বাজারে ঢোকার রাস্তায় জল-কাদায় একাকার। অবস্থা এতটাই নোংরা যে ক্রেতারা বাজারের ভিতরে ঢুকতে চাননা। ফলে ক্রেতাদের অভাবে বিক্রিবাটা কমে গিয়েছে বহু দোকানের। ফলে অনেক দোকানই বন্ধ হওয়ার জোগাড়। পঞ্চায়েত থেকে প্রশাসনের সর্বত্র রাস্তা সংস্কারের জন্য আবেদন নিবেদন করেও সমস্যার সমাধান হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় ব্যবসায়ীমহলের। যদিও ডায়মন্ড হারবারের মহকুমাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, “ওই রাস্তাটি সংস্কারের ব্যবস্থা হয়েছে। শীঘ্রই কাজও শুরু হবে।” |
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতা ব্লকের সহরাহাট মোড় থেকে বাজারে ঢোকারা প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। রাস্তার দুধারে প্রায় পাঁচশ দোকান ছাড়াও প্রতি বৃহস্পতিবার ও রবিবার হাট বসে। আশপাশের এলাকা ছাড়াও অনেক দূর থেকেও ক্রেতা-বিক্রেতারা আসেন। হাটবার ছাড়াও প্রতিদিন বাজারে প্রচুর ক্রেতারা আসেন। বাজারের ওই রাস্তার বেহাল অবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ রয়েছে বাজারের দোকানদার এবং বাজারে আসা লোকজনের। কয়েক বছর আগে রাস্তার কিছু অংশ সংস্কার করা হলেও প্রায় এক কিলোমিটার অংশের অবস্থা খুবই খারাপ। ইট পাতা ওই রাস্তার অধিকাংশ জায়গাতেই ইট উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। বর্ষায় সেই সব গর্তে জল জমে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হয়ে উঠেছে। রাস্তার খারাপ অবস্থার কারণে বাজারে মালপত্র নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও চরম সমস্যায় পড়েছেন। মালবোঝাই লরি বাজারের ভিতরে না ঢুকতে চাওয়ায় বাজারের বাইরে মালপত্র নামিয়ে তা ভ্যানে করে দোকানে নিয়ে আসতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এর ফলে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে।
বাজারে বৃহস্পতি ও শনিবার যে হাট বসে তা নিয়ন্ত্রণ করে ফলতা পঞ্চায়েত সমিতি। হাটে বলার জন্য প্রতিবছর চালাঘর, ছোট দোকানিদের জন্য বসার জায়গা এক থেকে দেড় লক্ষ টাকায় লিজ দেয় পঞ্চায়েত সমিতি। হাটের দোকানদারদের অভিযোগ, প্রতিবছর তাঁরা এ জন্য চাঁদা দেন। অথচ শর্ত অনুযায়ী চালাঘর তৈরি করে দেওয়া বা অন্য কোনও সুযোগ-সুবিধা মেলে না। এমনকী হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য নেই কোনও শৌচালয়। প্রয়োজনীয় পানীয় জলেরও ভাল ব্যবস্থা নেই। তা হলে তাঁরা যে চাঁদা দেন সেই টাকা কোথায় যায়?”
বাজারের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, রাস্তা সারানোর জন্য তাঁরা প্রশাসনের সবর্ত্র দরবার করেছেন। কিন্তু রাস্তা সারানোর ব্যাপারে সকলেই উদাসীন। সম্প্রতি স্থানীয় বিধায়ক তমোনাশ ঘোষ রাস্তার অবস্থা দেখে যান। তিনি বলেছিলেন রাস্তা সংস্কারের জন্য টাকার অনুমোদন হয়ে গিয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। কিন্তু সেই কাজ এখনও শুরুই হল না।
স্থানীয় ব্যবসায়ী হিমাদ্রী সরকার, পুলক দে, কমল মণ্ডলেরা জানান, পঞ্চায়েত সমিতি কেবল মাপজোক করে গিয়েছে। কিন্তু কোনও কাজই হচ্ছে না। রাস্তার খারাপ অবস্থার কারণে দোকানে ক্রেতাদের আসা-যাওয়া অনেক কমে গিয়েছে। ফলে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। অনেকে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে, কেউ জমিজমা বিক্রি করে ব্যবসায় লগ্নি করেছেন। কিন্তু দিনর পর দিন এমন অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসাপত্র লাটে উঠবে। তখন সংসার চলবে কী করে?
রাস্তার বেহাল দশার কারণে ব্যবসার ক্ষতি নিয়ে ব্যবসায়ীদের অভিযোগের প্রসঙ্গে তমোনাশবাবু বলেন, “ওই রাস্তা তৈরির জন্য সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা সাংসদ তহবিল থেকে অনুমোদন হয়ে গিয়েছে। মাপজোকের কাজ চলছে।” কিন্তু এতদিনেও কাজ শুরু হল না কেন? এর উত্তরে বিধায়ক বলেন, “টাকা অনুমোদনের পরেই কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ঠিকাদার কাজ করতে চাইছিলেন না। তবে সেই সমস্যা মিটে গিয়েছে।” হাটে বিক্রেতাদের জায়গা দেওয়ার জন্য যে টাকা নেওয়া হয় তাতে কোনও উন্নয়ন না হওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে তমোনাশবাবুর বক্তব্য, “আমি ওই বিষয়ে কিছু জানি না। খোঁজ নেব।” |