরকার রাজ্যে ইতিমধ্যেই হাওড়া, বিধাননগর, ব্যারাকপুর এবং আসানসোল-দুর্গাপুরে পুলিশ কমিশনারেট করেছে।
আনুষ্ঠানিক ভাবে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) গঠনের সম্ভাব্য তারিখ ৪ অগস্ট। তার আগের দিন বিকেলেই শিলিগুড়িবাসীকে পুলিশ কমিশনারেট উপহার দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশ সূত্রের খবর, আপাতত পুলিশ কমিশনারের সদর দফতর হবে শিলিগুড়ির মাল্লাগুড়ির পুলিশ লাইন সংলগ্ন অফিস চত্বরে। ঘটনাচক্রে, ওই জায়গাতেই রয়েছে দার্জিলিঙের ডিআইজি আনন্দ কুমারের অফিস। তিনিই নতুন পুলিশ কমিশনার হতে পারেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। বছরের গোড়ায় উত্তরবঙ্গ উৎসবের সময় কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে খোদ মুখ্যমন্ত্রীই ঘোষণা করে দিয়েছিলেন যে, শিলিগুড়িতে কমিশনারেট হলে আনন্দ কুমারই পুলিশ কমিশনার হবেন। পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ি, প্রধাননগর ও মাটিগাড়া থানা এবং বাগডোগরা ফাঁড়ি ছাড়াও লাগোয়া জলপাইগুড়ির ভক্তিনগর থানা ও নিউ জলপাইগুড়ি ফাঁড়ি নয়া পুলিশ কমিশনারের আওতায় থাকবে। প্রথম পর্যায়ে দু’জন ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) থাকবেন। একজন ডিসি (ইস্ট) ও অন্য জন ডিসি (ওয়েস্ট)। পাশাপাশি, বর্তমানে শিলিগুড়িতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন অফিসার রয়েছেন। তাঁকে অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ ছাড়াও ডেপুটি পুলিশ সুপাররা রীতি মেনে অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনার হিসেবে কাজ করবেন।
তবে, যে চারটি পুলিশ কমিশনারেট এর আগে হয়েছে, সেগুলিতে পরিকাঠামো নিয়ে নানা সমস্যা রয়েছে। এমনকী, অনেক ক্ষেত্রে কমিশনারেট হওয়ার পরেও পুলিশি পরিষেবার মান কতটা উন্নত হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এই অবস্থায় শিলিগুড়ির ক্ষেত্রে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে?
পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, প্রথমত জলপাইগুড়ি জেলার মধ্যে থাকা ভক্তিনগর থানা ও নিউ জলপাইগুড়ি ফাঁড়িকে কমিশনারের আওতায় নিতে গেলে কলকাতা হাইকোর্টের অনুমতি প্রয়োজন। কারণ, বিধি অনুযায়ী ওই দু’টি থানার সব মামলা জলপাইগুড়ি আদালতে হয়। কমিশনারেটের আওতায় গেলে সব মামলা শিলিগুড়ি আদালতে স্থানান্তরিত হওয়ার কথা। সরকারের একটি সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে আইন দফতর কলকাতা হাইকোর্টের অনুমতি নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। উত্তরবঙ্গের এক পুলিশ কর্তা জানান, যে হেতু কমিশনারেট হলে প্রাথমিক ভাবে সামান্য হলেও অফিসার-কর্মীর সংখ্যা বাড়বে, সে জন্য মামলার তদন্তের কাজও আগের চেয়ে কিছুটা হলেও দ্রুত হবে। সে জন্যই কলকাতা হাইকোর্টের অনুমতি পেতে অসুবিধে হবে না বলে ওই পুলিশ কর্তার ধারণা।
কমিশনারেট হলে সাধারণ মানুষের কী সুবিধে হবে?
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যে হেতু অফিসারের সংখ্যা বাড়বে, তাই যে কোনও ঘটনার তদন্ত ও তদারকি আগের থেকে ভাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একই সঙ্গে কমিশনারেটের অধীনে ‘গ্রিন পুলিশ’ নিয়োগের সংস্থান থাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের গতি ও দক্ষতাও বাড়ার কথা। পাশাপাশি, বেশ কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ প্রশাসন তথা জেলাশাসক কিংবা মহকুমাশাসকদের কাছ থেকে যে সব ব্যাপারে লাইসেন্স নিতে হয়, তা পুলিশ কমিশনারই দিতে পারবেন। ফলে, নানা অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে বন্দুকের লাইসেন্স নেওয়ার জন্য ছোটাছুটির হাত থেকেই রেহাই মিলবে। কারণ, ওই অনুমতি সরাসরি পুলিশ কমিশনারই দেবেন।
এমন নানা জল্পনা হলেও বাস্তবে পুলিশের ভোল রাতারাতি পাল্টে যাওয়ার আশা করা ঠিক হবে না বলে পুলিশ কর্তাদের অনেকেরই মত। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের একজন শীর্ষ কর্তার কথায়, “গোড়ায় কিছু সমস্যা সব নতুন পুলিশ কমিশনারেটেই হচ্ছে। শিলিগুড়িতেও হবে। তবে একবার চালু হলে ধীরে ধীরে ভুলত্রুটি শুধরে তা আরও উন্নত মানের পুলিশি পরিষেবা দিতে পারবে।” |