|
|
|
|
একশো দিনের প্রকল্পে অর্থসঙ্কট, বাড়ছে সংশয় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
একশো দিনের কাজ-প্রকল্পে অর্থ নেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। ফলে, এই প্রকল্পে গতি মন্থর হয়ে পড়েছে। তার উপরে সামনেই বর্ষা। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের আশঙ্কা, এই প্রকল্পে এ বার সব কর্মপ্রার্থীকে হয়তো কাজ দেওয়া যাবে না। সংশয় উন্নয়ন-কাজ ত্বরান্বিত করা নিয়েও। টাকা না থাকায় বেশিরভাগ ব্লকই নতুন কাজে উৎসাহ হারাচ্ছে। কোথাও কোথাও যতটুকু যা কাজ হচ্ছে তা-ও ‘পরে টাকা দেওয়া হবে’ এই আশ্বাসে। একশো দিনের প্রকল্পে জেলার নোডাল অফিসার প্রিয়াঞ্জন দাস বলেন, “টাকা চাওয়া হয়েছে। টাকা পেলেই ব্লকগুলিকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”
চলতি বছরে এই প্রকল্পে ৯৩ কোটি টাকা পেয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে খরচ হয়েছে তার থেকে অনেক বেশি। প্রশাসনের দাবি, কাজ করিয়েও প্রায় ৪০ কোটি টাকা দেওয়া যায়নি। টাকা পেলে মজুরদের কাছে ধার মেটানো যাবে। এ কথা জানিয়ে অর্থও চাওয়া হয়েছিল। চলতি সপ্তাহে সরকার আরও ২০ কোটি টাকা দিয়েছে। যদিও এখনও সেই টাকা ব্লকগুলিকে দেওয়া যায়নি। প্রশাসনিক কর্তাদের কথায়, ২০ কোটি টাকা দিলেও আরও ২০ কোটি টাকা ধার থাকবে। তা হলে নতুন-প্রকল্প করা যাবে কী করে? তাই যে-সব ব্লক বা গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি সক্রিয়, সেগুলিই সমস্যায় পড়ছে বেশি। যেমন ডেবরা ব্লকে ধার রয়েছে ১ কোটি ১২ লক্ষ। তার পরেও কাজের দাবি মেনে কাজ দিতে হচ্ছে। কিন্তু টাকা না থাকায় প্রশাসন নিজেরা উদ্যোগী হয়ে নতুন কাজ শুরু করতে পারছে না। ডেবরার বিডিও মালবিকা খাটুয়া বলেন, “কাজ তো করতেই হবে। সকলকেই বলা হয়েছে, কাজ করুন, টাকা পেলেই দিয়ে দেওয়া হবে।” সাঁকরাইলের বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতেও টাকা নেই। বিডিও সৌরভ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “পর্যাপ্ত টাকা না থাকলে তো পঞ্চায়েত বা বিভিন্ন দফতরে কাজের গতি আসবে না। মানুষ কাজ চাইলে দিতেই হবে। সকলে কেবল সেই চেষ্টাই করছে। কিন্তু টাকা বেশি থাকলে নতুন নতুন পরিকল্পনা করা যেত।” কিন্তু টাকা না থাকায় নতুন পরিকল্পনার অভাবে উন্নয়নও চলছে শম্বুক গতিতে।
কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো ‘পিছিয়ে পড়া’ ও ‘মাওবাদী প্রভাবতি’ জেলা টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কেন? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই জেলাতেও প্রায় ৯ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। যা খরচ করা যায়নি। সেই রিপোর্টই বড় করে দেখা হয়েছে। কিন্তু ওই টাকা যে জেলার ৩৪১টি জায়গায় পড়ে রয়েছে, সেটা কেউ খতিয়ে দেখেনি। জেলার ২৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ২৯টি পঞ্চায়েত সমিতি, বন দফতর, সেচ-সহ একাধিক দফতর একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করে। তাতে দেখা যাচ্ছে কোনও দফতরে বা পঞ্চায়েতে হয়তো ৫-১০ লক্ষ টাকা পড়ে রয়েছে। কিন্তু বাকি যে সব পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতি কাজ করেছে সেখানে টাকা পড়ে নেই। উল্টে নতুন কাজ হচ্ছে না অর্থ-সঙ্কটে। কোনও একটি পঞ্চায়েত বা দফতরে টাকা পড়ে থাকলে অন্যগুলি অর্থ পাবে না কেন? শুধু তাই নয়, প্রশাসনের বক্তব্য, এই প্রকল্পে ৬০ শতাংশ টাকা খরচ হলেই টাকা চাওয়া যায় ও পাওয়া যায়। এই হিসাব এমআইএস-এ (ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) দেখাতে হয়। ওয়েবসাইটে-র এমআইএস থেকেই রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার খরচের হিসাব দেখতে পারে। প্রশাসনিক হিসাব অনুযায়ী, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ৬৪ শতাংশ খরচ এমআইএস-এ তোলা হয়ে গিয়েছে। প্রতি দিনই এ ভাবে খরচের হিসাব তোলা হয়। তবু টাকা পায়নি জেলা। টাকা না থাকায় গরমে কাজ করা যায়নি। এ বার বর্ষা এসে গিয়েছে। বর্ষায় এমনিতেই এই প্রকল্পে কাজ সে ভাবে করা যায় না। বর্ষা পেরোলেই নির্বাচন-সংক্রান্ত কাজও শুরু হয়ে যাবে। কারণ, পঞ্চায়েত নির্বাচনে খুব আর দেরি নেই। ফলে তখনও একশো দিনের প্রকল্প নিয়ে প্রশাসনিক আধিকারিকেরা কতটা মাথা ঘামাতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। ফলে বঞ্চিত হবেন সাধারণ মানুষ, ব্যাহত হবে উন্নয়ন। |
|
|
|
|
|