রেলে দু’পা কাটা যাওয়া রোগীর চিকিৎসা শুরু করতে টালবাহানা হল কেন, তার ব্যাখ্যা চেয়ে হাসপাতালের দু’জন চিকিৎসক ও নার্সিং সুপারকে চিঠি দিয়েছেন কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায়। তিন জনই তার জবাব দিয়েছেন বলেও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। সুপার বলেন, “চিকিৎসক ও নার্সিং সুপারের জবাব কাটোয়ার মহকুমাশাসক ও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মঙ্গলবার কাটোয়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ও লাগোয়া রেলগেটের মাঝামাঝি জায়গায় বিকেল পৌনে ৩টে নাগাদ ইঞ্জিনের তলায় পড়ে দু’টি পা কাটা যায় শিবপ্রসাদ সর্দার নামে এক যুবকের। তাঁর বাড়ি নদিয়ার তেহট্টের নফরচন্দ্রপুর এলাকায়। জখম অবস্থাতেই প্রায় চল্লিশ মিনিট রেললাইনের উপরে পড়ে ছিলেন তিনি। ঘটনাস্থলেও পৌঁছেও দাঁড়িয়ে থাকে রেলপুলিশ। স্টেশন কর্তৃপক্ষ লিখিত নির্দেশ (মেমো) না পাঠানোয় তারা আহতকে তুলতে পারেনি। অবশেষে তা এসে পৌঁছলে ভ্যানে চাপিয়ে শিবপ্রসাদবাবুকে নিয়ে যাওয়া কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে।
কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছনোর পরেও নানা টালবাহানায় আহতের উপযুক্ত চিকিৎসা শুরু হতে বেশ কিছু ক্ষণ দেরি হয় বলে অভিযোগ। শিবপ্রসাদবাবুকে রেলপুলিশ পৌঁছে দিয়ে চলে যাওয়ার পরে হাসপাতালে আসেন এক অস্থি বিশেষজ্ঞ। কিন্তু অপারেশন থিয়েটর ছিল তালাবন্ধ। প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে তালা খোলা হয়। সম্পূর্ণ অজ্ঞান করে অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীর তরফে কাউকে ফর্মে সই করে অনুমতি দিতে হবে বলে জানান চিকিৎসকেরা। পুলিশের তরফে সেই অনুমতি দেওয়ার পরে চিকিৎসা শুরু হয়।
চিকিৎসায় ‘টালবাহানার’ খবর পেয়ে সে দিন হাসপাতালে যান কাটোয়ার মহকুমাশাসক দেবীপ্রসাদ করণম। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, হাসপাতালের সুপার ছুটিতে রয়েছেন। তার জায়গায় যিনি দায়িত্বে ছিলেন, সেই বাণীব্রত আচার্যও সেই সময়ে হাসপাতালে ছিলেন না। বুধবার বিকেলে সুপার মহকুমাশাসকের সঙ্গে দেখা করেন। মহকুমাশাসক ঘটনার সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপার, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও নার্সিং সুপারকে চিঠি দিয়ে পুরো ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই মতো হাসপাতালের সুপার বৃহস্পতিবার ওই তিন জনকে চিঠি দেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বাণীব্রতবাবু ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তবে তাঁর মতে, ওই রোগীর জন্য চিকিৎসক ও নার্সেরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। আর এক চিকিৎসক ভাস্করজ্যোতি বর্মন জানিয়েছেন, রোগীকে বাঁচানোর জন্য তিনি নিজে ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে এক ইউনিট রক্ত এনে দিয়েছিলেন। ডাকা হয়েছিল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককেও। তবে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অপারেশন থিয়েটর খোলা থাকার কথা থাকলেও সে দিন বিকেলে তালাবন্ধ ছিল কেন, তার কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে এসেছিলেন রাজ্যের অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা প্রসূন ভট্টাচার্য ও স্বাস্থ্য দফতরের যুগ্ম সচিব সুবীর চট্টোপাধ্যায়। তাঁরা বলেন, “এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর না হয়, সে ব্যাপারে সুপারকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।” |