তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলামকে ভাঙড়ে দাঁড়িয়েই প্রকাশ্যে ‘চ্যালেঞ্জ’ জানালেন প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রী তথা অধুনা সিপিএম বিধায়ক আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। দু’দিন আগে ভাঙড়ে সিপিএমের বিজয়গঞ্জ দলীয় কার্যালয়ে রেজ্জাক-সহ অন্য নেতাদের উপরে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনার জেরে ভাঙড়ের কাঠালিয়া বাসস্ট্যান্ডে বৃহস্পতিবার সিপিএমের প্রতিবাদ সভা থেকে রেজ্জাকের ‘হুঁশিয়ারি’, “আমি ভাঙড়ের ভূমিপুত্র। আরাবুল সাহেবও ভাঙড়ের ভূমিপুত্র। ওঁর যদি আমার ভাঙড়ে আসা নিয়ে কোনও আপত্তি থাকে, তা হলে উনি ওঁর এলাকা কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে রাখুন! তা হলে ওই এলাকায় যাব না। আর যদি কাঁটাতার না-দেন, তা হলে ভাঙড়ে যেখানে ইচ্ছে যাব! মিটিং করব! কী করতে পারে করুক, আমি দেখব! যতক্ষণ না আমার লাশ পড়বে, ততক্ষণ আমার লড়াই জারি থাকবে!”
ভাঙড়ে কাল, শনিবার পাল্টা সভা করার পরিকল্পনা আছে তৃণমূলের। রেজ্জাকের এই ‘হুঁশিয়ারি’র প্রেক্ষিতে তৃণমূল নেতৃত্ব সেখানে কী বলেন, তা নিয়ে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক শিবিরে। রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কেও এ দিন ‘চ্যালেঞ্জ’ করেছেন ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক রেজ্জাক। তাঁর বক্তব্য, “তৃণমূলের লোকেরা আমাদের পার্টি অফিসে হামলা চালাল, ভাঙচুর করল, বোমা মারল! আর ওই মন্ত্রী বলছেন, আমি নাকি মুখ্যমন্ত্রীকে গালিগালাজ করেছি বলে এলাকার ব্যবসায়ীরা আমার উপর হামলা চালিয়েছে! ওই দিনের কৃষক সভার বৈঠকে গালাগালি তো দূরের কথা, আমি বক্তৃতা দিয়েছি, এটা প্রমাণ করতে পারলে আমি বিধানসভা থেকে ইস্তফা দেব! তার পরে উনি কী করবেন, উনি ভাবুন!” সুব্রতবাবুকে ইঙ্গিত করে রেজ্জাকের আরও কটাক্ষ, “উনি কত বার দল পরিবর্তন করেছেন! ইতিহাসে এমন নজির নেই! পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমরা ভাঙড়ে লড়ছি, লড়ব। কেউ আটকাতে পারবে না!” |
রেজ্জাকের সঙ্গে এক মঞ্চ থেকে এ দিন বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র দলীয় কর্মীদের ‘পরামর্শ’ দিয়েছেন, তৃণমূলের কর্মী বা সমর্থক হয়েও যাঁদের ‘মোহভঙ্গ’ হচ্ছে, তাঁদের নিজেদের দিকে নিয়ে আসতে হবে। সূর্যবাবুর কথায়, “যারা তৃণমূলের ঝান্ডা নিয়ে মারামারি করছে, ওদেরকেও আমাদের দলে আনতে হবে। চাষি ফসলের দাম পাচ্ছে না, বেকাররা চাকরি পাচ্ছে না। ওদেরকেও বুঝিয়ে আমাদের দলে আনতে হবে আর আমাদের আন্দোলনকে জোরদার করতে হবে।”
উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, দুই পাশাপাশি জেলার বামফ্রন্টের নেতারাই প্রতিবাদ সমাবেশে সামিল হয়েছিলেন। সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক তথা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম দেবও এক হাত নিয়েছেন আরাবুলকে। তাঁর বক্তব্য, “রেজ্জাক মোল্লা ভাঙড়ের ভূমিপুত্র। বানতলার লেদার কমপ্লেক্স ওঁকে ছাড়া হত না। উনি এখানে কলেজ বানিয়েছেন, রাস্তা বানিয়েছেন, তাঁকে কি না মারছে আরাবুল। এটা ভাবা যায়!” গৌতমবাবুর আরও কটাক্ষ, “আমি যখন মন্ত্রী ছিলাম, তখন আমার কাছে ৫-৬ বার আরাবুল এসেছিলেন। তখন ওঁকে বলেছিলাম, অন্য বিধায়কেরা উন্নয়নের জন্য তদ্বির করে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। আপনি নিচ্ছেন না কেন? এলাকায় রাস্তাঘাট করুন, উন্নয়ন করুন। তাতে আরাবুল বলেছিলেন, ওখানে সিপিএমের সঙ্গে পাইপগান নিয়ে লড়াই করতেই সময় চলে যাচ্ছে! এখন আরাবুল সিপিএমকে পেটাচ্ছেন আর আরাবুলের ছেলে প্রফেসর পেটাচ্ছে! এটা লজ্জার ব্যাপার।” দক্ষিণ ২৪ পরগনারয় দলের প্রথম সারির নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘হুঁশিয়ারি’, “রেজ্জাক মোল্লার উপরে হামলার ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। প্রয়োজনে থানা ঘেরাও এবং বিক্ষোভ করব। পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি। পরিবর্তন হবেই। তখন সুদে আসলে বুঝে নেব!”
দলের নেতাদের উপরে আক্রমণের ঘটনার প্রতিবাদ সভায় প্রত্যাশিত ভাবেই নিশানায় এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সূর্যবাবু বলেছেন, “ভারতবর্ষে মহিলা নির্যাতনে উনি এক নম্বরে আছেন! দশ দিন আগে অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও গুড়াপের ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করেননি। কিন্তু পুরুলিয়ার পিঙ্কি প্রামাণিককে উনি ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করেছেন। সে পুরুষ না নারী, সেই প্রমাণ ছাড়াই গ্রেফতার করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক করে আনাজপাতির দাম কমাচ্ছেন, তাতে মরছে চাষি। মুখ্যমন্ত্রীর লোকজন চাষিকে বলছে কম দামে জিনিস দাও। নইলে পুলিশ পেটাচ্ছে!” গৌতমবাবুর কটাক্ষ, দিল্লি, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, সিপিএম, কংগ্রেস সকলের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ঝগড়াই করছেন রাজ্য পরিচলনার বদলে! আর নিজের দলের ঝগড়া ‘সেলোটেপ’ দিয়ে আটকে রাখছেন! |