|
|
|
|
ইংরেজি মাধ্যমের অনুমতি পেলেও মেলেনি শিক্ষক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
চলতি বছরে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ১৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৮ জন প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এরপরেও ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে হাওড়ার পাঁচলার গঙ্গাধরপুর বিদ্যামন্দিরে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ইংরেজি মাধ্যমে পঠন-পাঠন।
২০১০ সালে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, কিছু স্কুলে বাংলা মাধ্যমের পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমেও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে পঠন-পাঠন চালু হবে। সেইমতো রাজ্যের ৩৯টি স্কুলের সঙ্গে গঙ্গাধরপুর বিদ্যামন্দিরেও চালু হয় একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ইংরেজি মাধ্যমে পঠন-পাঠন। এর জন্য স্কুলে পৃথক বিভাগ খোলা হয়। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ এই বিভাগকে স্বীকৃতি দেয়। সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে দরিদ্র এবং মেধাবী ১৯ জন ছাত্র-ছাত্রীকে নতুন বিভাগে ভর্তি করানো হয়। ২০১০ সালে যে ১৯ জন ভর্তি হয়েছিল ইংরেজি মাধ্যমের প্রথম ব্যাচ হিসাবে তারাই এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। তাদের মধ্যে ১৮ জন যে শুধু প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে তা-ই নয়, এই স্কুলে বাংলা এবং ইংরেজি মাধ্যম মিলিয়ে সব পরীক্ষার্থীর মধ্যে সর্ব্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে ইংরেজি মাধ্যম বিভাগেরই ছাত্র। এই ১৮ জনের সকলেই বাংলা মাধ্যমে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল।
পঠন-পাঠন চালাতে সমস্যা কোথায়?
স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ইংরেজি মাধ্যমের জন্য ওই ভাষায় পারদর্শী শিক্ষক এখনও নিয়োগ করেনি রাজ্য সরকার। শুধু তাই নয়, স্কুলভবন তৈরি বা অন্যান্য খাতে একটি পয়সাও সাহায্য মেলেনি সরকারের কাছ থেকে। স্কুল শিক্ষা দফতর এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, ২০১০ সালে ইংরেজি মাধ্যমে পঠন-পাঠন চালানোর জন্য রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলের কাছ থেকে আবেদন চাওয়া হয়। সেই আবেদনের ভিত্তিতেই গঙ্গাধরপুর বিদ্যামন্দিরে ইংরেজি মাধ্যমে পঠন-পাঠন চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। বলা হয় ইংরেজি মাধ্যম বিভাগে সর্ব্বোচ্চ ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী এক একটি শিক্ষাবর্ষে ভর্তি করানো যাবে। একই সঙ্গে যে সব স্কুল ইংরেজি মাধ্যমে পঠন-পাঠন চালানোর অনুমতি পেয়েছিল, স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে তাদের বলা হয়, নতুন বিভাগে কতজন শিক্ষক লাগবে তা যেন তারা সংশ্লিষ্ট জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে জানিয়ে দেয়।
গঙ্গাধরপুর বিদ্যামন্দিরের পক্ষ থেকে হাওড়া জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে চার জন ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষক চাওয়া হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এর পরেও কেটে গিয়েছে প্রায় দু’ বছর। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই বাইরে থেকে কিছু শিক্ষক নিয়োগ করে কোনওমতে কাজ চালাচ্ছেন। স্কুল সংলগ্ন বিএড কলেজে যে সব ছাত্র-ছাত্রী পড়তে আসছেন তাঁদের অনুরোধ করা হচ্ছে, তাঁরা সময় পেলে যেন ইংরেজি মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়িয়ে দেন। এইভাবে পঠন-পাঠন চলার মধ্য দিয়েই ইংরেজি মাধ্যমের প্রথম ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়।
স্কুলের তরফে সন্তোষ দাস বলেন, “আমরা বিভিন্ন জেলা থেকে বাছাই করে গরিব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করিয়েছি। তাদের বই কিনে দেওয়া হয়েছে। হস্টেলে রেখে তাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য, এইসব ছাত্র-ছাত্রীরা ভালো ফল করলে তাদের দেখে যাতে আরও অনেকে এখানে ভর্তি হয়। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ হল না। এমনকী নতুন ভবন তৈরির জন্য একটি পয়সাও পেলাম না। আমাদের নিজেদেরই খরচ করে পঠন-পাঠন চালানোর জন্য পৃথক বাড়ি তৈরি করতে হয়েছে।”
প্রথম বছর ১৯ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হলেও পরবর্তী দু’ বছরে বেশী সংখ্যায় ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়নি। সন্তোষবাবুর অভিযোগ, “আসলে স্কুলে উপযুক্ত শিক্ষক এবং পরিকাঠামো না-থাকার কথা ছড়িয়ে পড়েছে। তার ফলে অভিভাবকেরা স্কুলে যোগাযোগ করলেও ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে পরে পিছিয়ে যাচ্ছেন। অবিলম্বে শিক্ষক নিয়োগ না-হলে ইংরেজি মাধ্যমে পঠন-পাঠন চালানো কঠিন হবে।”
ইংরেজি মাধ্যমের পক্ষে স্কুলের তরফে যিনি জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে নিয়মিত দরবার করছেন সেই শঙ্কর খাঁড়া বলেন, “জেলা স্কুল পরির্শকের কাছে সব কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। বুঝতে পারছি না কবে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে।”
হাওড়া জেলা স্কুল পরিদর্শক তাপস বিশ্বাস বলেন, “সব কাগজপত্র স্কুল সার্ভিস কমিশনে পাঠানো হয়েছে। শিক্ষক তারাই পাঠাবে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছ থেকে এখনও কোনও সুপারিশ আসেনি।” |
|
|
|
|
|