একদিনে বৃষ্টি, অন্য দিকে ভাঙনে জেরবার উত্তরবঙ্গ। সোমবার থেকে ফের নাগাড়ে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় কোচবিহারের তুফানগঞ্জে নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা করছে প্রশাসন। তুফানগঞ্জে জলবন্দি হয়ে পড়েছেন তিন হাজারেরও বেশি বাসিন্দা। বুধবার রাতে রায়ডাক নদীতে হলুদ সংকেত জারি করা হয়েছে। প্লাবিত হয়ে পড়েছে নাককাটিগছ গ্রাম পঞ্চায়েতের কিছু এলাকা। তুফানগঞ্জ পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নিউ মদনমোহন পাড়া, চর এলাকায় কয়েকশো বাড়িতে জল ঢুকে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার বালাভূত ও দেওচড়াইয়ের বালাঘাট, কুর্শামারি, মহিষমারা কুঠি, সন্তোষপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার কয়েকশো পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। ইতিমধ্যে ৪টি ত্রাণ শিবিরে দুই শতাধিক বাসিন্দা আশ্রয় নিয়েছেন। কুমারগ্রাংমের ঘোকসা নদীতে ১০০ মিটার বাঁধ ভেঙেছে।
তুফানগঞ্জ ১-এর বিডিও তাপস সিংহরায় বলেন, “ভুটান পাহাড়ে বৃষ্টির জেরে রায়ডাক ও গদাধর নদীর জল বেড়ে যাওয়ায় কিছু এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে।” প্রবল বৃষ্টিতে ভাঙন শুরু হয়েছে ডুয়ার্সের তুরতুরি এলাকায়। ইতিমধ্যে এলাকার ৫টি বাড়ি তুরতুরি নদীর ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে। আরও ১০ টি পরিবার ভাঙনের ভয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এলাকার ঘোষপাড়া ও খরিয়া বস্তির ৫০ টি পরিবার। আলিপুরদুয়ার ১-এর বিডিও সৌমেন মাইতি জানিয়েছেন, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ১৪টি পরিবারকে স্কুল বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। নদীর জল বাড়তে শুরু করায় ভাঙনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে মালদহের রতুয়া ও হরিশ্চন্দ্রপুরে। |
পাহাড়ে টানা বৃষ্টির ফলে মঙ্গলবার ও বুধবার রাতে ঘোকসা নদীতেও ব্যাপক জলস্ফীতি হয়। ১০০ মিটার বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় তুরতুরিখণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের দশালিয়া লাইন, ময়নাবাড়ি-সহ গোটা এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। অন্তত ২০০ টি বাড়ি জলমগ্ন হয়েছে। ময়নাবাড়ি চৌপথি এলাকায় রাস্তা ভাঙতে শুরু করায় তুরতুরি খন্ড গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সাথে শামুকতলা, আলিপুরদুয়ার, হাতিপোতার মধ্যে গাড়ি চলাচল ব্যাহত হয়ে পড়েছে। সেচ দপ্তরের কুমারগ্রামের সহকারী বাস্তুকার প্রণব সরকার জানিয়েছেন, ভাঙ্গন মোকাবিলায় দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
গত বছরই ভাঙনে বিপন্ন হয়ে পড়েছিল ফুলহার নদীর বাঁধ। বছর ঘুরলেও মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের মিহাহাটে বিপন্ন বাঁধের ভাঙন রোধের কাজ হয়নি। আবার রতুয়ায় তিন বছর আগে ফুলহার বাঁধ ভেঙে পড়ার পরে ভাঙন রোধের কাজ শুরু হলেও তা শেষ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ফুলহার নদীর জল বাড়তে থাকায় ভাঙনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে ওই এলাকায়। হরিশ্চন্দ্রপুরে বরাদ্দ না মেলায় ভাঙন রোধের কাজ করা যায়নি। রতুয়ায় যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে বলে সেচ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। জেলা সেচ দফতরের মহানন্দা এমব্যাঙ্কমেন্টের নির্বাহী বাস্তুকার আশিস কুমার সাহু বলেন, “হরিশ্চন্দ্রপুরের মিহাহাটে বরাদ্দের অভাবে স্থায়ী ভাঙন রোধের কাজ না হলেও অস্থায়ী ভাবে কাজ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে।” |
যদিও সেচ দফতরের আশ্বাসে সন্তুষ্ট নন হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক তজমূল হোসেন। তিনি বলেন, “মিহাহাটে ভাঙন রোধের স্থায়ী কাজের দাবিতে বিধানসভায় সরব হওয়ার পাশাপাশি সেচমন্ত্রীকেও বলেছি। কাজ হয়নি। সামান্য জল বাড়লেই অস্থায়ী কাজ তলিয়ে যাবে।” উত্তর মালদহের সাংসদ মৌসম বেনজির নূরও বলেন, “রতুয়ায় বরাদ্দ মিললেও হরিশ্চন্দ্রপুরে তা মেলেনি। বরাদ্দের চেষ্টা চলছে।” ২০০৯ সালে রতুয়ার দেবীপুরে ফুলহার বাঁধের অনেকটাই ভেঙে যায়। নাবার্ডের তরফে ভাঙন রোধে ৭ কোটি টাকা বরাদ্দও মিললেও জমির সমস্যায় নতুন বাঁধ তৈরি কাজ শুরু করতে পারেনি সেচ দফতর। কয়েক মাস আগে এলাকায় গিয়ে নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র চাষিদের কাছে আবেদন জানানোর পরে কাজ শুরু হয়। বর্ষা দোরগোড়ায় পৌঁছলেও সেই কাজ শেষ না হওয়ায় আতঙ্কে ভুগছেন বাসিন্দারা। মিহাহাটের গত বছরই বাঁধ বিপন্ন হয়ে পড়ায় ৮ কোটি টাকার পরিকল্পনা পাঠানো হয়। বরাদ্দ না মেলায় অস্থায়ী ভাঙন রোধের কাজ শুরু হয়েছে। জল বাড়তেই সেখানেও শুরু হয়েছে ভাঙন। |