গ্রিন হাউসের ধাঁচে এ বার ‘পলি হাউস’।
প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে ফসল বাঁচাতেই ‘পলি হাউস’ গড়বে রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহাকরণে এ কথা জানান। তিনি বলেন, “দক্ষিণ ২৪ পরগনার আয়লা-বিধ্বস্ত এলাকার বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষামূলক ভাবে ১০০টি পলি হাউস তৈরি করা হবে। এই প্রকল্প সফল হলে তা ছড়িয়ে দেওয়া হবে সারা রাজ্যে।”
পলি হাউস কী?
রাজ্যের কৃষি ও উদ্যান পালন দফতর সূত্রের খবর, গ্রিন হাউসের ধাঁচে পলিথিন শিট দিয়ে ঢাকা চাষের কাঠামোকেই বলা হয় ‘পলি হাউস’। প্রায় ২০০ বর্গমিটার জমি মাটি দিয়ে উঁচু করে ওই হাউস তৈরি করা হবে। সেখানে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে কাঠামো তৈরি করে তার উপরের অংশ ঢেকে দেওয়া হবে পলিথিন দিয়ে। কীট-প্রতিরোধী মশারি দিয়ে ঢাকা হবে চার পাশ। উদ্যান পালন বিভাগের এক কর্তা বলেন, “পলি হাউস আসলে আচ্ছাদনের ভিতরে নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়ায় চাষের পদ্ধতি। মহারাষ্ট্রে এটা যথেষ্ট জনপ্রিয়। এতে ঝড়, বৃষ্টি ও বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম। এতে ফসলের উৎপাদনও বাড়ে।”
এ দিন মহাকরণে সব্জির দাম নিয়ন্ত্রণে তৈরি টাস্ক ফোর্সের সঙ্গে বৈঠকের পরে এই নতুন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আয়লায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেই জন্যই ওই জেলাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। বন্যা বা ঝড়ে পলি হাউসের ফসল নষ্ট হবে না।” যদিও আয়লার মতো ঝড়ের সামনে ওই কাঠামো আদৌ টিকবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। কৃষি দফতরের কর্তাদের দাবি, “প্রবল ঝড়ের কথা মাথায় রেখে এখানে লোহার টিউব দিয়ে কাঠামো তৈরি হবে। ওই কাঠামো দাঁড়িয়ে থাকবে কংক্রিটের উপরে। তবে ভয়ঙ্কর বিপর্যয় হলে কী হবে, বলা কঠিন। সাধারণ ভাবে ফসল যতটা বাঁচানো যেত, এ ক্ষেত্রে তার থেকে অনেক বেশি বাঁচানো যাবে।”
|
ইতিমধ্যেই দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এই পদ্ধতিতে চাষের জন্য কৃষকদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গিয়েছে বলে কৃষি দফতর সূত্রের দাবি। প্রাথমিক ভাবে জেলার ২১০০ জন কৃষক এই পদ্ধতিতে চাষের জন্য আবেদন জানান। সেখান থেকে ২০০ জনের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ১০০ জনকে পলি হাউস তৈরির জন্য অনুদান দেবে সরকার। প্রতিটি পলি হাউস তৈরিতে খরচ পড়বে দু’লক্ষ টাকা। এর মধ্যে রাজ্য সরকার দেবে এক লক্ষ। বাকিটা দেবেন সংশ্লিষ্ট কৃষক। পলিহাউসে বেগুন, কলা, ঢেড়স, লঙ্কা, টম্যাটোর মতো সব্জি উৎপাদন করা যাবে।
কিন্তু কলা বা ঢেড়সের মতো বারো মাসের কম দামি ফসল পলি হাউসে চাষ করে কৃষকের কোনও আর্থিক সুবিধা হবে কি?
কৃষি আধিকারিক মনে করেন, পলি হাউসের চাষ আর্থিক ভাবে লাভজনক হবে বলেই সরকার এই প্রকল্পে ঝাঁপিয়েছে। এবং কৃষকেরাও আগ্রহী হয়েছেন। কিন্তু সাধারণত ব্রকোলি, রঙিন ক্যাপসিকাম বা ওই ধরনের দামি ফসল গ্রিন হাউসে চাষ করা হয়। কারণ গ্রিন হাউস তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষণে যে-খরচ হয়, তাতে সস্তার ফসল চাষ করাটা কৃষকের পক্ষে লাভজনক হয় না।
মাঠের ফসল তাজা অবস্থায় দ্রুত বাজারে পৌঁছে দেওয়ার উপায়ও ভাবছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “বাজারে নিয়ে আসার পথে অনেক ফসল নষ্ট হয়। এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় ‘মোবাইল কুল ভ্যান’ তৈরি করার কথা ভাবা হচ্ছে। রাজ্যসভার সদস্যদের কোটার টাকায় ১০০টি ‘কুল ভ্যান’ তৈরির জন্য, কৃষি ও কৃষি বিপণন দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
শাকসব্জির বাজারদর প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, “টাস্ক ফোর্স ভাল কাজ করছে। এর ফলে গত কয়েক দিনে সব্জির দাম অর্ধেক কমেছে। আলুর দামও কমেছে কিছুটা। নজরদারি না-চালালে অন্যান্য বছরের মতো দাম আরও বাড়ত। সেটা হয়নি। হিমঘরে এখনও বেনামে আলু রাখা হচ্ছে। সেগুলি বাজারে ছাড়ার ব্যবস্থা করতে বলেছি।” টাস্ক ফোর্স সক্রিয় হওয়ার ফলে ফড়েরা হাত গুটিয়ে নিয়েছে। তাতে চাষির ফসল যথেষ্ট পরিমাণে বাজারে পৌঁছচ্ছে না। এতে বাজারের সঙ্কট যেমন ঘনিয়ে উঠছে, তেমনই কৃষকেরা সব্জির ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। এই নিয়ে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী এ দিন কোনও মন্তব্য করেননি। ১ অগস্ট ফের টাস্ক ফোর্সের বৈঠক হবে।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিনও সারের উপর থেকে ভর্তুকি তুলে দেওয়ার কেন্দ্রীয় নীতির বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, “সারের দাম বাড়ায় কৃষকেরা সমস্যায় পড়েছেন। তাঁরা আত্মহত্যা করছেন। কেন্দ্রের কাছে আবেদন, সারের উপর থেকে বিনিয়ন্ত্রণ ফেরানো হোক। সারে ভর্তুকি দেওয়া জরুরি। কেন্দ্র কৃষকদের সাহায্য করুক।” |