রেলে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে বসিরহাট থানা চত্বর থেকে গ্রেফতার করা হয় হিঙ্গলগঞ্জের মাধবকাটি গ্রামের স্বপন মণ্ডলকে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বসিরহাটের আস্তানা রোডের বাসিন্দা সন্দীপ মৃধার খোঁজ পায় পুলিশ। ওই রাতেই সন্দীপকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার ধৃতদের বসিরহাট এসিজেএমে তোলা হলে বিচারক ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক বছরে রেলে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণায় একটি চক্র বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। রেলে চাকরির নকল ফর্ম ফিলাপ করিয়ে ইন্টারভিউয়ের কাগজ হাতে দেওয়ায় প্রতারকদের বিশ্বাস করে টাকা দিয়েছিল বেশ কয়েকজন বেকার ছেলেমেয়ে। বেশ কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে স্বপনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ আসছিল। এ দিন স্বপন মণ্ডলকে বসিরহাট থানার কাছে পেয়ে কয়েকজন বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। বিক্ষোভকারীদের জিজ্ঞাসাবাদের পর বিষয়টি জানা যায়। তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে স্বপনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। |
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একটি বিমা সংস্থার এজেন্ট স্বপন মণ্ডল বিজেপি নেতা ছিলেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে তিনি যাদবপুর কেন্দ্র থেকে আরজেপি-র হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। বর্তমানে তিনি এনসিপি-র মহকুমা যুব সম্পাদক। সন্দীপবাবুর দাবি, তিনি এক ঠিকাদারের হয়ে শিয়ালদহ রেল কারসেডে কাজ করেন।
বসিরহাটের সাঁইপালার বাসিন্দা শান্তিরঞ্জন মণ্ডল বলেন, “রেলে চাকরি দেওয়া হবে বলে গত ২০১০-এর ১৪ নভেম্বর আমার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিল। তারপর থেকেই স্বপন পালিয়ে বেড়াচ্ছে।” হিঙ্গলগঞ্জের বাইনাড়া গ্রামের তৃণমূল নেত্রী সবিতা হাউলি বলেন, “গত ২০০৩-এ হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতিতে বিজেপি-র প্রার্থী হয়েছিল স্বপন মণ্ডল। সেই তাকে চিনি। রেলে তার যোগাযোগ আছে, বাঁধা চাকরি বলে স্বপন মণ্ডল সরকারি সিলমোহর দেওয়া ফর্ম দিয়েছিল। বিশ্বাস করে মেয়ের চাকরির জন্য তার হাতে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম।”
একই ভাবে প্রতারিত হয়েছেন পূর্ব খেজুরবেড়িয়া গ্রামের প্রসাদ মণ্ডল। তিনি নিজে তো টাকা দিয়েছিলেন, স্বপনের উপর বিশ্বাস করে নিজের কয়েকজন আত্মীয়ের চাকরির জন্য টাকা দেন। এ দিকে টাকা নিয়ে চাকরি না দেওয়ায় স্বপনের উপর চাপ বাড়ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সন্দীপকে ধরিয়ে দিতে থানায় গিয়েছিল স্বপন। তাকে দেখতে পেয়ে কয়েকজন বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। খবর পেয়ে অন্য ছেলেমেয়েরাও এসে জড়ো হয়।
জেরায় স্বপন পুলিশকে জানায়, রেলে চাকরির টোপ দিয়ে বেকার ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা নিয়ে তিনি সন্দীপ মৃধাকে দিয়েছিলেন। সন্দীপ অবশ্য জানায়, পুরো টাকার মধ্যে দু’লক্ষ টাকা তার ভাগে পড়েছিল। বাকি টাকার বেশিরভাগটাই দিতে হয়েছে রেলের হাওড়া ডিভিশনের আধিকারিক অনুপ চৌরাসিয়াকে। বাকি টাকা বসিরহাটের লাল্টু ঘোষ, তপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং গৌরাঙ্গ নষ্কর নিয়েছে বলে দাবি সন্দীপের। আত্মসাৎ করা টাকার পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করছে পুলিশ। |