শ্রেণিগত ও অর্থনৈতিক বৈষম্য যাতে ক্লাসরুমে ছাত্র ও শিক্ষকের মধ্যে বিভেদ তৈরি না-করে, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। মঙ্গলবার প্রতীচী ট্রাস্ট এবং পাঁচটি প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন আয়োজিত আলোচনাসভায় এ কথা জানান তিনি।
বিভিন্ন সময়ে প্রতীচী ট্রাস্টের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সমাজের পিছিয়ে পড়া বা আর্থিক ভাবে দুর্বল পরিবার থেকে আসা শিশুর প্রতি অনেক শিক্ষকই মনোযোগ কম দেন। তাদের সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষাতেও এই প্রবণতা ধরা পড়েছে। যদিও সমস্যা আগের থেকে কিছু কম। তা সত্ত্বেও দেখা গিয়েছে, কোনও একটি ক্লাসের যত পড়ুয়া পড়তে-লিখতে পারে না, তাদের একটা বড় অংশই তফসিলি জাতি, উপজাতি বা অন্য কোনও পিছিয়ে পড়া শ্রেণি থেকে এসেছে।
অমর্ত্যবাবু এ দিনের অনুষ্ঠানে বলেন, “শিক্ষকদের শ্রেণিগত পরিচয়ের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে ছাত্রের শ্রেণির পার্থক্য থাকে। এখন শিক্ষক-শিক্ষিকারা যে-বেতন পান, সেটা যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু তাতে পড়ুয়াদের সঙ্গে তাঁদের অর্থনৈতিক বিভেদ তৈরি হতে পারে। এটা আমাদের নিজেদেরই সতর্ক ভাবে এড়িয়ে চলতে হবে।” শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আচরণেই শুধু নয়, তাঁদের সাজ-পোশাকেও অনেক সময় এই ফারাক নজরে পড়ে।
প্রতীচী ট্রাস্ট ছাড়াও এ দিনের আলোচনাসভার আয়োজনে ছিল পাঁচটি শিক্ষক সংগঠন। বাম ও অ-বাম বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী সংগঠনগুলির এই যৌথ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন অমর্ত্যবাবু। প্রতীচী ট্রাস্টের প্রকল্প আধিকারিক কুমার রাণাও বলেন, “শিক্ষকদের এই যৌথ প্রয়াস শিক্ষার অগ্রগতিতে সহায়ক হবে। এটা একটা সদর্থক ব্যাপার।”
এ দিনের আলোচনাসভায় ‘ভারতে প্রাথমিক শিক্ষার সমস্যা ও শিক্ষক সংগঠনের ভূমিকা’ বিষয়ে বক্তৃতা দেন অমর্ত্যবাবু। সেখানে তিনি শিক্ষার মানোন্নয়নের উপরে জোর দেন। অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে শিক্ষার মান যে বেশ অনুন্নত, সে-কথা জানানোর পাশাপাশি ওই অর্থনীতিবিদ বলেন, “পরিবর্তন তো নানা রকম হতে পারে। তবে আমরা যে-ধরনের পরিবর্তন চাই, সেটা হল শিক্ষার মানোন্নয়ন।” |